গাড়িতে ওঠার পর স্যামের কাঁধে মাথা রাখল রেমি।
‘তোমার ঘাড়ের কী অবস্থা? স্যাম জানতে চাইল।
একটা ম্যাসাজ করাতে পারলে খুব উপকার হতো।
‘শহরে গিয়ে দেখি তোমাকে কোনো স্পা সেলুনে ঢুকিয়ে দিতে পারি কিনা।
হুম। যা অবস্থা করে এখানকার লোকজন। ম্যাসাজ সেলুন ভাল ব্যবসা করে নিশ্চয়ই।
ম্যাসাজ নেয়ার আগে লম্বা সময় গোসল করে নিলে বোধহয় ভাল লাগবে।
‘তুমি গোসল করার কথা বলে অন্য কিছু বোঝাতে চাচ্ছ না তো?”
“আরে, না, না। কী বলো। আমি একদম সাদা মনে কথাটা বলেছি, রেমি। খোদর কসম!
স্বামীর আরও ঘনিষ্ঠ হলো রেমি। তাকাল স্বামীর দিকে। এসব বলেই তো শুরু করে প্রতিবার।
হনিয়ারা-র কাছাকাছি চলে আসতেই চুপ হলে গেল স্যাম।
কী করবে এখন?’
‘পুলিশের কাছে যাব। এই ঘটনার রিপোর্ট দেব ওখানে।
“ঠিক আছে। তাহলে ড্রাইভারকে বলল, আমাদেরকে যাতে পুলিশ স্টেশনে নামিয়ে দেয়। কিংবা সেটা সম্ভব না হলে অন্ততপক্ষে যেন বলে দেয় পুলিশ স্টেশনটা কোথায়।
ড্রাইভারের পেছনে থাকা ছোট্ট জানালায় নক করল স্যাম। চমকে উঠে ড্রাইভার কষে ব্রেক করল। হঠাৎ ব্রেক করায় স্যাম ও রেমি ধাক্কা খেল পিকআপের গায়ে।
‘আমাদেরকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যেতে পারবেন? ইংরেজি বলল স্যাম।
ড্রাইভার ইংরেজি না বুঝলেও “পুলিশ” শব্দটা ঠিকই বুঝতে পেরেছে। মাথা নাড়ল সে। পারবে। পিকআপ আবার চলতে শুরু করল।
‘আশা করছি, পুলিশরা শুধু সমাবেদনা জানিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাবে না। সম্ভবত ওটা একটা ডজ ট্রাক ছিল। সবকিছু এত দ্রুত হয়ে গেল যে নিশ্চিতভাবে বলতেও পারছি না। খেয়াল-ই করতে পারিনি ঠিকভাবে।
পুলিশ স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসে আছে ওরা। এক সার্জেন্ট এসে রিপোর্ট লিখতে শুরু করল। ফারগো দম্পতিকে বেশ বিনয়ীভাবে প্রশ্ন করছে। সে। পুলিশ স্টেশনে এক ঘণ্টা কাটানো পর স্যাম ও রেমি বুঝতে পারল এখানকার পুলিশ বেশ সচেতন। ব্যবহারও ভাল। এরকম একটা দৃর্ঘটনা দ্বীপে ঘটতে পারে এটা তারা আশা করেনি। অফিসার খুব সুন্দর করে বিষয়টা ওদেরকে বুঝিয়ে বলল।
‘এই দ্বীপের যত রেজিস্টার্ড ট্রাক আছে সবগুলো চেক করব আমরা। তবে ওতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু ড্রাইভার যদি ভূয়া হয়ে থাকে, যদি লাইসেন্সপ্রাপ্ত না হয় তাহলে হয়তো তাকে আমরা কখনও খুঁজে পাব না।’
‘ওরা কিন্তু আমাদের উপর গুলি চালিয়ে ছিল। বিষয়টা গুরুত্বর। আক্সিডেন্টের পর আমরা দুজনকে দেখতে পেয়েছি। আমাদেরকে খুঁজছিল তারা।
হ্যাঁ। আপনারদের দেয়া বর্ণনা আমি রিপোর্টে লিখে রেখেছি। দু’জন পুরুষ। স্থানীয় বাসিন্দা। উচ্চতা মাঝারি। বিশেষ কোনো চিহ্ন নেই। জিন্সের হাফ প্যান্ট আর টি-শার্ট পরা ছিল। একজনের পরনে বাদামী টি-শার্ট, আরেকজন ফ্যাকাশে নীল।’ বলল অফিসার। কিন্তু সমস্যা হলো আপনাদের এই বর্ণনা সাথে দ্বীপের প্রায় অর্ধেক লোকের মিল পাওয়া যাবে। যা-ই হোক, আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করব।’ অফিসার মাথা নাড়ল। আপনাদের ভাড়া করা গাড়িটা থেকেও অনেককিছু জানা যাবে বলে আশা করছি। আপনাদেরকে যে ধাক্কা মারা হয়েছিল সেটার প্রমাণ নিশ্চয়ই আছে গাড়িতে। গুলিও হয়েছে বললেন। তাহলে তো গাড়িতে গুলির গর্ত থাকার কথা।
‘হ্যাঁ, আছে। সায় দিল রেমি।
‘তো আপনারা এই দ্বীপে কী জন্যে এসেছেন?
ছুটি কাটাতে এসেছি। স্যাম যতটুকু সম্ভব সত্য কথা বলল।
এখানকার কারও সাথে ঝগড়া হয়েছে? কোনো মতের অমিল কিংবা বিতর্ক?”
না। এখানকার সবাই তো বেশ ভাল। রেমি উত্তর দিল।
‘তাহলে আপনারা বলছেন, আপনাদেরকে খুন করতে পারে এরকম কাউকে আপনারা জানেন না।
না। আসলে সেটার কোনো মানেই হয় না।’ এবার স্যাম বলল।
স্যামের দিকে শক্ত দৃষ্টিতে তাকাল অফিসার। তবে কেউ না কেউ তো অবশ্যই আছে। মিস্টার ফারগো, এই দ্বীপে এরকম ঘটনা হয় না বললেই চলে। আমাদের দ্বীপের লোকজন সবাই শান্তি প্রিয়। এখানে সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় দেয়া হয় না। বিশেষ করে বিদেশি অতিথিদের সাথে এরকম আচরণ তো কোনোভাবেই বরদাস্ত যায় না।’
অফিসারের কথার ধরন শুনে বোঝা গেল বিষয়টা সে স্রেফ পর্যটকদের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখছে না। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে। অবশ্য স্যাম আর কথা বাড়াল না। থানার কাজ শেষে পায়ে হেঁটে হোটলের দিকে রওনা হলো ওরা।
বরাবরের মতো এবারও ফ্রন্ট ডেস্কের স্টাফ ওদের দিকে ভয় মাখা দৃষ্টি নিয়ে তাকাল। হোটেল থেকে বেরিয়ে ওরা যখনই আবার ফিরে আসে প্রতিবারই কোনো না কোনো কাহিনি হয়, আর ওদের চেহারা আর পোশাকেও সেটার ছাপ পড়ে।
‘আমরা তো এখানে কালার হয়ে গেলাম। মিনমিন করে বলল রেমি। ‘এরপর তুমি যদি বাইরে কোথাও যাও, আমি আর যাচ্ছি না।’
স্যাম স্টাফের দিকে তাকিয়ে হাসি দিল। রেমিকে চুপিচুপি বলল, ‘পরেরবার যখন আমি বাইরে যেতে চাইব, তখন তুমি আমার মাথায় ইট দিয়ে বাড়ি মেরে থামিয়ে দিয়ো!
.
১৪.
স্যাম সেলমার সাথে ফোনে কথা বলছে। সেলমা’র কণ্ঠে উত্তেজনা। কল করেছ দেখে খুব খুশি হয়েছি। তবে তোমার নিশ্চয়ই কোনো অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা আছে। এই এক্ষুনি আমি তোমাকে ফোন করতে যাচ্ছিলামতোমাদের কাজের জন্য খোঁজ-খবর নিয়ে যা যা পেয়েছি সেগুলো পাঠাতে চাই। তবে তার আগে একটু বর্ণনা দেব।’