‘যাক, অবশেষে কিছু ভাল খবর পাওয়া গেল। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর সবকিছুর সমাধান করবেন কীভাবে? ভেবে রেখেছেন?
‘দূর্ভাগ্যবশতঃ কর্মীরা সেটা করতে পারবে না। তবে এখানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়ে যাবে। পরিস্থিতি ঠিক করার ব্যাপারে আমরা চিন্তিত নই। সেটা সরকার বুঝবে। কিন্তু আমরা খুব ভাল করেই জানি এই সরকারের কিছু করার ক্ষমতা নেই।’
তাতে কাজ হবে?
‘সেটা সময়ই বলে দেবে।
‘আমার ধারণা, এই কৌশল কাজ না করলে সেক্ষেত্রে আপনি বিকল্প কোনো পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
‘অবশ্যই রেখেছি। কিন্তু সেটার ব্যাপারে জানতে চাইবেন না।’
“ঠিক আছে, চাইব না। যা করতে হয় করুন।
করব। তবে আপনি টাকা দিতে ভুলবেন না যেন। আমি অপেক্ষায় আছি।’
‘ধরে নিন, পেয়ে গেছেন।
ওপাশ থেকে ফোন রেখে দিল। নিজের হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল গ্রিমস। এরকম চুক্তি এরআগে সে কখনও করেনি। অস্বস্তি হচ্ছে আবার উৎফুল্লও লাগছে ওর। ১ বছর আগে কলার তাকে ফোন করে একটা প্রস্তাব দেয়: কিছু অনৈতিক কাজে সহায়তা করলে সলোমন আইল্যান্ডের পরবর্তী সকল ইজারার দায়িত্ব গ্রিমসের কোম্পানীকে দেয়া হবে। তেল, গ্যাস, খনিজ পদার্থ যা খুশি উত্তোলন করার সুবিধা পাবে।
গ্রিমস প্রথমে ভেবেছিল কেউ ফাঁকা বুলি ছাড়ছে। কিন্তু ওপাশের বক্তা যখন সোনার খনি বন্ধ করে দেয়ার শপথ করল তখন একটু নড়েচড়ে বসেছিল গ্রিমস। লোকটি তার কথা রেখেছিল। বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানিতে খনিতে পানি ঢুকে পড়ায় সত্যি সত্যি বন্ধ হয়ে গেল সোনার খনি। কারণ এরকম বিপর্যয় এড়ানোর জন্য খনিতে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল সেগুলো ঠিকভাবে কাজ করেনি কিংবা করতে দেয়া হয়নি।
এঘটনার পরপরই সরকার দ্বীপে বিদেশি অপারেটরদের যাবতীয় প্রজেক্ট বন্ধ করে দেয়। যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় সোনার খনির সম্ভাবনাময় দরজা।
এসবের পর কলারের প্রতি আস্থা আসে গ্রিমসের। সে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে এপর্যন্ত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়েছে। সলোমন আইল্যান্ড কোম্পানীকে বিদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য ডলারগুলো খরচ করেছে গ্রিমস।
প্ল্যানটা একদম ডাল-ভাত। বিদ্রোহী দলকে অর্থ সহায়তা দিয়ে দ্বীপে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের পর নতুন সরকার স্থাপন করা। তারপর সেই সরকারের কাছ প্রচুর ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধা নিয়ে দ্বীপে চুটিয়ে ব্যবসা করা।
পরিকল্পনাটা যদি ঠিকভাবে কাজ করে তাহলে শত শত মিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল আসতে যাচ্ছে গ্রিমসের হাতে। ডলারের বন্যা বয়ে যাবে।
তবে সব বড় বড় প্রজেক্টের মতো এই প্রজেক্টেও “পাঠা বলি দিতে হচ্ছে। যেখানে শত শত মিলিয়ন ডলারের ব্যাপারে সেখানে কয়েকজন এইড কর্মী আর দ্বীপের স্থানীয় লোকদের মৃত্যু কিছুই নয়। জীবনে বড় কিছু হতে গেলে “নরম” হলে চলে না। যেখানে টাকার অংক যত বড় সেখানে নোংরামি তত বেশি।
দ্বীপে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ওখানকার অবস্থা যা-ই হোক তাতে গ্রিমসের কিছু আসে যায় না। সে স্রেফ তার ব্যবসায়িক স্বার্থের দিকে নজর রাখছে। হাজার হোক, সে একজন ব্যবসায়ী।
নিজের অফিস রুমের চারদিকে নজর বুলাল গ্রিমস। বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও সেলিব্রেটিদের সাথে ভোলা ছবি শোভা পাচ্ছে দেয়ালে। ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে বিভিন্ন পুরষ্কার ও ক্রেস্টও আছে। একদম শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে এই অবস্থানে এসেছে গ্রিমস। এত সম্পদ এত ঐশ্বর্য কখনও সৎ পথে উপার্জন করা সম্ভব নয়। বিপুল সম্পদের মালিক হতে হলে অবশ্যই বাকা পথ অবলম্বন করতে হয়। সিডনি হারবারের দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্টির হাসি হাসল গ্রিমস। রাস্তার সাধারণ লোক আর তার মধ্যে পার্থক্য এতটুকুই… দৃষ্টিভঙ্গি আর সাহস। যেখানে সুযোগ উঁকি দিয়েছে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়তে গ্রিমস কখনও দ্বিধা করেনি। অথচ সাধারণ লোকরা ঝুঁকির কথা ভেবে ইতস্তত করে সময় নষ্ট করে।
কজিতে পরা দামী প্লাটিনাম ঘড়িতে সময় দেখল গ্রিমস। মানুষ-জন মরছে তাতে সে কোনো অনুশোচনাবোধ করল না। প্রতিদিন পৃথিবীতে কতজনই তো মারা যাচ্ছে। দিন শেষে লাভটাই আসল।
এটাই ব্যবসা।
.
১৭.
গোয়াডালক্যানেল, সলোমন আইল্যান্ড
স্যাটেলাইট ফোনটা চালু করে মেসেজ চেক করল স্যাম। সেলমা মেসেজ পাঠিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান রিসার্চ শিপ ডারউইন আজ দুপুরের মধ্যে হনিয়ারা পোর্টে ভিড়বে। স্যাম সময় চেক করে ক্যালিফোর্নিয়ায় মেসেজ পাঠিয়ে সেলমাকে জানাল শিপটা যখন আসবে তখন উপস্থিত থাকবে ওরা।
গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ হোটেল এসেছিল। স্যাম ও রেমিকে আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পর আশ্বাস দিয়ে গেছে, অপরাধীদেরকে ধরা হবে। যদিও স্যামের বর্তমান চিন্তা জুড়ে সমুদ্রের নিচে থাকা ধ্বংসাবশেষ ঘুরপাক খাচ্ছে। কতখানি সফল হতে পারবে কে জানে।
কী দেখছ?’ রেমি প্রশ্ন করল। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল স্যামকে।
‘কিছু না, নিজের দুশ্চিন্তা স্ত্রীকে জানিয়ে উদ্বেগ বাড়াল না স্যাম। রিসার্চ শিপ খুব শীঘ্রি চলে আসবে।
আচ্ছা। ভাল খবর।
স্যাম স্ত্রীর দিকে ফিরল। ঘাড়ের কী অবস্থা?