ডারউইনের কাছে গিয়ে ওরা দেখল রিসার্চ শিপ হিসেবে এটা একদম প্রথম শ্রেণির জাহাজ। রুক্ষ সমুদ্রের সাথে লড়াই করে যাত্রা করার জন্য একে নির্মাণ করা হয়েছে। পানি থেকে বো অনেক উঁচুতে। পাইলট হাউজে অ্যান্টিনার ব্যবস্থা আছে। ব্রিজ থেকে লাল শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি ওদেরক দিকে হাত নাড়ল।
জাহাজে ওঠার পর লাল শার্ট পরা লোকটির দিকে এগোল ওরা। ইনি ক্যাপ্টেন ডেস। ক্যাপ্টেন নিজের পরিচয় দেয়ার পর বাকি ক্রুদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল। তার মেট এলটন সিমস ডেকের নিচের অংশ ঘুরিয়ে দেখাল সবাইকে।
‘এগুলো অতিথিদের কেবিন। সাইটে অনুসন্ধান চলাকালীন সময়ে আপনারা জাহাজে দিন কাটাবেন নিশ্চয়ই।’ বলল সিমস। এর ইংরেজি উচ্চারণেও অস্ট্রেলিয়ান টান প্রকট। বোঝা মুশকিল।
ব্রিজের দিকে এগোল ওরা। চওড়া কনসোলের সামনে ক্যাপ্টেন ডেস দাঁড়িয়ে রয়েছে। জিপিএস ও চার্টে চোখ রেখেছে সে। লিও ও ফারগো দম্পতিকে আসতে দেখে সিমসকে দায়িত্ব দিয়ে সরল ডেস।
‘আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?’ রেমি জানতে চাইল।
মাঝে একটু সমস্যা হয়েছিল। কোরাল সমুদ্রের ওখানে ২০ থেকে ৩০ ফুটি জাহাজ অনায়াসে পার করা গেলেও এতবড় জাহাজ নিয়ে আসা একটু ঝক্কির ব্যাপারে। যা-ই হোক, অক্ষত অবস্থায় নিয়ে আসতে পেরেছি এতেই শুকরিয়া।’ বলল ডেস।
‘আমরা তো সাইটে ডাইভ দিয়ে ধ্বংসাবশেষের ম্যাপ তৈরি করব। এই দ্বীপে পর্যাপ্ত গিয়ার নেই। আশা করি, আপনাদের জাহাজে যথেষ্ট পরিমাণ গিয়ার আছে?
ডেস মাথা নাড়ল। “আছে। কম্প্রেসর, রিব্রেদারর্স, ওয়েট স্যুট, ড্রাই স্যুট, একটা সাবমারসিবল, রোবটিক ক্যামেরা… সব।
‘বেশ। আগামীকাল আমাদের সাথে আরও কয়েকজন ডাইভার যোগ দেবে।’ বলল স্যাম। তাহলে আমরা নিজে দলবদ্ধভাবে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ পাব।’
‘যত গুড় তত মিঠা। আচ্ছা, জাহাজটা আপনাদের কতদিন লাগবে?
বলা মুশকিল। কমপক্ষে ২ সপ্তাহ তো লাগবেই। কাজের গতির উপর নির্ভর করছে।’
‘তাহলে আমি আমার ক্রু আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টা জানিয়ে দেই। যথেষ্ট রসদ আছে আমাদের কাছে। দ্বীপ থেকে কিছু ফল আর সবজি আনলেই হয়ে যাবে। তাছাড়া সমদে মাছের অভাব নেই। আপনাদের যতদিন প্রয়োজন হয় আমরা এখানে থাকতে পারব।’
ব্রিজের দুইপাশে থাকা বিভিন্ন সরঞ্জাম ও গিয়ার দেখাল ক্যাপ্টেন। দুই বছর আগে পুরো সেট জাহাজে স্থাপন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জিনিস অথচ জাহাজে নেই, এরকম হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।’ কথাগুলো বলার সময় বেশ গর্ব প্রকাশ পেল ক্যাপ্টেনের কণ্ঠে।
‘আসলেই দারুণ।’ রেমি সায় দিল।
সাইটে পৌঁছে বৃত্তাকারে ঘুরতে শুরু করল ডারউইন। কমপ্লেক্সের বাইরের কিনারায় অ্যাঙ্কর ফেলতে বলল ক্যাপ্টেন। কাছাকাছি ফেলতে হবে যাতে ডাইভ করতে সুবিধা হয় আবার একটু দূরত্বও রাখতে হবে যাতে অঙ্করের কারণে কোনো ক্ষতি না হয় নিচের ভবনগুলোর। চারজন ডাইভার অনুসন্ধানে নামার জন্য তৈরি হতে শুরু করল।
ডাইভাররা পানিতে নামার পর ব্রিজে থাকা মনিটরে চোখ রাখল সবাই। মনিটরে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। ডাইভারদের মাথায় থাকা হেলমেটে ক্যামেরা বানো রয়েছে, রঙিন ছবি আসছে সেখান থেকে সরাসরি দেখার পাশাপাশি হার্ডডিস্কে জমা হচ্ছে ফুটেজগুলো। প্রয়োজনে পরবর্তীতে পর্যবেক্ষণ করা। যাবে। স্যাম ও রেমি যখন নেমেছিল তখনকার চেয়ে এখন পানি বেশ পরিষ্কার। হালকা আলোতে পুরো কমপ্লেক্সটাকে ভূতুড়ে লাগছে এবার।
‘ওই তো ওখানে। সবচেয়ে বড় হচ্ছে ওটা। আর ওটার চারপাশে বাকিগুলো ছড়িয়ে আছে।’ বলল লিও।
বুঝলাম। হয়তো মূল ভবনের সাথে আশেপাশেরগুলো মন্দির, সভাসদ আর চাকরদের বাসস্থান।’ রেমি বলল।
‘৪০ টা হবে? নাকি আরও বেশি?’ প্রশ্ন করল ডেস।
‘তা তো হবেই। এরআগে আমরা এতগুলো দেখতে পাইনি। পানি পরিষ্কার ছিল না। ১০০ জন থাকার ব্যবস্থা ছিল হয়তো। তবে সংখ্যাটা নির্ভর করছে প্রতি ভবনে কতজনের জায়গা ছিল তার উপর। স্যাম বলল।
‘অদ্ভুত ব্যাপার। যুদ্ধের সময়ও এটা আবিষ্কৃত হয়নি। বলল সিমস।
‘সবার মনোযোগ অন্যদিকে ছিল তখন। প্রযুক্তিও এত উন্নত ছিল না। পানির নিচে কিছু খুঁজে বের করাটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং ছিল।’ বলল রেমি। মনিটরের দিকে তাকাল ও। গত ৭০ বছরে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি।’
কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছেন আপনারা?’ ক্যাপ্টেন জানতে চাইল।
সামনে এগিয়ে এলো লিও। আমি করেছি।’ সাইটের ম্যাপ বানানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানাল সে। স্যাম ও রেমি কয়েকবার একে অপরের দিকে তাকাল। লিও যতই মুখ হাঁড়ি করে থাকুক কাজের বেলায় সে খুবই দক্ষ। নিজের কাজটা সে খুব ভাল বোঝে। লিও’র কথাবার্তা শুনে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন সন্তুষ্ট, সেটা বলাই বাহুল্য।
হঠাৎ মনিটরে দুটো হাঙর দেখা গেল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ডাইভাররা সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ করল না।
‘দেখেছেন?’ মনিটরে আঙুল দিয়ে নির্দেশ করে দেখাল ডেস! হাঙররা সাধারণত ডাইভারদেরকে ঘাটায় না। একটু বুদবুদ কিংবা শব্দ করলে দশবারে নয়বারই হাঙররা পালিয়ে থাকে।
বাকি একবারে কী ঘটে? লিও জানতে চাইল।
‘তখন পাওয়ারহেডের সাহায্য নিতে হয়।’ বলল ক্যাপ্টেন। পানিতে ডাইভ দিতে নামলে টিমের একজনের কাছে ওটা থাকবেই। স্পেয়ারগানের মতো দেখতে জিনিসটা।