মাথা নাড়ল লিও। আমি ইতিমধ্যে চেয়ে দেখেছি। কিন্তু নিজেদের জিনিসের ব্যাপারে এরা সাংঘাতিক রকমের কিপটে। শহরে গেলে আমরা কিছু গিয়ার নিয়ে আসতে পারব।’ এখন আইল্যাণ্ডে পুরো মৌসুম চলছে, তাই প্রয়োজনীয় গিয়ারের বেশ সংকট। যা স্টকে ছিল তার বেশিরভাগই স্থানীয় টুর কোম্পানীরা বুক করে রেখেছে।
‘ঠিক আছে।
‘আমি যাই, গিয়ে দেখি ডাইভাররা এবার কী পেল,’ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের ভ্রুতে জমা ঘাম মুছতে মুছতে বলল লিও।
ওরা দেখল লিও বিচ ধরে চলে যাচ্ছে। খাকি প্যান্ট আর ট্রপিক্যাল লম্বা হাতার শার্ট পরনে থাকা সারসের মতো ঠ্যাঙা দেখাচ্ছে ওকে। স্যামের দিকে ঝুঁকল রেমি। বিষয়টা নিয়ে কী ভাবছ?’ | স্যাম মাথা নাড়ল। আমার কাছে কোনো সূত্র নেই। আরও কিছু না জানা পর্যন্ত কিছু বলব না। তবে বিষয়টা ইন্টারেস্টিং।
‘আমার কাছে একটা বিষয় অদ্ভুত লাগছে। বিচের এত কাছে থাকা সত্ত্বেও এই জিনিসটা আরও আগে আবিষ্কৃত হলো না কেন।
বিচে এখন লোকজন কম। স্যাম বিচের উপর চোখ বুলিয়ে বলল, “এখানে কি খুব বেশি মানুষ আসা-যাওয়া করে?’
রেমি মাথা নাড়ল। একটু আগে বিষয়টা নিয়ে আমরা একমত হয়েছিলাম কিন্তু।’ মাথার লালচে চুল ঝাঁকি দিল রেমি। স্যাম খেয়াল করল রেমির ত্বক ইতিমধ্যে রোদের কারণে তামাটে বর্ণ ধারণ করেছে। স্ত্রীর শুয়ে থাকা শরীরে আরেকবার চোখ বুলিয়ে কাছাকাছি হলো ও।
ওরা দেখল লিও দ্বীপবাসীদেরকে হাঁক ছেড়ে বলছে ওকে যেন একটা ছোট নৌকো দেয়া হয়। তাহলে ও সেটাতে চড়ে ডাইভারদের কাছে যেতে পারবে। গাঢ় রঙের টি-শার্ট পরা একজন ছোটখাটো লোক এসে স্টিমারের মোটর চালু করার জন্য স্টার্টার কর্ড ধরে বেশ জোরেশোরে দু’বার টান মারল। তিনবারের বার জ্যান্ত হয়ে উঠল পুরোনো মোটর। লিও ওটাতে চড়ে ডুবুরিদের নৌকোর দিকে রওনা হলো।
বিচের অন্যদিকে তাকাল রেমি। ওখানে কয়েকজন দ্বীপবাসী অলসভাবে ঝিমোচ্ছে।
‘তবে যা-ই বলো, জায়গাটা বেশ নিরিবিলি, সুন্দর, এটা মানতেই হবে। নীল আকাশ, উষ্ণ পানি, মিষ্টি বাতাস… আর কী চাই বলো?
আবার সেঁতো হাসি দিল স্যাম। ঠাণ্ডা বিয়ার চাই।
তোমার মন তো ওটাই চাইবে।
‘শুধু এটাই নয়, আরও আছে।
রেমি হেসে উঠল। ঠিক আছে আজ রাতে ওরকম দু’একটা জিনিস চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।’
কয়েক মিনিট পর লিও’র স্টিমার ফিরে এলো। বেচারার মুখ একেবারে বাংলার পাঁচ হয়ে আছে। খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে ওকে। ডাইভাররা বলছে জলজ জিনিসের স্তূপ দিয়ে অনেকাংশ ঢাকা পড়লেও জিনিসটাকে কোনো স্ট্রাকচার (অবকাঠামো, ইমারত) বলে মনে হচ্ছে।
চোখ সরু করল রেমি। স্ট্রাকচার? কীরকম স্ট্রাকচার?
‘ওরা ঠিক নিশ্চিত নয়। তবে দেখে নাকি মনে হয়েছে কোনো ভবনের ধ্বংসাবশেষ।
‘ইন্টারেস্টিং। ভেরি ইন্টারেস্টিং। দিগন্তে জমা ঝড়ো মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল স্যাম।
‘ওগুলো অনেক প্রাচীন কিছু হবে,’ লিও নৌকোর দিকে তাকাল। এখানকার লোকজন প্রচণ্ডরকমের কুসংস্কারে বিশ্বাসী, যত্তসব!
রেমি ভ্রূ কুঁচকে জানতে চাইল, ‘হঠাৎ এ-কথা?
স্থানীয় টিমের প্রধান খুব জালাচ্ছে। সে ওখানে আর ডাইভ করতে চায় না। তার প্রপিতামহ নাকি এই বিচকে নিয়ে একটা গল্প শুনিয়ে গেছে। এখানে জুজুর ভয়সহ হাবিজাবি কী যেন আছে বলল। আসল কথা হলো, শয়তানটা আমার কাছ থেকে আরও পয়সা খসাতে চাচ্ছে। বাটপারি আরকী।
‘তুমি তাকে কী বলেছ?
‘যদি টাকা চায় তাহলে আজকের ডাইভিং তাকে শেষ করতে হবে। সে নিচ থেকে কী দেখে আসছে সেটার উপর আমার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে তাকে আবার ভাড়া করব কি করব না। আমি তাকে কোনো ভয়-ভীতি দেখাতে যাব না। কাজের জন্য পারিশ্রমিক দিচ্ছি। ওতেই চুপ হয়ে গেছে।
রাশিয়ান বন্ধুকে পর্যবেক্ষণ করল স্যাম! ‘লিও, আমাদের বাজেটের অর্থ খরচের ক্ষেত্রে তোমার মিতব্যয়ীতা দেখে ভাল লাগল। কিন্তু এখানে তো এই লোকগুলোই শেষ ভরসা, তাই না? যদি তুমি তাদেরকে দিয়ে কাজ না করাও তাহলে বিকল্প কোনো রাস্তা খোলা আছে?’
‘আমার নিজস্ব লোকজন আনতে হবে এখানে।
‘তাদের সবার নিজস্ব গিয়ার আছে?’
‘অবশ্যই,’ মুখে জোর দিয়ে বললেও লিওনিডের চেহারার অভিব্যক্তিতে অতটা আত্মবিশ্বাস দেখা গেল না।
‘নিচে যদি ধ্বংসস্তূপ থেকে থাকে তাহলে আমাদের কোনো এক্সপিডিশন শিপ (অভিযান পরিচালনার জন্য বিশেষ জাহাজ) যোগাড় করার চেষ্টা করা উচিত, ঠিক? জাহাজ পেলে আমরা লম্বা সময় ধরে ওটার সুবিধে পাব। প্রস্তাব রাখল রেমি। এই ক্ষেত্রে তোমার পরিচিত কেউ আছে?’
স্যাম একটু ভাবল। কারও কথা মনে পড়ছে না… লিও?’
মাথা নাড়ল রাশিয়ান। জিজ্ঞাস করে দেখতে হবে।’
‘সেলমাকে ফোন করি। ও খুঁজে দেবে।’
মাথা নাড়ল রেমি। কপাল খারাপ। এখানে ধারে কাছে তো কোনো সেলফোন নেটওয়ার্কের টাওয়ার নেই।’
স্যাম হাসল। কোনো সমস্যা নেই। স্যাট (স্যাটেলাইট) ফোন নিয়ে এসেছি। বলতে বলতে ব্যাকপ্যাকে হাত দিয়ে একটা পুরোনো কিন্তু নির্ভরযোগ্য স্যাটেলাইট ফোন বের করল। ফোনটা চালু করে সময় দেখল স্যাম। আশা করা যায় সেলমা এখন ফোন ধরবে।’
শরীরের ভার এক পা থেকে আরেক পায়ে চাপাল লিও। ফোনের মিষ্টি রিং শুনতে শুনতে স্যাম ওয়াটার লাইন নিয়ে ভাবল! এদিকে লিও দ্বীপবাসীদের এক দলের দিকে পা বাড়িয়েছে। কয়েক সেকেণ্ড পর সেলমার সজীব কণ্ঠ ভেসে এলো ফোনে।