‘গুপ্তধন। এরকম চ্যালেঞ্জ নিতে আমি কখনওই পিছ পা হইনি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই লোককাহিনির সত্যতা কতটুকু? আদৌ কি কিছু পাওয়া যাবে?
‘প্রফেসর এ-ব্যাপারে আর কিছু জানাতে পারেননি। কারণ পুরো বিষয়টা নিষিদ্ধ জ্ঞান। কবিরাজ তাকে এসব গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছিলেন। তাই প্রফেসরের পক্ষে দ্বীপের অন্য কাউকে আর এ-ব্যাপারে জিজ্ঞাস করা সম্ভব হয়নি। প্রায় ১ যুগ ধরে ওখানে যাতায়াত ছিল প্রফেসরের। ওখানকার লোকজনদের সাথে একটা পারস্পরিক বোঝাঁপড়া আর বিশ্বস্ততার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তিনি সম্পর্কটাকে নষ্ট করতে চাননি। কিন্তু গোপন কথা এক কান থেকে দুকান হওয়া মানেই সেটা আর গোপন না থাকা। কবিরাজ হয়তো এভাবে অন্য কাউকেও গল্পটা শুনিয়েছিলেন। আর তিনি নিজেও হয়তো শুনেছিলেন কারও কাছ থেকে। তোমরা যদি ওখানকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও এ-ব্যাপারে কিছু জানতে না পারো তাহলে বুঝতে পারবে দ্বীপের বর্তমান প্রজন্ম এই গল্পের ব্যাপারে অজ্ঞ। যারা জানতো তারা মারা গেছে। তাই নতুন প্রজন্ম হয়তো গল্পটা জানে না। কিংবা অতীত জানার ব্যাপারে হয়তো তাদের আগ্রহও নেই।
আপনমনে মাথা নাড়ল স্যাম। হ্যাঁ। যুদ্ধের পর এই দ্বীপে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের প্রধান সমস্যা হলো এখানকার লোকজন ইংরেজি বলতে পারে না। যারা বলতে পারে তারা সংখ্যায় খুব কম। শহরের দিকে থাকে তারা। এসব লোককাহিনি তারা জানে না। তাই আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক বেশি।
‘আচ্ছা, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি ততটুকু তোমাকে জানিয়ে দিলাম। তবে প্রফেসর বলেছেন, তুমি যদি তাকে ফোন করো তাহলে উনি আরও কিছু তথ্য জানাবেন। আমি তোমাকে তার নাম্বার আর কিছু কিছু কাগজ স্ক্যান করে পাঠাচ্ছি।’
‘ঠিক আছে। কিন্তু তোমার কী মনে হয়, তাঁর সাথে কথা বলে কোনো লাভ হবে?
‘যতদূর বুঝেছি, তিনি যা জানতেন সব ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন। নতুন করে হয়তো আর কিছু জানাতে পারবেন না। মূলত তোমার সাথে কথা বলতে চাওয়ার পিছনে তার একাডেমিক স্বার্থ আছে। গোয়াডালক্যানেলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেবেন হয়তো। আমি অবশ্য তাকে এখনও রাজার সেই ইমারতের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার বিষয়টা খোলাসা করে বলিনি।’
‘খুব ভাল করেছ। কথা চেপে রাখতে তোমার জুড়ি নেই।
‘এটা তো আমার কাজের মধ্যে পড়ে, তাই না? কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রফেসরের ই-মেইল অ্যাড্রেস তোমার ইনবক্সে পেয়ে যাবে। আর কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন কোরো। একটু ইতস্তত করল সেলমা। তোমাদের এই অভিযান দ্রুত শেষ হলে আমি খুশি হই। সাবধানে থেকো।’
সম্প্রতি ওদের উপরে হয়ে যাওয়া হামলার কথাটা সেলমাকে জানাবেন না বলে ভাবল স্যাম। কিন্তু বিষয়টা নিজের মাঝে চেপে না রেখে অন্য কাউকে জানানোটা হয়তো নিজের জন্যই মঙ্গল বলে ভাবল ও। ই, আজকের দিন পর্যন্ত সব বেশ ভালই চলছিল।’
‘তো আজ কী হয়েছে?
আমাদেরকে রাস্তা থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে গুলি চালিয়েছিল কারা যেন। এছাড়া দ্বীপটা মন্দ নয়’
সেলমা গম্ভীর হয়ে গেল। তুমি মজা করছ।
সত্য ঘটনা সবসময় কাল্পনিক গল্পের চেয়েও বেশি বৈচিত্রময় হয়।
‘তোমাদের পেছনে কারা লেগেছে?
‘তা জানি না।’
হু। এ-ব্যাপারে আমি কোনো সাহায্য করতে পারি?
‘না মনে হয়। তবে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে বিষয়টা জানিয়ে রাখতে পারো। আমরা আবার গুম-টুম হয়ে যাই কিনা!”
খুব সুন্দর চিন্তা-ভাবনা তোমার!
যা-ই হোক, সেলমা। আমাদেরকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কোরো না। বরাবরের মতো এবারও আমরা সব ম্যানেজ করে নেব। এখান থেকে নতুন কিছু জানতে পারলে ফোন দেব তোমাকে।’
স্যাম ফোন রাখতেই ওর দিকে তাকাল রেমি। সেলমা তথ্য যোগাড় করতে পেরেছে তাহলে?
‘ওকে কোনোবার ব্যর্থ হতে দেখেছ?”
“হুম, হয়েছে। এবার বলল, ও কী কী বলল।
স্ত্রীকে সব খুলে বলল স্যাম।
‘আমরা শুধু বন্ধুকে সাহায্য করতে এসেছিলাম। এখন দেখা যাচ্ছে গুপ্তধনও পাওয়া যেতে পারে। আমাদের কপালটাই এরকম। তাই না?
‘গুপ্তধনের বিষয়টা সত্য নাকি মিথ্যা, কে জানে। আর হাজার বছরের পুরানো গুপ্তধনের বর্তমানে কী হাল হয়ে আছে তা তো বলা যাচ্ছে না। হয়তো দেখা যাবে, সেগুলো স্রেফ জঞ্জালে পরিণত হয়েছে এতদিনে।
তুমি সোনা আর অন্যান্য রত্নে কথা বলেছ। ওগুলোর তো এখনও অনেক চাহিদা আছে। এখানে এসে কিন্তু একটা সুন্দর পাথর পর্যন্ত আমাদের চোখে পড়েনি। আমি বলি কি, আমরা অফিসিয়ালি এই অভিযানকে ট্রেজার হান্টিং অভিযান হিসেবে নিই। যাকে যাকে জানানো দরকার জানাই।’
স্যাম রত্ন উদ্ধারের বিষয়টাকে অতটা গুরুত্ব দিল না। অবশ্যই। লিওকে সব জানাব।
‘আর তারপর আমরা যদি গুপ্তধন খুঁজে পাই তাহলে সেগুলো হস্তান্তর করব স্থানীয় সরকারের কাছে। ঘাড় ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকাল রেমি। আউ!
‘চলো, ডাক্তারের কাছে যাই।
‘হাসপাতালে যেতে হবে না।’
“মিসেস ফারগো ম্যাডাম, ভুলে যাবেন না আপনি ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে গাড়ি নিয়ে নদীতে আছড়ে পড়েছিলেন। কপট রাগ দেখাল স্যাম।
রেমি শ্রাগ করল। উফ! আচ্ছা, বাবা, যাব। কিন্তু কোনো ইনজেকশন নেব না কিন্তু! আগেই বলে দিলাম!
‘সম্ভব হলে তোমার ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ করব। কিন্তু না হলে কী আর করা।