রুবো মাথা নাড়ল। হইবার পারে। অনেক গল্প জানি আমি।
‘অভিশাপ সম্পর্কিত গল্প শুনতে চাই। কিংবা কোনো তলিয়ে যাওয়া শহরের গল্প।
রুবো’র চোখ সরু হয়ে গেল। ডুইবা যাওয়া শহর? অভিশাপ।
মাথা নেড়ে সায় দিল স্যাম। দ্বীপের ওইপাশের সৈকত নাকি অভিশপ্ত?
‘আপনে শহর নিয়া প্রশ্ন করলেন ক্যান?
‘দ্বীপে কে যেন অনুসন্ধান চালাচ্ছে। লোকমুখে শুনলাম সে নাকি পানির নিচে ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে।
দূরে তাকাল রুবো। দূরে নদীর বাদামী পানি বয়ে যাচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে স্যামের দিকে ফিরল সে। চেহারা কঠিন।
‘পুরাইন্না গল্প। এক রাজা আছিল। দেবতাগো রাগায়া দিছিল সেই রাজা। সাগরের মইধ্যে মন্দির বানাইছিল। কিন্তু বড় বড় ঢেউ আইয়া সব ডুবাইয়া দিছে। তারপর থেইক্যা ওই জায়গা অভিশপ্ত।
কবেকার ঘটনা এটা?
হাড্ডিসার কাঁধ ঝাঁকাল বৃদ্ধ। বহুত পুরাইন্ন্যা কাহিনি। সাদা চামড়ার লোকগুলান তহনও এইহানে আহে নাই।
স্যাম আরও কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করল। কিন্তু রুবো বিস্তারিত কিছু জানাতে পারল না। আধামিনিট চুপচাপ থাকার পর হাসার চেষ্টা করল স্যাম। এতটুকুই?
মাথা নাড়ল রুবো। শুকনো আঙুল তাক করল গাড়ির দিকে। ওইডা ক্যাডা?
“ওহ, দুঃখিত। বলা হয়নি। ও আমার স্ত্রী। ইশারা করে রেমিকে এদিকে আসতে বলল স্যাম। রেমি গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে এলো।
একদম কাছে না আসা পর্যন্ত রেমি’র দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বৃদ্ধ।
‘রেমি, ইনি হচ্ছেন, রুবো। আমাকে একটা লোককাহিনি শুনাচ্ছিলেন। এক রাজা সমুদ্রে মন্দির বানিয়েছিল কিন্তু তারপর সেটা তলিয়ে যায়। দেবতারা ক্ষীপ্ত হয়েছিল রাজার উপর।
‘আপনার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল। বলল রেমি। বৃদ্ধকে মিষ্টি হাসি উপহার দিল ও। দুর্বল শরীর নিয়ে রুবো উঠে দাঁড়াল। রেমির একটা হাত টেনে নিয়ে হ্যান্ডশেক করল সে। স্যাম কিছু বলল না। হাজার হোক, সব নিয়মেরই ব্যতিক্রম থাকে।
বইসো, রেমিকে বলল রুবো। রেমি তাকে আরেকটা হাসি উপহার দিল। স্যামের পাশে বসল রেমি। স্যাম গলা খাকরি দিল।
‘আমাদের ধ্বংসাবশেষের কথাই বলছেন উনি, তাই না?
‘হ্যাঁ। রুবো পুরো গল্পটা জানেন। বিষয়টা দারুণ।
রুবো মুখ খুলল। আমি অনেক গল্প জানি।
‘অবশ্যই জানেন। আর আপনার ইংরেজি যথেষ্ট ভাল। এরকম ইংরেজি কীভাবে শিখেছেন?
‘যুদ্দের সময় আমি আংকেল স্যাম-রে সাহায্য করছিলাম। তহন শিখছি।’
‘তাই? তখন অনেক কঠিন সময় গেছে, তাই না?’ বলল রেমি।
রুবো মাথা নাড়ল। কঠিন দিন আছিল তহন। বহুত লোক মইরা গেছিল। জাপানি গো আমি ঘেন্না করি।
দ্বীপের ক্ষতি করেছিল জাপানিরা?’
কয়েকড়া জাপানি করছিল। তার মইদ্যে একজন আছিল চরম খারাপ। কর্নেল।
কী করেছিল সে?’ স্যাম জানতে চাইল।
‘খারাপ কাম করছিল। আমাগোর বহুত লোক মারছিল কর্নেল। লুকায়া লুকায়া গুবেষণা করত।
একটু কাছে এগিয়ে এলো রেমি? কী? গবেষণা?’
রুবো অন্যদিকে তাকাল। মেড।
‘মেড? মানে, মেডিক্যাল?
মাথা নাড়ল রুবো। হ। সাদা চামড়ার লোক লইয়্যা গুবেষণা করত। তয় হেই লোকগুলান আমেরিকান আছিল না।’
স্যাম রেমির দিকে তাকাল। শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে এখানে গবেষণা করত জাপানিরা। কিন্তু কোন জাতির শ্বেতাঙ্গ ছিল তারা? আন্দাজ করতে পারো?
রুবোর দিকে ফিরল ফারগো দম্পতি। আচ্ছা, এই ঘটনা আমরা এরআগে কখনও শুনতে পাইনি। কেন?
রুবো শ্রাগ করল। কইবার পারি না। কেউ হয়তো বিষয়ডা ঘারায় নাই।
তাহলে আপনি বলছেন জাপানিরা এখানে যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত ছিল? কিন্তু বিষয়টা এভাবে চাপা থাকতে পারে, সেটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।’ বলল রেমি।
রুবো শূন্য দৃষ্টিতে রেমি’র দিকে তাকাল। চাপা? চাপা মারার কথা কইতাছেন নাকি? বুঝবার পারলাম না।
‘দুঃখিত। “চাপা” বলতে আমি ঘটনা চাপা পড়ে থাকার কথা বলেছি। আপনি চাপা মারছেন সেটা বলিনি।
‘রাজার কাহিনিতে আসি। আপনি আমাদেরকে পুরো গল্পটা শোনাতে পারেন?’ স্যাম উৎসাহ দিল।
শ্রাগ করল রুবো। কইলাম না, বহুত পুরাইন্ন্যা কাহিনি। বেশি কিছু কওয়ার নাই। রাজা মন্দির বানাইছিল। দেবতারা খেইপা গিয়া মন্দির ডুবায়া দিছে। তারপর থেইক্যা জায়গা অভিশপ্ত। কেউ আর ওইদিকে যাইবার চায় না।
‘শেষ?
হ।
স্যাম দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর জায়ান্ট? জায়ান্টদের নিয়ে কোনো লোককাহিনি নেই?
রুবোর চোখ বড় বড় হয়ে গেল। জায়ান্ট সত্য সত্যই আছে। আগে বহুত আছিল। এহন একটু কমছে। তয় আছে।
‘আপনি কীভাবে জানেন? দেখেছেন কখনও?
না দেহি নাই। তয় আমি এরাম বহুত লোকরে চিনি। হ্যারা দেখছে।
‘নিজের চোখে না দেখে এভাবে বিশ্বাস করাটা অদ্ভুত না? বিষয়টা তো ভূত দেখার মতো হয়ে গেল। অনেক মানুষ বিশ্বাস করে, ভূত আছে। কিন্তু…’ রুবোর চেহারার অভিব্যক্তি দেখে স্যাম থেমে গেল।
‘ভূতরা সত্য সত্যই আছে।’
‘তাহলে আমি বিশ্বাস করেন বাস্তবে গুহায় জায়ান্টরা বাস করে?’ বলল রেমি।
‘আমি কহনও যাই নাই। গুহায় বদ আত্মা থাকে। জাপানি অফিসারগুলান ওই জায়গায় শুবেষণা করত। বহুত ভূত আছে ওইহানে। সবগুলান খেপা। জায়ান্টও আছে। গুহা ভালা না।’
স্ত্রীর সাথে দৃষ্টি বিনিময় করল স্যাম। রুবো গুহা, জাপানি; দুটোর একটাকেও পছন্দ করে না। আর সে রাজার গল্পটাও বিস্তারিত জানে না, তাই বিরক্ত হচ্ছে।