যাচ্ছি।
নদীর স্রোতের অনেক আওয়াজ। রেমির জবাবটা স্যাম কোনমতে শুনতে পেল।
সামনের নদীর গতিপথ সরু হয়ে যাওয়ার ফলে স্রোতের গতি বেড়ে গেছে। ফলে ওরাও এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। নদীর এই অংশের দু’পাশে অনেক ধারালো পাথর আছে। বিপদ হতে পারে ভেবে স্যাম রেমিকে নিয়ে আবার পাড়ের দিকে এগোতে শুরু করল। পাড়ে পৌঁছে ফুসফুস ভরে শ্বাস নিল ওরা। পানিতে সাঁতরে হাঁপিয়ে উঠেছে।
আরও গুলির শব্দ শোনার জন্য কান খাড়া রাখল স্যাম। ঘটনাস্থল থেকে এখন কয়েক শ ফুটে দূরে আছে ওরা। আক্রমণকারীদের হাতে যদি পিস্তল থাকে তাহলে সেটার রেঞ্জ এতদূর আসবে না। সেক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু যদি স্কোপঅলা রাইফেল থাকে তাহলে ওরা এখনও বিপদমুক্ত নয়।
‘অথচ এরআগে শুনেছিলাম এই দ্বীপে নাকি কোনো অস্ত্র, বন্দুক নেই। ফিসফিস করে বলল রেমি।
‘আসলে অস্ত্র-আইন শুধু সেইসব নাগরিকদের জন্য যারা আইন মেনে চলে। আমাদেরকে যে-বা যারা আক্রমণ করেছে তারা সেই সভ্য নাগরিকদের কাতারে নেই বলে ধরে নিচ্ছি।’
নদীর বাঁকে কারও নড়াচড়া দেখল ওরা। মাথা নিচু করল ফারগো দম্পতি। দু’জন স্থানীয় লোককে দেখা যাচ্ছে। একজনের হাতে রিভলবার। এখান থেকে প্রায় ৩০০ ফুটে দূরে তারা। এখনও স্যাম ও রেমি দেখতে পায়নি।
স্যাম স্ত্রীকে ফিসফিস করে বলল, ‘পাশের ঝোপে চলল। ওপাশ থেকে ওরা দেখতে পাবে না।
ঝোঁপের ভেতরে আড়াল নিল ওরা। দেখল লোক দু’জন নদীর পাড় ধরে ধীরে ধীরে দক্ষিণ দিকে চলে যাচ্ছে। স্যাম আর রেমি নদীর দু’পাশেই কড়া নজর রাখছে। কোন পাশে কে ওঁত পেতে আছে বলা যায় না। আক্রমণকারী দু’জন আরও কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে ফিরে গেল। ওরা দৃষ্টিসীমার বাইরে যাওয়ার পর হাঁপ ছাড়ল রেমি। তবে স্যাম ও রেমি কেউ-ই আড়াল থেকে বেরোল না। হয়তো লোক দুটো ব্যাকআপ আনতে গেছে। একটু পর আবার হাজির হবে।
১০ মিনিট অপেক্ষা করল ওরা। কোনো শব্দ শোনার কান টান করে রেখেছে। কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই শুনতে পেল না।
মনে হচ্ছে ওরা চলে গেছে। রেমি ফিসফিস করে বলল।
‘ঠিক। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো এই “ওরা” টা কারা?
হয়তো খনির সাথে জড়িত কেউ হবে। কিংবা বেসামরিক লোক। ম্যানচেস্টার হয়তো এদের কথা বলেই আমাদেরকে সতর্ক করেছিল।
‘হতে পারে। কিন্তু সে তো বলেছিল ওরা নাকি দ্বীপের মাঝখানে থাকে, গুহার ওদিকে।
রেমি নদীর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। বুঝতে পারছি না। আমাদেরকে কেউ কেন রাস্তা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চাচ্ছে কিংবা গুলি করে মারতে চাচ্ছে। তারা মিলিশিয়া কিংবা বেসামরিক লোক… যা-ই হোক না কেন… আমরা তাদের কী ক্ষতি করেছি?
চমৎকার প্রশ্ন করেছ।
‘আমরা ২-১ জন বয়স্ক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রচলিত লোককাহিনি শুনতে চেয়েছি, ব্যস।
‘জায়ান্টের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম আমরা। সেটা ভুলে যেয়ো না। নদীর বাঁকের সর্বশেষ যে স্থানে লোক দুটোকে দেখা গিয়েছিল সেদিকে তাকাল স্যাম। দেখে নিল ভাল করে। মনে হয় কেউ নেই। নিজের ভেজা কাপড়ের দিকে তাকাল। এখানকার আবহাওয়াকে এখন “ভাল” বলতে ইচ্ছে করছে। যা গরম, এই ভেজা পোশাক কয়েক মিনিটের মধ্যে শুকিয়ে যাবে।
‘তা ঠিক। কিন্তু এখান থেকে মেইন রোড তো প্রায় ৬-৭ মাইল দূরে। সে-খেয়াল আছে?
‘আছে, আছে। পায়ে হেঁটে যাওয়াটাই বোধহয় নিরাপদ হবে, কী বলো? নদী সাঁতরে তো যাওয়া ঠিক হবে না। কে যেন বলল, এখানকার অধিকাংশ নদীতেই নাকি কুমীর আছে।’
‘আবার নেগেটিভ চিন্তা?”
‘ওহ, দুঃখিত। এখানকার কোনো নদী-ই কুমীরবিহীন নয়।
হাসল রেমি। এবার কথাটা একটু কম নেগেটিভ শোনাল। দাঁড়াতে গিয়ে টলে উঠল ও। ঘাড় কাত করল।
‘জোরে লেগেছে কোথাও?’
একটু লেগেছে। যারা গাড়ির এয়ার ব্যাগ আর সিট বেল্ট আবিষ্কার করেছিল খোদা তাদেরকে শান্তি দান করুক।’
পেছনে দুমড়ে যাওয়া গাড়ির দিকে তাকাল স্যাম। কপাল ভাল, আমি অতিরিক্ত ইস্যুরেন্স করিয়েছিলাম। আশা করা যায়, ওটা দিয়ে ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।
হয়তো। রেমি নিজের গালে হাত দিল। ফুলে গেছে।
‘এখান থেকে ফেরার দুটো রাস্তা আছে। এক- নদী। দুই- রোড। কোনদিক দিয়ে এগোলে ভাল হবে? অস্ত্রধারীদের মোকাবেলা করে রোড দিয়ে যাবে? নাকি নদীতে নেমে ২০ ফুট কুমীরের সাথে লড়বে? প্রশ্ন করল স্যাম।
তৃতীয় কেন উপায় নেই?
তিক্ত হাসি দিয়ে স্যাম মাথা নাড়ল। নেই।
বয়ে যাওয়া নদীর দিকে তাকাল রেমি। আমি যদি আক্রমণকারী হতাম তাহলে যেখান থেকে আমরা গায়েব হয়েছি ঠিক ওখান থেকে এপর্যন্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজে চষে ফেলতাম। ওরাও অনেকটা সেরকম-ই করেছে।
‘ঠিক বলেছ। একটু পরে স্রোত কমে এলে নদীর গভীরতাও কমবে। আমরা তখন নদী পার হয়ে কোনো রাস্তা খুঁজতে পারব।’ বলল স্যাম।
‘পথ তুমি দেখাবে। আর হ্যাঁ, কুমীরের কথা আবার ভুয়ে যেয়ো না।’
“থ্যাঙ্কস। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম!’
ধীরে ধীরে নদী পার হতে শুরু করল ওরা। নদীর পানি একদম পরিষ্কার। কোমর পর্যন্ত পানিতে নেমেও ওরা পা দেখতে পাচ্ছে।
ওপারে পৌঁছে ভেঁজা কাপড় শুকানোর জন্য অপেক্ষা করল ফারগো দম্পতি। তারপর ১৫ মিনিট হেঁটে সৈকতে ফেরার রাস্তায় পৌঁছুল ওরা। দুই ঘণ্টা পর একটা পিকআপ-এর দেখা মিলল। পিকআপটা হাফ লোডেড়। ড্রাইভার রাস্তার মাঝখানে দু’জন আমেরিকানকে দেখেও কোনো অবাক হলো না। কারণ দ্বীপে হরহামেশাই বিদেশি পর্যটকরা আসে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। ফারগো দম্পতি পিকআপের পেছনে উঠে লিফট নিল।