‘তাহলে তো গুহার ওদিকে ঘুরতে যাওয়াটা সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ? স্যাম প্রশ্ন করল।
মাথা নাড়ল ভ্যানা। যদিও সেটা জায়ান্টের জন্য নয়। কিন্তু যা-ই আক্রমণ করুক না কেন। যদি জীবন-ই না বাঁচে তাহলে জায়ান্ট হলেই কী আর জঙ্গি হলেই কী? কোনো পার্থক্য আছে, বলুন?
স্যামের দিকে তাকাল রেমি। ওনার কথায় যুক্তি আছে কিন্তু।
‘তা ঠিক। আচ্ছা, ডা. আপনাকে ধন্যবাদ বেনজি’র সাথে আমাদের দেখা করিয়ে দেয়ার জন্য। ভ্যানাকে বলল স্যাম। বেচারার সাথে যে দূর্ঘটনা ঘটে গেছে সেটা খুবই বেদনাদায়ক।
হুম, সতর্ক থাকবেন যাতে ওরকম ঘটনা আপনাদের সাথে না ঘটে। এই দ্বীপ বেশ বুনো প্রকৃতির। কুমীর ছাড়াও আরও অনেক জানোয়ার আছে এখানে।
‘মনে থাকবে। সতর্ক করে দেয়ার জন্য আবারও ধন্যবাদ।
পার্কিং লটে রাখা নিশান গাড়ির দিকে এগোল ওরা। সূর্য ইতিমধ্যে খুব নিষ্ঠার সাথে তার প্রচণ্ড তাপ বিকিরণ করতে শুরু করে দিয়েছে। পুবদিকে রওনা হলো ফারগো দম্পতি। গতকাল যে রাস্তায় গিয়ে বৃষ্টির পানির কারণে ফিরে যেতে হয়েছিল আজ সেখানে পানি নেই তবে পুরো রাস্তা কাদায় মাখামাখি হয়ে আছে।
গাড়িকে ফোর-হুঁইল ড্রাইভ অপশনে নিলো স্যাম। ঝাঁকির সাথে ব্যাপক দুলুনি খেয়ে ওদের নিশান এগিয়ে চলল। মনে হলো ওরা গাড়িতে নয় কোন থিম পার্কের রাইডে চড়েছে। রাস্তার দু’পাশে জঙ্গল থাকায় অনেকখানি সূর্যের আলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এখন।
‘এত ঝক্কির রাস্তা পাড়ি দিয়ে যাচ্ছি অথচ রুববা বেঁচে আছে কিনা সেটাই জানি না আমরা।’ রেমি বলল।
‘বাঁচা-মরার কোনো ঠিক-ঠিকানা আছে, বলো? তুমি কেন এসব ভাবছ? তোমার অ্যাডভেঞ্চারধর্মী চিন্তাধারার কী হয়েছে? অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে চিন্তা করলেও তো পারো।
‘অ্যাডভেঞ্চারসহ অন্যান্য সুন্দর অনুভূতিগুলোকে আমি এক মাইল পেছনে রেখে এসেছি।’
খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা।’
হু, ঝাঁকির দমকে সকালের নাস্তা বোধহয় হজমই হয়ে গেল।
আধাঘণ্টা পর তীক্ষ্ণ বাঁক পেরিয়ে একটা লম্বা বটগাছের দেখা পেল ওরা। বটগাছের নিচে গ্রাম্য ধাঁচের একটা কুঁড়েঘর দেখা যাচ্ছে। পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে, এখানে বিদ্যুৎ কিংবা টেলিফোনের লাইন কোনটাই নেই। গাড়ি থামতেই স্যামের দিকে তাকাল রেমি।
‘হাহ। আর তুমি বলো হোটেলটা ফালতু, তাই না। তাহলে এটা কী?
‘জীবনে যে আর কত চমক দেখতে হবে কে জানে।
“দেখো কাউকে পাওয়া যায় কিনা।
হুম, দেখছি।’
‘আমি বরং গাড়িতেই থাকি। বাইরে তো খুব গরম। গরমে যদি তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে আমি সাহায্য করব। দু’জন একসাথে অসুস্থ হওয়ার কী দরকার?
‘বাহ! তুমি আমার কত যত্ন নাও! তুমি অনেক ভাল। অথচ আমি ভেবেছি, এসির বাতাস খাওয়ার জন্য গাড়িতে থাকতে চাইছে…’।
‘একে এসি বলে? গরম বাতাস ছাড়া কী বেরোচ্ছে এসি থেকে, শুনি?
“আচ্ছা, তুমি গাড়িতে থাকো। আমি গিয়ে কথা বলে আসছি। তোমার চোখে কাউকে পড়েছে? কুঁড়েঘরের দিকে বলল স্যাম।
নড়াচড়া দেখতে পেয়েছি বলে মনে হলো। তবে সেটা কুমীরও হতে পারে আবার স্কিঙ্কও হতে পারে। অতএব, সাবধানে যেয়ো।
‘তোমার কথা শুনে… কী বলব… খুব স্বস্তি পেলাম!”
‘তোমাকে স্বস্তি দেয়াটাই তো আমার কাজ!
গাড়ির দরজা খুলে কুঁড়েঘরের দিকে এগোল স্যাম। ঘরের কয়েক ফুট দূরে থাকা অবস্থায় একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো ভেতর থেকে। ভাষাটা স্যাম না বুঝলেও বলার ধরনে ও ঠিকই বুঝেছে ওটা একটা সতর্কবাণী। থেমে দাঁড়াল স্যাম।
‘আমি রুবো’র সাথে দেখা করতে এসেছি। ধীরে ধীরে বলল ও। রু বো,’ স্যাম নামটা আবার উচ্চারণ করল। আপনি ইংরেজি জানেন?
নিশানের ইঞ্জিন চালু করা রয়েছে। ইঞ্জিনের মৃদু গুঞ্জন ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। সব চুপচাপ।
কুঁড়েঘরের দরজায় একটা অবয়ব হাজির হলো। বৃদ্ধ লোক, হালকা পাতলা গড়ন, চামড়া কুঁচকে গেছে। ঘরের ছায়ায় থেকে স্যামকে পর্যবেক্ষণ করল বৃদ্ধ। বলল, আমি অল্প ইংরেজি কইবার পারি! কী চান আপনে?’
‘আমি অরউন ম্যানেচেস্টারের বন্ধু। রুবো’র সাথে দেখা করতে এসেছি।’
‘আমি কানে কম শুনি না। প্রথমে একবার কইছেন, তহনি শুনছি। কী জইন্যে আইছেন সেইটা কন।
কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাস করব। এখানকার লোককাহিনির ব্যাপারে।
ঘরের ছায়া থেকে বের হলো বৃদ্ধ। সন্দেহ নিয়ে স্যামের দিকে তাকাল। ‘প্রশ্ন জিগানোর জইন্যে বহুত দূর চইল্যা আইছেন।
বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।’
বিরক্তি প্রকাশ করে বৃদ্ধ ঘোঁতঘোত করল। আমি রুবো।
‘আমি স্যাম। স্যাম ফারগো।’ হাত মেলালোর জন্য হাস বাড়িয়ে দিলো ও। কিন্তু রুবো হাতের দিকে এমনভাবে তাকালো যেন স্যামের হাতটা খুবই নোংরা। অস্বস্তিবোধ করল স্যাম। ভাবল, হয়তো কোনো স্থানীয় রীতি ভঙ্গ করে ফেলেছে। ওকে অস্বস্তিতে পড়তে দেখে দাঁতবিহীন মাঢ়ি বের করে হাসল বৃদ্ধ।
‘চিন্তার কিছু নাই, বুছছেন? আমার এরাম হাত মিলাননা পছন্দ না। এইডা কোনো রীতি না কিন্তু। খালি আমারই পছন্দ হয় না বিষয়।’ বলল রুবো। বইবেন না?’ ঘরের দেয়ালের পাশে থাকা একটা গাছের গুঁড়ি দেখাল সে। কপাল ভাল গুঁড়িটা ছায়ায় আছে।
ধন্যবাদ।’
বসার পর স্যামের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিল বৃদ্ধ।
‘কী চান বইল্যা ফালান?’
‘পুরানো দিনের কথা জানতে চাই। পুরানো গল্প। অরউন বললেন আপনি অন্য সবার চেয়ে পুরানো গল্প ভাল জানেন।