‘জেনে খুশি হলাম। বলল লিও।
‘কিন্তু ওগুলো ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না বললেই চলে।
কুমীরের ক্ষেত্রে কীরকম কাজ করবে?’ রেমি জানতে চাইল।
হাঙরের মতোই। পাওয়ারহেড কিন্তু গুলি করে না। ওটা টার্গেটকে দাহ্য গ্যাস দিয়ে বিস্ফোরিত করে। তাই ছোট্ট একটা রাউন্ড দিয়েও বিরাট প্রাণীকে কাবু করা যায়। বিষয়টা খুলে বলল ক্যাপ্টেন ডেস।
‘জিনিসটা সেদিন ব্যবহার করতে পারলে ভাল হতো।’ স্যাম আফসোস করল। ক্যাপ্টেনকে জানাল সেই ২০ ফুটি কুমীরের হামলার কথা।
তাই নাকি? ২০ ফুট? উত্তরে ওরকম পাওয়া যায় শুনেছি। কিন্তু এখানে? তো ভিকটিমের কী অবস্থা হয়েছিল?
‘এক পা হারিয়েছে।
‘আহা রে। ঠিক আছে, ডাইভারদেরকে এ-ব্যাপারে সর্তক করে দিচ্ছি। তবে অস্ট্রেলিয়ান পানিতে কাজ করার সুবাদে আমরা প্রায় সবকিছু দেখে ফেলেছি। দুনিয়ার অন্য যেকোন দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার পানিতে মারাত্মক প্রাণী বেশি বাস করে। প্রাণীর কথা বাদ দিলাম। পাইন গাছের ফলও আপনার জীবন নিয়ে নিতে পারে। একেকটা পাইনের ওজন ১০ কেজি! ৩০ মিটার উঁচু থেকে যদি আপনার মাথায় এসে সেটা পড়ে তাহলে কী হতে পারে ভাবুন! হাসল ডেস। সামান্য গাছেই এই অবস্থা। তাহলে কী অবস্থা পানিতে?’
মাথা নাড়ল স্যাম। আমরা অস্ট্রেলিয়ায় কয়েকবার গিয়েছিলাম। দেশটা দারুণ। আমাদের ভাল লেগেছে। ঘড়ি দেখল ও। আচ্ছা, আমরা শহরে ফিরব কীভাবে?
‘আমাদের এখানে একটা হালকা নৌকা আছে। স্কিফ বলা হয় ওটাকে। সিমস আপনাদেরকে ওতে করে নামিয়ে দিয়ে আসবে।
লিও’র দিকে তাকাল স্যাম। তুমি এখানেই থাকবে?
‘থাকি, সেটাই ভাল। এখনই তো থাকার সময়।
শেষবারের মতো মনিটরের দিকে তাকাল স্যাম। ডুবে যাওয়া ভূতুড়ে শহরের অবয়ব দেখা যাচ্ছে ওতে।
তা তো অবশ্যই। ঠিক জায়গামতো রয়েছ তুমি। একদম স্পটলাইটে।
.
১৮.
পরদিন সকালে আমেরিকান ডাইভারদেরকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে গেল স্যাম ও রেমি। ব্রিসবেন থেকে হনিয়ারা পর্যন্ত চার্টারড প্লেনের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ৩০ ঘণ্টা সময় লেগেছে ডাইভারদের। ফারগো দম্পতি ভাবল ডাইভাররা অনেক ক্লান্ত থাকবে। কিন্তু ওদের ধারণা ভুল। ডাইভারদের সবাই বেশ চটপটে। কেউ-ই ক্লান্ত নয়। দলের সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তি এগিয়ে এলো ফারগো দম্পতির দিকে। কোনো আড়ষ্টতা ছাড়াই হাত বাড়িয়ে দিল।
‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফারগো? আপনাদের সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল। আমি গ্রেগ টরেস আর ও হচ্ছে রব আলডারম্যান। পাশের ব্যক্তিকে দেখিয়ে বলল সে। রব মাথা নাড়ল।
‘ধন্যবাদ। আমি স্যাম আর ও রেমি। গ্রেগ-এর সাথে হাত মেলাতে মেলাতে বলল স্যাম।
‘আর ওরা হচ্ছে স্টিভ গ্রোনিগ ও টম বেচলি। বাকি দু’জনের সাথে গ্রেগ পরিচয় করিয়ে দিল। এরা দু’জন বয়সে বেশ তরুণ। তবে এদের ৪ জনের কারও বয়সই ৩০-এর বেশি হবে না। এরা সবাই নেভি-এর সাবেক সদস্য। দেহের গড়ন দেখেই স্যাম বুঝতে পারল হাঙর পানিতে যেরকমটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এরাও পানিতে ঠিক সেরকমটাই বোধ করবে।
কাস্টম ও ইমিগ্রেশন স্টাফরা ওদেরকে ডাইভ গিয়ার ও ড্যাফেল ব্যাগগুলো পরীক্ষা করার পর পাসপোর্টে সিল মারল। ডাইভারদেরকে দেখে মাথা নাড়ল এক স্টাফ।
‘সাবধানে থাকবেন। শহরের বাইরে না যাওয়াই ভাল, হ্যাঁ? এইড কর্মীদের সাথে কী হয়েছে সেটা জানেন বোধহয়। শহরের বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়।’ বলল স্টাফ।
কী হয়েছে তাদের?’ রেমি জানতে চাইল। গতকাল ওরা জানতে পেরেছে। দু’জন অস্ট্রেলিয়ান নিখোঁজ। কিন্তু বিস্তারিত কিছু এখনও পর্যন্ত জানে না।
ইন্টারনেটে সব আছে। বিদ্রোহীরা ধরেছে ওদের। স্টাফ আবার মাথা নাড়ল। খুব খারাপ ঘটনা। বিদ্রোহীরা ওদেরকে খুন করার হুমকি দিয়েছে, খুন করেই ফেলবে।’
‘এইড কর্মীদেরকে খুন করবে? তারা তো এখানে দ্বীপবাসীদের সাহায্য করার জন্য এসেছে।
‘গর্দভ বিদ্রোহীরা সেটা বোঝে না। দ্বীপের যেকোন খারাপ ঘটনার কারণে বিদেশিদেরকে দায়ী ভাবে ওরা। ওদের ভাষ্য, বিদেশিরা দ্বীপ ছেড়ে চলে যাক। যদি না যায় তাহলে কপালে দুঃখ আছে।’
‘তাই তারা নিরস্ত্র সমাজকর্মীদেরকে অপহরণ করছে? দ্বীপের অনুন্নত বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছিল এইড কর্মীরা। আর সেই কর্মীদেরকে ওরা খুন করবে? অবিশ্বাস নিয়ে বলল রেমি।
‘ওরা তো সেরকমটাই জানিয়েছে। পাগল সব। গর্দভও।
স্যাম ডাইভারদের দিকে তাকাল। আপনারা একদম ঝড়ের মধ্যে এসে পড়েছেন বলে মনে হচ্ছে। এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো এতদিন ছিল না।’
‘সমস্যা নেই। আমরা আমাদের খেয়াল রাখতে পারব।’ একদম সহজ গলায় বলল গ্রেগ। স্যাম তার কথায় বিশ্বাস রাখল।
আপনারা সবসময় শিপেই থাকবেন। আশা করা যায়, স্থানীয় কোনো সমস্যা আমদের অনুসন্ধান কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
গ্রেগ কিছু বলল না। স্রেফ কাঁধ ঝাঁকাল।
স্যাম ও রেমি অন্য একটা এজেন্সি থেকে টয়োটা ভাড়া করে এনেছে। সবাই তাতে মালপত্র লোড করে চড়ে বসল। পথে কয়েকটা চেকপোস্ট পার হলো ওরা। গাড়ি সার্চ করার পর পুলিশরাও ওদেরকে সতর্ক করে দিল যাতে শহরের বাইরে না যায়।
রেমির দিকে তাকাল স্যাম। সবাই খুব বিচলিত, তাই না?
‘তা তো হবেই। কপাল ভাল। সেদিন এইড কর্মীদের মতো হাল হয়নি আমাদের।’