যদি বল ডাইভ দিতে পারব না কিনা… উত্তর হবে- পারব।’
ওর গাল পরীক্ষা করল স্যাম। রেমির গালে এখনও আঘাতের চিহ্ন আছে। স্যাম হাসল। সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য তৈরি তুমি?
‘আমার হাসি-খুশি বরের সাথে?
হু। আচ্ছা, লিও’র কী অবস্থা?
‘ডাইভ নিয়ে ব্যস্ত। মুখে যত যা-ই বলুক। আমার মনে হয়, সে ভাইভিং ঠিকই উপভোগ করছে।’
‘আমারও তা-ই ধারণা। কিন্তু তুমি যে এটা বুঝতে পেরেছে সেটা যেন লিও টের না পায়।
ঠিক আছে।’
রেমিকে নিয়ে হোটেলের রেস্টুরেন্টের দিকে এগোল স্যাম। বরাবরের মতো সেই একই টেবিলে লিও বসে আছে। কফি খাচ্ছে। কিন্তু ওর মুখের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো ইঁদুরের বিষ মেশানো আছে কফিতে। ফারগো দম্পতিকে এগোতে দেখে হাসল লিও। ওর হাসিতে কোনো রস নেই।
‘গুড মর্নিং, বন্ধু! লিও’র পিঠে চাপড় মারল স্যাম। তোমাকে বেশ ফ্রেশ দেখাচ্ছে।
মদ গিলেছ বোধহয়, ভুল-ভাল দেখছ। যেটা খেয়েছ ওটা আমিও খেতে চাই।’ ব্যঙ্গ করল লিও।
‘আমার মনে হয় এই আইল্যান্ডের সৌন্দর্য তোমার উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। উজ্জ্বল দেখাচ্ছে তোমাকে।’ লিও মুখোমুখি চেয়ারে বসতে বসতে বলল রেমি।
‘আচ্ছা! তুমিও খেয়েছ? তাহলে আমিও দুইবার খাব!’ লিও গজগজ করল। লিও রেগে গেলেও রেমি নিজের হাসি লুকোতে পারল না।
ভাল খবর এনেছি আমরা।’ বলল স্যাম।
‘তাই?’ লিও চোখের এক ভ্রূ উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করল।
‘ডারউইন আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এখানে এসে ভিড়বে। তারপর আমরা পুরোদমে অনুসন্ধানে নামব। কীরকম স্কুবা ডাইভিং শিখলে সেটার কারিশমা দেখানোর সুযোগ পাবে তুমি।
‘আমি বাজি ধরে বলতে পারি, লিও পানিতে মাছের মতো সাঁতার কাটতে পারবে। রেমি চাপা মারল।
মাছ না ছাই! আমি পুলে নেমে একটু-আধটু সাঁতার কাটতে পারি, এই পর্যন্তই।
‘আরেকটা সুখবর আছে। সেলমা সকালে ফোন করেছিল। বলল, চারজন সাবেক নৌ-বাহিনির ডাইভারকে পাঠাচ্ছে ও। তারা আগামীকাল এখানে এসে পৌঁছুবে।’ বলল স্যাম।
তিনজন একমত হলো শিপটা যখন পোর্টে ভিড়বে তখন ওখানে হাজির থাকবে ওরা। তবে লিও’র এখনও আর একটা ডাইভ দেয়া বাকি আছে। এই ডাইভটা শেষ করতে পারলে ও সার্টিফিকেট পাবে। কথা শেষ করে লিও পার্কিং লটের দিকে হাটা ধরল। ওর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল রেমি।
‘তোমার বন্ধু কি সবসময়-ই এরকম আজব টাইপ আচরণ করে?’ রেমি জিজ্ঞাস করল।
‘আমি ওকে যতদিন ধরে চিনি এরকমটাই দেখে আসছি। মজার বিষয় হলো ওর জীবনটা কিন্তু বোরিং নয়। যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং। কিন্তু তারপরও সে এরকম মুখ হাঁড়ি করে থাকে কেন, কে জানে।
কপাল ভাল আমি ওরকম হুতুমমার্কা মানুষকে বিয়ে করিনি।’
‘তোমাকে বিয়ে করার পর কেউ মুখে হাসি না এনে থাকতে পারতো?
দাঁত বের করে হাসল রেমি। খুব কথা শিখেছে, না?
***
হনিয়ারা পোর্ট তেল আর গ্যাসের ট্যাঙ্কে বোঝাই। বাতাসে পেট্রোলিয়ামের দূর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। নাক কুঁচকিয়ে স্যামের দিকে ঝুঁকল রেমি।
‘খুব সুন্দর জায়গা, তাই না?
‘আশা করা যায় এখানকার কেউ ম্যাচ কিংবা লাইটার জ্বালাবে না। জ্বালালেই আমরা সোজা পরপারে পৌঁছে যাব।
৫ মিনিট পর লিও হাজির হলো।
ডাইভিং কেমন হলো তোমার?’ জিজ্ঞাস করল স্যাম। লিও’র চুল এখনও ভেজা।
‘জান নিয়ে এখানে আসতে পেরেছি তো? এবার বুঝে নাও কেমন হয়েছে।’
স্যামের স্যাটেলাইট ফোনে আওয়াজ হলো। ব্যাকপ্যাক থেকে বের করল স্যাম। অপরিচিত নাম্বার।
‘হ্যালো?’ বলল ও।
‘শুভ দুপুর! স্যাম ফারগো বলছেন?’ কলারের অস্ট্রেলিয়ান উচ্চারণ এতটাই প্রকট যে ইংরেজি বোঝাই কঠিন। তার উপর বক্তার ওখানে প্রচুর বাতাস আর মোটরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
‘জি, বলছি।
‘আমি ক্যাপ্টেন ডেসমন্ড ফ্রান্সিস। সবাই আমাকে ডেস বলে ডাকে। আপনি যদি তৈরি থাকেন তাহলে দেখা করব আপনার সাথে।
“হ্যাঁ, আমরা হনিয়ারা পোর্টে আছি।’
চমৎকার। ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব আমরা। ছোট একটা নৌকা পাঠিয়ে দেব ওটাতে চড়ে বসবেন।
তা বসব। কিন্তু আপনার জাহাজ চিনব কীভাবে?
হাসল ডেস। আমাদের জাহাজকে চেনা খুবই সহজ। টকটকে লাল হাল আর হিংস্র দেখতে জাহাজটা।’
“ঠিক আছে। আমরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।’
ক্যাপ্টেন ডেস ঠিকই বলেছেন। ডারউইন-এর যে চেহারা তাতে এই জাহাজকে চেনা খুব কঠিন কিছুই নয়। নিওন লাল রঙে রঞ্জিত জাহাজ। সামনের অংশে হাঙর মাছের মুখ আঁকা। মুখটা হাঁ করে রয়েছে। হলুদ রঙের দাঁতও আঁকা রয়েছে এতে। তবে দাঁতগুলো অতিমাত্রায় বড় জাহাজটা দেখে হাসল রেমি। স্যামকে কনুই দিয়ে গুতো দিল।
‘এটা কী জাহাজ ডেকে এনেছ?
‘দোষ দিতে হলে সেলমাকে দাও।
জাহাজের ডেক থেকে ক্রেন দিয়ে একটা ২০ ফুটি ছোট নৌকা নামিয়ে দেয়া হলো। নৌকাটা ফাইবারগ্লাসে তৈরি। পানি ঠেলে চটপট পোর্টে এসে ফিরল ওটা।
নৌকার পাইলটের বয়স ২০ এর একটু বেশি হবে। এলোমেলো চুল মাথায়। চুলগুলো বেশ বড়। একটা ধাতব মই দিয়ে উঁচু পোর্টের সাথে নৌকার সংযোগ স্থাপন করল সে। পোর্টে উঠে এলো। মুখে হাসি।
‘শুভ দুপুর। উঠবেন?’
‘হ্যাঁ। স্যাম জবাব দিল।
নৌকায় ওঠার পর নিজের পরিচয় দিল তরুণ।
‘আমার নাম কেন্ট। কেন্ট ওয়ারেন। আমি মূলত ডারউইন-এর ডাইভ মাস্টার। জাহাজে ওঠার পর সবার সাথে হাত মেলাব। আপাতত যাওয়া যাক। দ্রুতগতিতে পানি কেটে এগোতে শুরু করল ওরা।