পোর্টে পৌঁছে স্কিফের জন্য অপেক্ষা করল ওরা। ব্যাগ থেকে রেমি একটা রেডিও বের করে শিপের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করল।
‘শুভ সকাল, আপনাদের দু’জনকে’ বলল ক্যাপ্টেন ডেস। স্কিফে চড়ার জন্য তৈরি?
তৈরি। তবে আমরা এখানে ৬ জন আছি। আর আমাদের সাথে যে পরিমাণ গিয়ার আছে সেটা আপনার স্কিফকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
‘জায়গা হয়ে যাবে।’
মূল রিসার্চ শিপে ওঠার পর নতুন অতিথিদেরকে গেস্ট রুম দেখাল সিমস। স্যাম ও রেমি যোগ দিল ক্যাপ্টেন ডেস ও লিও’র সাথে! ব্রিজে রয়েছে ওরা।
একটা ছবি পর্যবেক্ষণ করছে লিও।
‘আমাদের অনুপস্থিতিতে কিছু কাজ করেছ বলে আশা করছি।’ স্যাম বলল।
মাথা নাড়ল ডেস। দু’বার ডাইভ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা একটা সুন্দর ম্যাপ বানিয়ে ফেলেছি। লিও ছবিগুলো দেখছেন। যাতে আমরা গোছানোভাবে প্রত্যেকটা বিল্ডিঙে কাজ করতে পারি।’
ছবিতে লিও টোকা দিল। যতটুকু দেখলাম, তাতে বুঝেছি, এটাই সবচেয়ে বড় ধ্বংসাবশেষ। এখান থেকেই আমরা শুরু করব। এর আকার অনায়াসে অন্যগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ। বিষয়টা গুরুত্বর বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করছে।’
একটু কাছে এলো রেমি। ঠিক।’
স্যাম মাথা নাড়ল। আমরা এখন যেটার ছবি দেখছি, এর অবস্থান একদম পূর্ব অংশে।
‘এটার আকৃতি অন্যগুলোর তুলনায় ভাল। পরেরবার ডাইভ দিয়ে আমরা খুব ভাল করে পর্যবেক্ষণ করব।’ বলল লিও।
ডাইভ মাস্টার কেন্ট ঢুকল ভেতরে। শুভ সকাল, সবাইকে। এইমাত্র নতুন অতিথিদের সাথে দেখা করলাম। খুব সিরিয়াস নোক ওনারা।’
পানির নিচ থেকে তোলা ছবিগুলোকে একটু দূরে ঠেলে দিয়ে লিও উঠে দাঁড়াল। আমি আজ রাতের ভেতরে এই বড় ইমারতের উপরের দিকটা যতদূর সম্ভব পরিষ্কার করে নিতে চাই। পানিতে বেশি লোক নামলে কাজটা দ্রুত করা যাবে।’
‘একদম ঠিক বলেছেন। আমি পানির নিচে কতক্ষণ থাকতে হবে সেটার একটা হিসেব করে দেখছি। তারপর একটা রুটিন বানানো যাবে।’ বলল কেন্ট ওয়ারেন।
‘সারফেস থেকে সাপ্লাই দেয়ার মতো কয়টা এয়ার রিগ আছে আমাদের?
মাত্র দুটো। আমরা সাধারণত গভীর পানিতে থাকি তাই ওগুলো খুব একটা ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু এবার দরকার পড়বে।
‘আচ্ছা। তবে আমরা কিন্তু ইমারতগুলোর কোনো ক্ষতি করতে চাই না। পরিষ্কারের কাজটা খুব সাবধানে করতে হবে। আর সবকিছু রেকর্ড করতে হবে। যাতে পরে দেখা যায়। লিও মনে করিয়ে দিল।
অবশ্যই করা হবে।
আধাঘণ্টা পর, ডেকের কম্প্রেশর আওয়াজ করছে। ওয়ারেনের ক্রুরা নেমেছে পানিতে। কম্প্রেশরের সাহায্যে তাদেরকে বাতাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আমেরিকা থেকে দু’জন ডাইভারও যোগ দিয়েছে তাদের সাথে। অবশ্য স্কুবা গিয়ার নিয়ে নেমেছে তারা। ধীরে ধীরে ধ্বংবাশেষের দিকে এগোচ্ছে সবাই। লিও, স্যাম, রেমি ও ক্যাপ্টেন ডেস মনিটরে ওদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।
সব ডাইভারদের সাথে লাইট সংযুক্ত করা থাকায় ধ্বংসাবশেষ দেখতে তেমন কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। তার উপর হাই রেজুলেশন ক্যামেরায় ধারণ করা হচ্ছে সব। দৃশ্যগুলো একদম ঝকঝকে।
সামনে এগিয়ে থাকা এক ডাইভার ভাল্ব ঘুরিয়ে হাই প্রেশার বাতাস প্রয়োগ করতে শুরু করল ইমারতের গায়ে। বিভিন্ন সামুদ্রিক জঞ্জাল পরিষ্কার হতে শুরু করল।
লিও অনেক গবেষণা করে ইমারত পরিষ্কার করার এই বুদ্ধি বের করেছে। এতে ভবনগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না আমার কাজের কাজও হবে। ওর সাথে ক্যাপ্টেন ডেস আরও একটু বুদ্ধি যোগ করে কম্প্রেশর জুড়ে দিয়েছে। কম্প্রেশরের সাহায্যে হাই প্রেশারের বাতাস সরবরাহ করা হচ্ছে শিপ থেকে।
পানির নিচে বর্তমান দৃষ্টিসীমা মাত্র ১ ফুট। ইমারতের গা থেকে জঞ্জাল পানিতে মিশে দৃষ্টিসীমা কমিয়ে দিয়েছে। সব ডাইভার একত্রে কাজ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশাল লাইমস্টোন ব্লক পরিষ্কার করল।
আরও দু’ঘণ্টা পর যথেষ্ট পরিমাণ দেয়াল পরিষ্কার করার পর যেটা বের হলো সেটা কম করে হলেও ১০০ ফুট দীর্ঘ।
‘এ তো বিশাল। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, এরকম ভবন এই দ্বীপের বাসিন্দারা বানিয়েছিল। ফিসফিস করে বলল লিও। দ্বীপের বর্তমান অবস্থা দেখে মনেই হয় না এরকম কিছু বানানোর সামর্থ্য ছিল এদের।
মনিটর থেকে চোখ সরিয়ে রেমি ডেসের দিকে তাকাল। আপনি কি ডাইভারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন?
‘হ্যাঁ, পারব।’
‘তাহলে তাদেরকে বলুন, তারা যতটুকু পরিষ্কার করেছে সেটার সবচেয়ে দূরবর্তী ডান অংশে যেন ক্যামেরা জুম করে।
মাইক্রোফোনে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিল ডেস। ক্যামেরা ডান দিকের ব্লকে জুম করার পর হাসল স্যাম ও রেমি। লিও মাথা নাড়ল। “চিহ্ন আঁকা মনে হচ্ছে। আর আমি যদি ভুল না করি তাহলে ওটা সমুদ্র দেবতার খুঁটি। রেমি বলল। আর ওদিকে দেখুন। একসারি লোকের ছবি আঁকা। বিভিন্ন বাক্স নিয়ে এগোচ্ছে তারা।
রেমির দিকে লিও বাঁকা চোখে তাকাল। ডেস তার কণ্ঠ পরিষ্কার করে বলল, ‘তাতে কী বুঝায়?
হাসল রেমি।
যদিও আমি চিহ্নগুলো পড়তে জানি না। তবে মনে হচ্ছে, এখানে একদল যোদ্ধা মন্দিরে কিছু একটা নিয়ে যাচ্ছে।
‘কিছু একটা?’ লিও বলল।
রেমি ফিসফিস করে বলল, ‘গুপ্তধন। দেবতাদের জন্য।
.
১৯.
সন্ধ্যার শেষ নাগাদ সবচেয়ে বড় ইমারতের উপরের দিকের বেশিরভাগ অংশ পরিষ্কার করা হয়ে গেল। প্ল্যান হয়েছে, রাত দশটা পর্যন্ত পানির নিচে ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে কাজ করা হবে। ক্লান্তি এড়াতে বদলি ডাইভার পাঠানো হবে শিপ থেকে। স্কিফে চড়ে পোর্টের দিকে রওনা হলো স্যাম ও রেমি। ওদের এখানে কোনো কাজ নেই, তাই চলে যাচ্ছে।