‘শিপ আসবে কবে?’ লিও প্রশ্ন করল।
কাল সন্ধ্যায়।
‘তাহলে আগামী ২৪ ঘণ্টা নিজেদেরকে নিরাপদে রাখো। খুন হয়ে যেয়ে। এদিকে আমি স্কুবা ডাইভিরে নির্যাতন সহ্য করতে থাকি। কোর্সটা শেষ করতে হবে।’
রেমি হাসল। ভাল বুদ্ধি।
বিশেষ করে “খুন হয়ে যেয়ো না” অংশটুকু শুনতে দারুণ লেগেছে।’ সায় দিল স্যাম।
‘আঁজোপাড়া গায়ে আর যাচ্ছি না।’ রেমি সাফ সাফ জানিয়ে দিল।
‘হুম। এখানে প্রতিদিন আমাদের সাথে কোনো না কোনো অঘটন ঘটেই।’
‘আর কালকে নতুন একটা দিন আসছে। অর্থাৎ, আবার নতুন কোনো অঘটন।
‘কিন্তু হিসেব করে দেখলাম, আজকেই দুটো অঘটন ঘটে গেছে। ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে পাহাড় থেকে নদীতে পড়া আর গুলিবর্ষণ। সেহিসেবে আশা করা যায়, কালকে কোনো অঘটন ঘটবে না।
‘আগে দেখি কী হয়। তারপর তোমার কথা বিশ্বাস করব।’
১৬. সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
১৬.
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
কনফারেন্স রুমে নিজের এক্সিকিউটিভ চেয়ারে বসে আছে জেফরি গ্রিমস। রুমে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের দিকে তাকাল সে। সবাই চিন্তিত। টানা তৃতীয়বারের মতো তার কোম্পানী লোকসান গুনতে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য জগতের এক উজ্জ্বল নাম জেফরি গ্রিমস। উচ্চমাত্রার ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায়ে বাজিমাত করার জন্য সে বহুল পরিচিত। কিন্তু বর্তমান অর্থনীতির সাথে পাল্লা দিয়ে কোম্পানীকে লাভের মুখ দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও এখন আর তার কোম্পানীতে টাকা দিতে ভরসা পাচ্ছে না।
দুই বছর আগেও অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি বেশ স্বাস্থ্যবান ছিল। বাতাসে টাকা উড়ত। প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান অর্থনীতিতে। কিন্তু গ্রিমস তখন ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পিছিয়ে পড়ল। খনি আর পেট্রোলিয়াম সেক্টরে টাকা বিনিয়োগ করে লাল বাতি জ্বলে গেল তার ব্যবসায়।
কোম্পানী এখন বিভিন্ন ঋণে জর্জরিত। অস্ট্রেলিয়ার বিজনেস কিং জেফরি গ্রিমস এখন টিকে থাকার জন্য ধুকছে।
নিজের ব্যাকব্রাশ করা চুলে আঙুল চালাল গ্রিমস। আচ্ছা, আমরা কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিস অন্য কোম্পানীর কাছে বিক্রি করতে পারি না? অন্তত যেটুকু ক্ষতি হয়েছে সেটুকু হয়তো পুষিয়ে যেত।
প্রধান ফাইন্যানশিয়াল অফিসার কার্টিস পার্কার মাথা নাড়ল। ব্যালান্স শিটে কোনো কিছুর ট্রান্সফারের হদিস পেলে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আমাদের উপর হামলে পড়বে। তারা জানতে চাইবে জিনিসগুলো কোথায় গেল। অনেক ঝামেলা হবে তখন। এবারের লোকসানটা আমাদেরকে সহ্য করে নিতে হবে। আশা করা যায়, পরেরবার আমরা লাভের মুখ দেখব।’
গ্রিমস ভ্রু কুঁচকাল। তাহলে ধুঁকতে থাকা কোনো প্রজেক্টের গতি কমিয়ে কিংবা বাড়িয়ে দিলে কেমন হয়? কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির দোহাই দিয়ে কোনো লুকোচুরি না করেও তো অন্য কোম্পানীর কাছে আমাদের অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বিক্রি করে দিতে পারি? যদিও জিনিগুলোর প্রকৃত মূল্যের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রি করে দিতে হবে। তারপরও বর্তমান পরিস্থিতির স্বার্থে…’
হাসল পার্কার। না, আমরা সেটা পারি না। আমরা ওয়াল স্ট্রিট ব্যাংক নই। ওসব খেলা আমাদের মানায় না। সবাই আশা করে আমরা আমাদের কাজে সৎ থাকব।’
গ্রিমস টবিলে কলম ঠুকল। বেশ। স্টকে কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে? অবস্থা যত জঘন্যই হোক আমি জানতে চাই।’
‘১৫%, তবে আগামী ১ সপ্তাহের মাঝে লোকসান পুষিয়ে যাবে। আমি কিছু ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের সাথে আকর্ষণীয় রেটে ব্যবসা করতে রাজি হয়েছে। এতে আমাদের দু’পক্ষেরই লাভ হবে।’ স্প্রেডশিটের উপর নজর বুলাল পার্কার। কিন্তু সমস্যা হবে ঋণশোধ করতে গিয়ে। সবার ঋণ একসাথে শোধ করার মতো অবস্থায় নেই আমরা। ধীরে ধীরে টাকা আসবে। কিন্তু পাওনাদাররা কেউ-ই সিরিয়ালে পিছে থাকতে চাইবে না। সবাই চাইবে নিজের পাওনাটা সবার আগে বুঝে নিতে।’
এক সুন্দরী তরুণী কনফারেন্স রুমে মাথা ঢুকিয়ে গ্রিমসের দিকে তাকাল।
বল, ডেব?’ প্রশ্ন করল গ্রিমস।
আপনার প্রাইভেট লাইনে ফোন এসেছে। কলার জানালেন, বিষয়টা জরুরী… আপনি কি কলটা আশা করছিলেন?
গ্রিমসের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। হ্যাঁ, হ্যাঁ। রুমের উপরে চোখ বুলাল সে। জেন্টেলম্যান, আমি একটু আসছি, ওকে?’ কেউ তাকে কোনো সাড়া দিল না। রুম থেকে বেরিয়ে ডেবের পিছু পিছু এগোল গ্রিমস। ডেব মেয়েটা বেশ লম্বা। ওর হাঁটার গতি দেখে মনে হলো লম্বা লম্বা পা ফেলে যেন হাঁটছে না, জগিং করছে!
‘লাইন নাম্বার দুই। গ্রিমসকে নিজের অফিস রুমে ঢুকতে দেখে বলল ডেব। গ্রিমস মাথা নেড়ে অফিস রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিল। এক্সিকিউটিভ চেয়ারে বসে ফোনটা কানে ধরল সে।
‘হ্যালো। গ্রিমস বলল।
যে ফোন করেছে তার কণ্ঠস্বর একদম সমতল, পুরুষ নাকি নারী বোঝ যাচ্ছে না, কোনো একটা সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিজের কণ্ঠকে আড়াল করে রেখেছে। গ্রিমস যতবার এই রহস্যময় কলারের সাথে কথা বলেছে সবসময় একই অবস্থা।
‘আমাদের দ্বন্দের তীব্রতার বৃদ্ধির প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়ে গেছে। দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ান আর সলোমন পত্রিকাগুলোতে এইড কর্মীদের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে আর্টিকেল প্রকাশিত হবে। সাথে থাকবে মিলিশিয়াদের দাবী দাওয়াগুলো।