‘কিন্তু যদি এখানে আরেকটু উন্নত ব্যবস্থা…’।
‘কিংবা একটা ভাল ডাইভ শপ থাকত।
হুম, ভাল হতো তাহলে। পায়ের গোড়ালি থেকে রেমি হিল খুলে ফেলল।
এই গোয়াডালক্যানেলে আসার ব্যাপারে রাজি হওয়ার আগে ওদের ধারণা ছিল না এখানে এসে এরকম উষ্ণ পানি আর নীল আকাশের দেখা পাবে।
প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়স্ক এক লম্বা ব্যক্তি বালুময় বিচ থেকে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। রোদে পুড়ে তার চেহারা লাল হয়ে গেছে। বাজপাখির ঠোঁটের মতো চোখা নাকে স্টিলের রিমঅলা চশমা পরা। প্রতি পদক্ষেপে তার হাইকিং বুটের পেছন থেকে বালুর মেঘ তৈরি হচ্ছে। কয়েকজন দ্বীপবাসী রয়েছে ওখানে, ভাইভারদের কাণ্ডকীর্তি দেখছে আর নিজেদের ব্যক্তিগত কৌতুকে হাসাহাসি করছে। দ্বীপবাসীদের পাশ দিয়ে আসার সময় বিচের উপর তার লম্বা। ছায়া পড়ল। আগন্তুকের দিকে তাকাল স্যাম। নিজের বলিযুক্ত হ্যাণ্ডসাম চেহারায় সেঁতে হাসি দিল।
‘এবার বলো লিওনিড়, কাহিনি কী? জানতে চাইল স্যাম।
‘এটা দ্বীপের অন্যান্য জিনিসের মতো নয়, লিওনিডের উচ্চারণে হালকা রাশিয়ান টান আছে। দেখলে মনে হয় মানুষের বানানো। কিন্তু ফোনে আমি যেমনটা বলেছিলাম, মানুষের বানানো হওয়া অসম্ভব। পানির ৮০ ফুট নিচে রয়েছে ওটা।
‘তাহলে তুমি বোধহয় আটলান্টিস খুঁজে পেয়েছ!’ স্যামের দীর্ঘদিনের বন্ধুর সাথে মশকরা করল রেমি। যদিও মিথ অনুযায়ী আটলান্টিস যেখানে থাকার কথা সেখান থেকে এই জায়গা প্রায় ৫ হাজার মাইল দূরে।
লিওনিড ভ্রু কুঁচকাল। কোনো বিষয়ে একমত হতে না পারলে লিওনিড় এভাবে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে থাকে। মস্কো থেকে তিন বছরের ছুটি নিয়েছে লিও। পুরো নাম: লিওনিড় ভাইয়েভ। হারানো সভ্যতা খোঁজার জন্য ছুটি পেয়ে পুরো পৃথিবী চষে বেড়াতে নেমেও বেচারা খুশি ছিল না। তবে ফারগো ফাউণ্ডেশন থেকে অনুদান পাওয়ার পর অবস্থা বদলেছে।
লিও যখন স্যাম আর রেমিকে ফোন করে জানায় এই দ্বীপে ডুবে যাওয়া কিছু একটা পাওয়া গেছে তখন ওরা লিও’র এই অনুসন্ধানে যোগ দিতে একটুও দ্বিধা করেনি। প্রায় অর্ধেক পৃথিবী পাড়ি দিয়ে সলোমন আইল্যাণ্ডে হাজির হয়ে গেছে। আজ সকালে পৌঁছেছে ওরা। ডাইভিং গিয়ারগুলো আসতে দেরি হবে, হয়তো আগামীকাল পাওয়া যাবে ওগুলো। এই ফাঁকে লিও’র দেয়া বিভিন্ন তথ্য পড়ে আর বিচের সৌন্দর্য দেখে সময় কাটাচ্ছে ফারগো দম্পতি।
দু সপ্তাহ আগে গোয়াডালক্যানেলে আসা এক হতবুদ্ধ শিক্ষিকা তাঁর অস্ট্রেলিয়াবাসী সাবেক মহিলা প্রফেসরকে ফোন করে একটা অদ্ভুত গল্প শোনান। শিক্ষিকার স্বামী ও ছেলে তাদের নতুন ফিস ফাইণ্ডারে (যে যন্ত্র দিয়ে মাছের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়) অস্বাভাবিক রিডিং পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান প্রফেসর নিজের ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত থাকা শিক্ষিকাকে লিওনিডের কাছে পাঠিয়ে দেন। লিওনিড আর সেই অস্ট্রেলিয়ান প্রফেসর একই ভার্সিটিতে কাজ করেন।
ফোনে ফোনে অনেক আলাপ-আলোচনার পর অনিচ্ছুক লিওনিড অবশেষে এখানে এসে বিষয়টা সরজমিনে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। গত কয়েকদিনে ডাইভাররা তাকে যে তথ্যগুলো দিয়েছে সেগুলো শুনে লিওনিড নিজেই হতভম্ব হয়ে গেছে। জেলেরা ভেবেছিল ওটা হয়তো যুদ্ধের সময়কার কোনো ধ্বংসস্তূপ, কিন্তু তাদের ধারণা ভুল। ফিস ফাইণ্ডারে সর্বপ্রথম এমন কিছু ধরা পড়ে যেটাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়নি… দেখে মনে হয়েছে ওটা সাগরের তলায় মানুষ নির্মিত কোনো অবকাঠামো।
সুবিধে করতে না পেরে সাহায্য চেয়ে হাত বাড়ায় লিওনিড। লিওনিড একজন একাডেমিক, কিন্তু ডাইভার নয়। সে বুঝতে পেরেছিল এই বিষয়ের সুরাহা করার জন্য বাড়তি সাহায্য লাগবে। যেহেতু ফারগোরা ওকে অনুদান দিয়েছে তার উপর অনেকদিনের বন্ধুত্বও আছে তাই সরাসরি ফারগো দম্পতিকেই প্রস্তাব দিয়েছিল লিও। ফোনে কথাবার্তা পাকা করে স্যাম ও রেমি গোয়াডালক্যানেলে চলে এসেছে।
‘পানির নিচে যে ক্যামেরা ব্যবহার করেছ ওটাকে একটু ঘষে মেজে নিলেও পারতে, গত দিনে তোলা একটা ঘোলা ছবি দেখতে দেখতে বলল স্যাম। আর এই কাগজে প্রিন্ট করেছ কেন? ফটো পেপার নেই? কাগজ দেখে মনে হচ্ছে পত্রিকার কাগজের উপর ওয়াইন ফেলে ভিজিয়েছে কেউ।
‘শুকরিয়া করো এখানে রঙ্গীন প্রিন্টার পাওয়া গেছে। তোমরা হয়তো ভুলে গেছ এটা গোয়াডালক্যানেল। কোনো বিলাসী রিসোর্ট নয়।’ বলল লিও। ‘এবার বলো ছবি দেখে কী মনে হচ্ছে?
‘কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এটা যেকোন কিছুই হতে পারে। পানির নিচে ডাইভ না দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। রিপোর্টের হাল দেখে কেউ যদি বলে এটা ডায়েবেটিস রোগীর রিপোর্ট তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
মায়ের রাগী মুখ দেখা যাচ্ছে নাকি? সাবলীলভাবে জানতে চাইল রেমি।
লিওনিড ফারগো দম্পতিদের দিকে এমনভাবে তাকাল যেন ওরা দুজন কোনো জারে ভরা কীট! এই গরমেও তোমাদের রসবোধ কমেনি দেখে বেজায় আনন্দিত হলাম!’
মজা নাও, লিওনিড়। আমরা যেখানে আছি এটাকে তো স্বর্গ বলা চলে। আর হ্যাঁ, তুমি যে কেসটা দিয়েছ এরকম রহস্যই আমরা পছন্দ করি। আমরা এর শেষ দেখব, সমস্যা নেই।’ বলল স্যাম। তুমি একটু আগে চেহারায় যে ভাব ফুটিয়ে তুলেছিলে আমার মা রেগে গেলেও এতটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন না। ডাইভারদের দিকে তাকাল ও। তুমি শিওর, ওদের কারও কাছ থেকে আমি একটা গিয়ার ধার নিতে পারব না?