স্যামের কানের কাছে মাথা নিল রেমি। শুনতে পেয়েছ?
না তো৷ কী?
রুবো অন্যদিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে। ফারগো দম্পতির দিকে খেয়াল নেই তার।
‘রাস্তার ওদিকে ইঞ্জিনের আওয়াজ পেলাম মনে হলো।
স্যাম মাথা নাড়ল। আমি শুনতে পাইনি।’ রুবোর দিকে ফিরল ও। ‘রাজার কাহিনিটা কী সবাই জানে? খুব পরিচিত কাহিনি এটা?
মাথা নাড়ল বৃদ্ধ। আগের দিনের গল্প এহন কেউ আর করে-টরে না।’
হঠাৎ নদীর ওদিক থেকে ডাল ভাঙ্গার আওয়াজ এলো। ঝট করে রেমি তাকাল ওদিকে। স্যাম ও রেমি ঝোঁপের দিকে তাকিয়ে শব্দের উৎস খুঁজল কিন্তু কিছুই পেল না। আরও শব্দ শোনার জন্য কান খাড়া করে রইল ওরা। কিন্তু সব একদম চুপচাপ। প্রাকৃতিক কিছু আওয়াজ ছাড়া অস্বাভাবিক কোনো আওয়াজ শোনা গেল না। রুবো’র হাবভাব দেখে মনে হলো তিনি কোনো শব্দ শুনতে পাননি। কয়েক মিনিট পরও যখন আর কোনো শব্দ পাওয়া গেল না তখন ফারগো দম্পতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
তলিয়ে যাওয়া শহরের ব্যাপারে বৃদ্ধ লোকটিকে আরও কিছু প্রশ্ন করল রেমি। কিন্তু নতুন কিছু জানা গেল না। অবশেষে রেমি আর স্যাম যখন ওখান থেকে উঠল বৃদ্ধ তখনও নির্বিকার। সে উঠে দাঁড়াল না কিংবা ওদেরকে কিছু বললও না।
কিছু না বললে খারাপ দেখায়। তাই রেমি মুখ খুলল। “ঠিক আছে, রুবো। দ্বীপের ইতিহাস জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি।’
নিজের পায়ের দিকে লজ্জাবনত মুখে তাকিয়ে রইল রুবো। ম্যালা দিন পর নতুন মানুষ গো লগে কতা কইলাম। আমারও ভালা লাগছে।’
ভাড়া করা নিশান গাড়ির দিকে ফিরল ওরা। গাড়ির দরজা খুলতেই ভেতরের ঠাণ্ডা বাতাস ওদের গায়ে এসে স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিল। গাড়ির ইঞ্জিন এসিকে চালু রেখেছিল এতক্ষণ। সিটবেল্ট বেঁধে স্যামের দিকে তাকাল রেমি। কী বুঝলে?
‘আরেকটা ধাঁধা পেলাম। যতদূর বুঝতে পারছি, প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে রাজার সেই নিমার্ণশৈলী পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। আর সে দূর্যোগকে ইনি দেবতাদের রাগ হিসেবে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। অভিশাপের কারণটা বুঝতে পারলাম এখন। ঘটনা বিস্তারিত মানুষের মনে না থাকলেও লোককাহিনির মূল অংশটুকু ঠিকই মনে আছে।
‘এসব তথ্য জানতে পারলে লিও বেশ খুশি-ই হবে।
‘তুমি হয়তো খেয়াল করোনি। লিও কোনোকিছুতে সহজে খুশি হয় না। কখনই না।’
কুঁড়েঘরের দিকে তাকাল রেমি। রুবোকে দেখে মনে হলো, তার বয়স প্রায় ১০০ বছর।
‘হ্যাঁ। যুদ্ধের সময় যদি সে মিত্রবাহিনিকে সাহায্য করে থাকে তাহলে তো ওরকম বয়স হতেই পারে।’
তবে জাপানি কর্নেলের গবেষণার বিষয়টা কীরকম গা ছমছমে একটা ব্যাপার। আমার বিশ্বাস হতে চাইছে না, এরকম একটা ঘটনার কথা ইতিহাসে লেখা নেই?!
‘এই দ্বীপটা অনেক ছোট। ইতিহাসে অনেক ছোট ছোট বিষয় সেভাবে উল্লেখ নেই।’
‘হুম।
‘খেয়াল করেছ? তোমার সৌন্দর্যের ধার রুবোকেও জখম করেছে! বেচারার যা প্রতিক্রিয়া দেখলাম! মুচকি হেসে গিয়ার বদল করল স্যাম। ‘এখন কোথায় যাবে? সোনার খনি দেখবে নাকি শহরে ফিরবে?’
‘বের হয়েছি যখন, তাহলে খনিটা দেখেই যাই। অভিযোগ করছি না, জাস্ট বলছি… এরকম রাস্তা দিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার চেয়ে হোটেলের রুমে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকাটা অনেক আরামদায়ক।
বুঝলাম। তাহলে সোনার খনিতে যাচ্ছি আমরা?
হুম, চলো।
***
গ্রাম্য রাস্তা পেরিয়ে পাকা রাস্তায় উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ওরা। গ্রামের জঘন্য রাস্তা পেয়োনোর সময়টুকু ওদের কাছে অনেক দীর্ঘ বলে মনে হয়েছে। পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে চলার সময় বারবার গাড়ির আয়না দিয়ে পেছনে চোখ রাখল স্যাম।
‘এখানে শুধু আমরাই ড্রাইভ করছি না। আরও কেউ আছে বলল ও।
‘আমার মনে হচ্ছে এই গাড়ির আওয়াজ আমি রুবো’র বাসায় শুনেছিলাম। শহরের বাইরে এসে আমার গাড়ি বাদে এই প্রথম কোনো যানবাহনের দেখা পেলাম আমরা।
‘একদিক দিয়ে বিষয়টা স্বস্তির। আমাদের গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে সাহায্যের জন্য ২০ মাইল দূরে যেতে হবে না।’
‘তুমি একরম বাজে চিন্তা-ভাবনা করো কেন?
“ওহ, দুঃখিত। কী বলব, মনে চিন্তা চলে আসে।
একটা উপহ্রদকে পাশ কাটাল ওরা। হ্রদের সাথে ছোট্ট একটা গ্রাম ছিল। তারপর পরিত্যাক্ত কুঁড়েঘরঅলা এক শহরে এসে পৌঁছুল ওরা।
ভূতুড়ে শহর?’ প্রশ্ন করল রেমি।
হুম, খনি বন্ধ। তাই এই অবস্থা। এখানে থাকার জন্য অন্য কোনো জীবিকার উৎস নেই বলে মনে হচ্ছে।
.
দক্ষিণ দিকে এগোল ওরা। পাহাড়ের একপাশের চূড়োয় পৌঁছে সামনে তাকিয়ে একটা দৃশ্য দেখতে পেল। মনে হলো, বিশাল কোনো হাতের সাহায্যে পাহাড়ের চুডোর জঙ্গলকে কেটে ন্যাড়া বানিয়ে দিয়েছে। একটা ভাঙ্গা সিকিউরিটি গেইট দেখা যাচ্ছে এখানে। গেইটের পেছনে থাকা ভবন একদম খালি। ভবনের কাঁচগুলো ভাঙ্গা।
‘কী বুঝতে পারছ, স্যাম? রেমি প্রশ্ন করল।
‘বুঝতে পারছি, এখানে আমরাই প্রথম পর্যটক নই। এরআগেও কেউ এসেছিল।
‘কিন্তু এটা তো ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এখানে এভাবে গেইট ভেঙ্গে অনুপ্রবেশ করাটা কেমন কাজ হলো?’
‘হয়তো খনি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গেইটটা কেউ ভেঙ্গেছে। কিন্তু কেন ভেঙ্গেছে সেটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। আমাদের ওসব নিয়ে দুশ্চিন্তা না করলেও হবে। আমরা গেইট ভাঙ্গিনি, কাঁচও ভাঙ্গিনি। কিছু চুরিও করতে আসিনি এখানে।