পোর্টে পৌঁছুনোর পরও ডারউইনের দিকে তাকিয়ে আছে স্যাম।
কী ভাবছ?’ রেমি জানতে চাইল।
‘চোখের সামনে থেকে পুরো সভ্যতা যদি কোনো চিহ্ন না রেখেই বিলীন। হয়ে যায় তাহলে কেমন লাগবে বলো তো?”
‘আমি নিশ্চিত। বড় কোনো ভূমিকম্পের ফলেই এই হাল হয়েছে। কেউ তখন খুব বেশি কিছু অনুভব করার কিংবা ভাবার সময় পায়নি।
হয়তো তোমার কথাই ঠিক। কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি কেন বেঁচে যাওয়া লোকজন এই জায়গাটাকে অভিশপ্ত বলে ঘোষণা করেছে। অভিশাপ ছাড়া আর কী বলে তুমি এত বড় দুর্যোগের ব্যাখ্যা দেবে বলো?
হুম, তা ঠিক। আচ্ছা, ওখানকার চিহ্নগুলো দেখে কী বুঝলে?
সবমিলিয়ে গুপ্তধনের ব্যাপারে নির্দেশ করছে চিহ্নগুলো। আসল বিষয়টা আমরা খুব শীঘ্রি জানতে পারব।’
দ্বিধাগ্রস্ত দৃষ্টিতে স্যামের দিকে তাকাল রেমি। অনেক বড় এরিয়া পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কয়েক বছর লেগে যাবে পুরোটা পরিষ্কার করে বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে। কোনো গুপ্তধন উদ্ধার করা হয়তো এখন আর সম্ভব নয়।
‘মিসেস ফারগো, সলোমন উপভোগ করছি ঠিকই কিন্তু এখানে কয়েক বছর থাকার কোনো খায়েশ নেই আমার। এমনকী আপনার তো সুন্দরী সাথে থাকলেও নয়, বুঝেছেন?
হুম। সবকিছু তো লিও মোটামুটি বুঝে নিয়েছে। আমরা তাহলে পুরো বিষয়টাকে এখন ওর হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে পারি?
পোর্ট থেকে রওনা হয়েছে ১০ মিনিটও হয়নি পুলিশের রোডব্লক উদয় হলো। গাড়ি থামাল স্যাম। ৬ জন পুলিশ অফিস দাঁড়িয়ে রয়েছে। ৪ জন ওদের দুজনের কাছে এসে পাসপোর্ট দেখতে চাইল। বাকি দুজন তল্লাশি করতে শুরু করল গাড়ির ভেতরে।
‘ব্যাকপ্যাকে কী আছে? স্যামের ব্যাগ দেখিয়ে প্রশ্ন করল সিনিয়র অফিসার।
‘তেমন কিছু না। একটা ফোন, ক্যান্টিন, বাড়তি শার্ট… এইতো।
‘দেখি।’
‘বাইরে ড্রাইভে বেরোনো ঠিক হয়নি আপনাদের। সার্চ শেষ করে বলল অফিসার। সাবধানে থাকবেন। এমনকী হনিয়ারাও নিরাপদ নয়। যেখানে সেখানে যা খুশি ঘটে যেতে পারে।
‘সকালে তো সবকিছু বেশ ছিল।
অফিসার চোখ সরু করল। হুম, কিন্তু এইড কর্মীদের খুনিদেরকে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। জনগণ অস্বস্তিতে রয়েছে। আপনাদের জায়গায় আমি হলে সোজা হোটেলে চলে যেতাম। আর বেরোতাম না।’
‘তাহলে কর্মীরা মারা গেছে? বিস্মিত হয়ে রেমি জানতে চাইল।
সায় দিয়ে মাথা নাড়ল অফিসার। সন্ধ্যায় প্রচারিত হয়েছে খবরটা। কর্মীরা সবাই নিরস্ত্র ছিল। এখানকার দুস্থ লোকজনদের সেবা করত।’
‘এখন দুস্থ পরিবারগুলোর কী হবে?
অফিসার ত্যাগ করে ভ্রু কুঁচকাল! এইড কর্মীদের মধ্যে কেউ যদি এখনও এখানে থেকে সেবা করতে চায় সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করব। তবে মনে হয় না, কেউ এখানে এরপরও থাকতে চাইবে। দুস্থদের কী হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। যা-ই হোক, আপনারা দেখে-শুনে গাড়ি চালাবেন। আমাদের মতো এরকম অফিসিয়াল গাড়ি না দেখলে সেই রোডব্লকে থামবেন না। কোথাও থামার আগে নিশ্চিত হয়ে নেবেন।
রাস্তায় আরেকটা রোডব্লক পেরিয়ে হোটেলে এসে পৌঁছুল ফারগো দম্পতি। তবে পথে খেয়াল করে দেখেছে দ্বীপের বাসিন্দারা ওদের গাড়ির দিকে অসন্তুষ্ট হয়ে তাকিয়ে ছিল। যদিও কেউ কিছু বলেনি তারপরও বোঝা যাচ্ছে বিদেশিদেরকে এখানকার লোকজন আর পছন্দ করছে না। পার্কিং লটে থাকা সিকিউরিটি গার্ডের মুখ পেঁচার মতো দেখাচ্ছে। ওরা দু’জন আশংকা করছিল হোটেলের সামনে হয়তো দ্বীপবাসীদের জটলা দেখতে পাবে। কিন্তু না, নেই। হয়তো হোটেলটা থানার একদম কাছে, তাই কেউ জটলা করার সাহস করেনি।
লবিতে ঢুকতেই ফ্রন্ট ডেস্ক ক্লার্ক ওদেরকে ইশারা করল। ওরা এগিয়ে গেলে মাপা হাসি দিল মেয়েটা। জানাল, ওদের বস দেখা করতে চেয়েছে। অপেক্ষা করতে হবে।
একটু পর বস হাজির হলো। তার পরনে পরিপাটি সুট।
‘শুভ সন্ধ্যা, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফারগো। আমি জ্যাকব ট্রেঞ্চ। এখানকার ম্যানেজার। আশা করি, আপনারা আমাদের হোটেলটা উপভোগ করছেন।
রেমি মাথা নাড়ল। হ্যাঁ, সবকিছু সন্তোষজনক।’
‘ভাল, ভাল। নার্ভাসভঙ্গিতে নিজের জুতোর দিকে তাকাল জ্যাকব। ‘আপনাদের সাথে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছা ছিল। তাই দেখা করলাম। সেইসাথে এখন যেটা বলব তার জন্য অগ্রীম ক্ষমা চাইছি। আমরা আমাদের অতিথিদের পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন হোটেলের বাইরে না যায়। শহরের অবস্থা খুব একটা ভাল না… তাই বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়।
তাই নাকি? বলল স্যাম। তা এখানে কী কোনো বাড়তি নিরাপত্তা আছে?
‘এক্সট্রা সিকিউরিটি আসছে। আমাকে ভুল বুঝবেন না। বিপদের আশা করছি না আমরা। জাস্ট সতর্কতা অবলম্বন করছি। বর্তমান অস্থিতিশীল পরিবেশে সুযোগ নিয়ে যে-কেউ অনেক কিছু করে ফেলতে পারে…’ জ্যাকবের ইংরেজিতে অস্ট্রেলিয়ান টান স্পষ্ট বুঝতে কষ্ট হলেও তার দুশ্চিন্তাটা ঠিকই বোধগম্য হলো।
‘আপনি কি ভাবেন, সত্যি বিপদ হতে পারে? জানতে চাইল রেমি।
‘ভাগ্য পরীক্ষা না করতে যাওয়াটাই ভাল। আমার রেস্টুরেন্টে আসুন। এক বোতল শ্যাম্পেন খাওয়া আপনাদেরকে।
স্যামের দিকে তাকাল রেমি। উনি তো আমাকে ফ্রি শ্যাম্পেনের লোভ দেখাচ্ছেন, স্যাম।
স্যাম হাসল। মন্দ কী। এখন বলো, শ্যাম্পেনে দাওয়াতে যাবে কিনা?”
মাথা নাড়ল ট্রেঞ্চ। কয়টায় ডিনার খেতে আসছেন আমাকে বলুন। আমি সবকিছু রেডি করে রাখব।’