‘এক মিনিটের মধ্যেই বুঝতে পারব।’
হাঁটার গতি কমিয়ে দিল ওরা। আশা করল, সেডানও সেটার গতি কমিয়ে দেবে। কিন্তু দিল না। শ্রাগ করল স্যাম। একটু সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়েছি বোধহয়।
‘একটু?
‘রাস্তায় ট্রাকের ধাক্কা আর গুলির মুখ থেকে ফিরে আসার পর এরকমটা হতেই পারে।
হয়েছে। তোমার ধারণা ভুল হয়েছে। খুশি হয়েছি।’
পেছনে তাকাল স্যাম। পথচারীরা সূর্যের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ভবনের ছায়ার নিচ দিয়ে পথ চলছে। কেউ ফলো করছে না ওদের। যে যার মতো চলছে।
হোটেলে ফিরে দেখল লিও ওদের জন্য অপেক্ষা করছে লবিতে। ওরা তিনজন পুল বার-এ গেল। সমুদ্র দেখতে দেখতে কথা বলা যাবে। লিও বয়স্ক লোকদের মতো হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে নিজের স্কুবা ডাইভিঙের ট্রেনিঙের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করল ও। এত কঠিন ট্রেনিঙে লিও খুব বিরক্ত।
সাঁতরে পাক দিতে বলেছে আমাকে। তাও আবার ২০ পাক! আমার ধৈর্যশক্তি পরীক্ষা করতে চায়। ২ পাক দিয়েই আমার অবস্থা কাহিল। ১০ পাক দেয়ার পর মনে হলো আমার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
কিন্তু ২০ পাক তো ঠিকই দিয়েছ।’ বলল রেমি।
‘তোমার মুখে কী হয়েছে? অবশেষে লিও’র চোখে বিষয়টা পড়েছে। ‘কেমন যেন ফোলা ফোলা লাগছে।’
‘ওহ, তোমাকে এখনও বলিনি? কে যেন আমাদের গাড়িকে ধাক্কা মেরে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে গুলি চালিয়েছিল। স্যাম বলল। রেমি মাথায় একটু ব্যথা পেয়েছে। নদীর স্রোত ঠেলে আমরা পালিয়ে এসেছি।’
লিও এমন একটা ভাব করল যেন ওরা দু’জন পাগল। আরে নাহ। ঠিক করে বলল, কী হয়েছে?
হাসল রেমি। আমি উল্টাপাল্টা বকছিলাম। স্যাম আমাকে মেরে এই হাল করেছে।’
লিও মাথা নাড়ল। তোমাদের দুজনের যে কী হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
“লিও, আমাদেরকে সত্যি সত্যি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কে বা কারা কাজটা করেছে আমরা সেটা জানি না। আজকে সকালে ঘটেছে এসব।
ওদের চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে লিও। মশকরার চিহ্ন খুঁজছে। কিন্তু ফারগো দম্পতির চোখে কোনো ইয়ার্কির চিহ্ন দেখতে পেল না। ‘বিশ্বাস হচ্ছে না।
‘আমি জানি। এই মাত্র পুলিশ স্টেশন আর হাসপাতালে কাজ সেরে এলাম। তবে খারাপ খবরের পাশাপাশি ভাল খবরও আছে। সেটা হলো, ধ্বংসাবশেষের কোথাও গুপ্তধন থাকতে পারে।
‘বলো কী? জানলে কীভাবে?
লিও-কে সব খুলে বলল স্যাম। কিন্তু লিও-কে মোটেও উত্তেজিত মনে হলো না। বরং আরও হতাশ লাগছে।
‘তারমানে, ওটা রাজার বাড়ি? অভিশাপের সাথে এবার গুপ্তধনও যোগ হলো?’
‘তোমার বলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, এটা খারাপ খবর।’
এতে বিষয়টা আরও জটিল হয়ে গেল। আমার তো মনে হয় এজন্যই তোমাদের উপর হামলা হয়েছে। কবিরাজ ছাড়াও অনেকেই জানতো গল্পটা। গুপ্তধনের বিষয়টা নিশ্চয়ই তারাও জানে। হতে পারে অন্য কেউ এটার পেছনে লেগেছে। ডাইভার থেকে শুরু করে ক্যাপ্টেন যারাই ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কে জেনেছে… তাদের মধ্যে থেকে কেউ হয়তো বড় কিছু প্ল্যান করে বসে আছে।
স্যামের দিকে তাকাল রেমি। লিও ঠিকই বলেছে। এখানকার অধিকাংশ লোকই গরীব। এরকম গুপ্তধন পেলে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে।
‘ঠিক। কিন্তু আমরা তো নিশ্চিতভাবে জানি না আদৌ গুপ্তধন আছে কিনা। কিংবা ঠিক কোথায় আছে। তাছাড়া ভুলে গেলে চলবে না, ৮০ ফুট পানির নিচে রয়েছে ওগুলো। আর পানিতে কুমীর আর হাঙর দুটোরই অবাধ চলাচল। গুপ্তধন কোথায় আছে সেটার হদিস বের করার আগেই আমাদেরকে এখান থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করাটা বোকামি নয়?’ বলল স্যাম।
রেমি মাথা নাড়ল। তুমি বিষয়টাকে জাতিগত বিদ্বেষ হিসেবে দেখছ। কিন্তু আমার মনে হয় আমরা কোনো কিছুতে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছি কিংবা দাঁড়াতে যাচ্ছি। হতে পারে সেটা স্মাগলিং, ড্রাগস কিংবা অন্য কোনোকিছু। সব ধাঁধার উত্তর আমরা পাচ্ছি না। কারণ অনেক কিছু এখনও আমাদের কাছে অজানা রয়ে গেছে।’
মাথা নাড়ল স্যাম। আমরা বউ সবসময় ঠিক কথাটাই বলে। এবারও বলল।
তাহলে আমাদের কী হবে? আমরা এখন কী করব?’ লিও জানতে চাইল।
‘চোখ-কান খোলা রাখা ছাড়া কিছু করার দেখছি না। শিপটা না আসা পর্যন্ত ডাইভও দিতে পারছি না আমরা।’ বলল স্যাম।
‘অপরিচিত লোকদের আমার পছন্দ নয়। তার উপর যারা গুলি করে তাদের তো আরও অপছন্দ।
‘আমিও তোমার সাথে একমত, বন্ধু। কিন্তু আপাতত আমাদের আর কিছু করার নেই। অপরিচিতদের পরিচয় বের করার পেছনে সময় নষ্ট না করে আমরা বরং সম্ভাব্য গুপ্তধন সম্পর্কে আমাদের অর্জিত জ্ঞানকে ভাল ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আমার মনে হয়, এখানে ডাইভ দিতে এখন বিশেষজ্ঞ ডাইভার প্রয়োজন। কারণ বিস্তর অনুসন্ধানের জন্য জাহাজে থাকা ডাইভার যথেষ্ট নয়। একদম পেশাদার ডাইভার দরকার আমাদের, যাদের বেশ অভিজ্ঞতা আছে।’
লিও মাথা নাড়ল। ওরকম লোকজনকে চেন বলে মনে হচ্ছে?’
হাসল স্যাম। না, ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় নেই সেভাবে। যাদের সাথে পরিচয় আছে তারা সবাই যে যার ব্যক্তিগত প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত। তবে তোক যোগাড় হয়ে যাবে। সেলমাকে বলব। ও সব ম্যানেজ করে দিতে পারবে।’
রেমি স্যামের একটা হাত তুলে নিল। সবসময় স্যাম কোনো না কোনো দারুণ আইডিয়া বের করে। আমিও স্যামের সাথে একমত। এখানে বিশেষজ্ঞ ডাইভার নিয়ে নামা উচিত।’