‘ধরা পড়লে এই ব্যাখ্যাগুলো পুলিশকে দিয়ো।’
‘এই অজো পাড়াগাঁয়ে পুলিশ আসবে বলে মনে হয় না।
‘তোমার কাছে এটাকে ভাল বলে মনে হচ্ছে?
স্যাম কোনো জবাব না দিয়ে নিশানটাকে একদম মূল প্রসেসিং প্ল্যানের কাছে নিয়ে গেল। এখানে অনেকগুলো পরিত্যাক্ত ট্রাক রয়েছে।
‘কেউ-ই নেই এখানে? বিষয়টা রহস্যজনক লাগছে না?’ বলল স্যাম। ওর কণ্ঠস্বর নিচু। গাড়ি থেকে নামবে নাকি এগোব?’
‘এগোও।’
প্ল্যানের শেষ মাথায় পৌঁছুনোর পর গাড়ি থেকে নেমে চারপাশ দেখতে রাজি হলো রেমি। গাড়ি থেমে নামমাত্র ওদের উপর উত্তপ্ত গরম বাতাস হামলে পড়ল।
রেমি স্যামের দিকে ফিরল। দেখে মনে হচ্ছে, পাহাড়ের চূড়া কেটে এই খনি বানানো হয়েছে। আমি এরআগে কোথাও এরকম দৃশ্য দেখিনি। কাজটা করে এখানকার প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হয়েছে।
চারপাশ ঘুরে এসে পরিত্যাক্ত ট্রাকগুলোর কাছে এসে দাঁড়াল ওরা! ওদের গাড়িটা এখানেই পার্ক করে রাখা আছে। গাড়িতে উঠল ফারগো দম্পতি।
রেমি বলল, এখানে এসে কীরকম দৃশ্য দেখতে পারি সেটা আগেভাগে মনে ঠিক করে রাখিনি ঠিকই… কিন্তু যা দেখলাম… এসব আশা করিনি।’
শহরের দিকে রওনা হলো ওরা। গাড়ির এসি’র ঠাণ্ডা বাতাসের পরশ পেয়ে রেমি চোখ বুজল। কিন্তু স্যাম ওকে আরাম করতে দিল না।
আমাদের সাথে সঙ্গী জুটেছে।
সোজা হয়ে উঠে বসল রেমি। চোখ মেলল। তো?’
‘সে আমাদেরকে তাড়া দিচ্ছে না, আবার পাশ কাটিয়ে চলেও যাচ্ছে না।’
প্যাসেঞ্জার সাইডের আয়না দিয়ে পেছনের ট্রাকটাকে দেখল রেমি। একটু আস্তে চালাও। ট্রাকটাকে যেতে দেই। আমাদের কোনো তাড়া নেই।’
নিশানের গতি কমাল স্যাম। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে হাত বের করে ট্রাককে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সিগন্যাল দিল। ট্রাকের সামনের অংশ এসে ওদের গাড়ির পেছনে ধাক্কা মারার ঠিক আগমুহূর্তে ট্রাকের বিশাল ইঞ্জিনের গর্জন শুনতে পেল ওরা। গ্যাস প্যাডেল ঠেসে ধরল স্যাম। গাড়ির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করল।
‘শক্ত করে ধরে থাকো।’ রিয়ারভিউ মিরর দিয়ে পেছনের ট্রাকটাকে দেখল ও। যদিও গাড়ির পেছনের কাঁচ কাদায় প্রায় ঢাকা পড়ে গেছে, ট্রাকের অবয়ব দেখা যাচ্ছে তবুও। এবার সামনের রাস্তার দিকে মনোযোগ দিল স্যাম। স্পিডোমিটারের উপর চোখ বুলাল। ওর একটাই ইচ্ছা, এই নিশান গাড়িকে যত বেশি সম্ভব গতিতে তুলে তীক্ষ্ণ বাকগুলো পার হবে।
ওদিকে ট্রাকের গতিও বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে, ট্রাকটা বোধহয় ওদের সামনে যেতে চায়। কিন্তু স্যাম সেটা হতে দিল না। স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে ট্রাকের সামনে এগোনোর জায়গাটুকু নিশান দিয়ে ব্লক করে দিল। সেই সাথে গতি বজায় রাখার জন্য গ্যাড প্যাডেলেও চাপ দিয়ে রেখেছে। মনে মনে আশা করল, ওদের ছোট গাড়িটা দানবাকৃতির ট্রাকের সাথে গতির দৌড়ে এগিয়ে থাকবে।
বিভিন্ন বাঁক পেরিয়ে এসে সামনে সোজা রাস্তার দেখা পেল স্যাম। নিশানের গতি সর্বোচ্চতে তুলতে কোনো কার্পণ্য করল না। ওর দেখাদেখি ট্রাকের বিশাল ইঞ্জিনও তার গতি বাড়িয়ে দিল। নিশান আর ট্রাকের মধ্যেকার দূরত্ব কমে যাচ্ছে।
হঠাৎ সামনে একটা তীক্ষ্ণ বাঁক হাজির হওয়ায় বেকে পা দিল স্যাম। নিশান ব্রেক চেপে গতি কমালেও পেছনের ট্রাক তার গতি কমাল না। সজোরে এসে আঘাত করল নিশানের পেছনের অংশে। ট্রাকের বেমক্কা ধাক্কা খেয়ে নিশান নিয়ন্ত্রণ হারাল। স্যাম গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার জন্য স্টিয়ারিং হুইল নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করছে। ট্রাক আরেকটা ধাক্কা দিতেই দুই পা গাড়ির ড্যাশবোর্ডে সাথে চেপে ধরে সিটের সাথে নিজেকে আটকে রাখার চেষ্টা করল রেমি। এবারের ধাক্কাটা নিশান আর কোনোভাবেই হজম করতে পারল না। ডিগবাজি খেয়ে পাহাড়ী রাস্তা থেকে ছিটকে চলে গেল নদীর দিকে।
.
১৩.
গাড়ির আঘাতপ্রাপ্ত হুড থেকে হিস হিস শব্দে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। শরীর থেকে সিট বেল্ট খুলতে স্যামকে বেশ কসরত করতে হলো। ওদের নিশান নদীতে আছড়ে পড়েছে। ভাঙ্গা জানালা দিয়ে পানি ঢুকছে ভেতরে। রেমিও নিজের সিট বেল্ট খুলে ফেলল। গাড়ির ভেতরে অনবরত পানি ঢুকছে। ডুবে যাচ্ছে ওরা।
তুমি ঠিক আছো? বিস্ফোরিত এয়ার ব্যাগকে একপাশে সরিয়ে স্ত্রীকে প্রশ্ন করল স্যাম।
রেমি মাথা নাড়ল। একটু ব্যথা পেয়েছি।’
নিজের হাত-পায়ের দিকে তাকাল স্যাম। প্রায় তলিয়ে যাওয়া গাড়ির কেবিনে চোখ বুলাল। কীভাবে বের হতে চাও?
‘আমার জানালা দিয়ে বের হব।’
‘ওকে।’
আর একটু পরেই গাড়ির পুরোটা পানিতে তলিয়ে যাবে। জানালায় বেশ খানিকটা ফাঁকা অংশ আছে। সেই অংশ দিয়ে প্রথমে বাইরে বেরোল রেমি। তারপর স্যাম বের হলো। রেমি গাড়ি থেকে বের হলেও গাড়ির ঠিক পাশেই অপেক্ষা করছে। হঠাৎ একটা গুলি এসে নদীর পানিতে মুখ গুজল। গুলি করার আওয়াজটাও শুনতে পেল ওরা। রাস্তার ওদিক থেকে গুলি করা হয়েছে। গাড়ি থেকে সরে নদীর গভীরে গেল ফারগো দম্পতি। এবার আরেকটা গুলি এসে গাড়ির ছাদ ফুটো করল। নদীর স্রোত ওদের দুজনকে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই নদীর গভীরতা মাত্র ৬ ফুট কিন্তু বৃষ্টির পানিতে এখন গভীরতা বেড়েছে।
‘মাথা নিচু করে যতদূর সম্ভব পাড় থেকে দূরে সরে যাও। আড়াল নাও, জলদি! রেমিকে উদ্দেশ্য করে বলল স্যাম।