‘চলো, চেক করে দেখি।’
দরজা খুলে ট্রাক থেকে নামল ওরা। ট্রাকের হেডলাইট জ্বালানো, ইঞ্জিনও চালু। ড্রাইভিং সিটের দিকে এগোল সাইমন। ফাঁকা। “ড্রাইভার নেই” এই কথাটা সঙ্গী আলফ্রেডকে বলতে যাবে ঠিক তখনই পাশের ঝোঁপ থেকে চারটে কালো অবয়ব বেরিয়ে এলো। তাদের হাতে ম্যাচেটি। সন্ধ্যার আধো আলোতেও ওগুলোর ফলা ঝলসে উঠল।
স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াবশত আক্রমণ ঠেকানোর জন্য নিজের হাতকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করল সাইমন। কিন্তু ম্যাচেটির কাছে ওর হাতের রক্ত-মাংস তো কিছুই নয়। ওদিকে ঘাড়ে কোপ খেয়ে আলফ্রেড ইতিমধ্যে ভূপাতিত হয়েছে। বেচারা মরে গেছে সেটা পরিষ্কার বোঝা যাওয়ার পরও আরও কয়েকটা কোপ দিল আততায়ীরা।
মাথার খুলিতে ধারাল কোপ খেয়ে সাইমনের দুনিয়া যেন শব্দ-শূন্য হয়ে গেল। মাটিতে পড়ে গিয়ে ও দেখল ওর খুনি দাঁত বের করে ত্রুর হাসি হাসছে। একটা কণ্ঠ ঝোঁপের ভেতর থেকে হাঁক ছাড়ল।
যথেষ্ট হয়েছে। এখন ট্রাকটাকে রাস্তা থেকে সরা আর লাশ দুটোকে ঝোঁপের ভেতরে লুকিয়ে রাখ, যাতে কেউ এগুলো খুঁজে না পায়। এখানে অনেক জন্তু-জানোয়ার আছে। লাশ দুটোর ব্যবস্থা ওরাই ভাল করতে পারবে।
আততায়ীরা একে অন্যের দিকে তাকাল। ওদের জীর্ণ পোশাকগুলো গরম রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে। ৫ মিনিটের মধ্যে দৃশ্যপট থেকে লাশ সরিয়ে ফেলল ওরা। ঘটনাস্থল পরিষ্কার করে ফেলল। এখানে কোনো খুননাখুনি হয়েছে তার আর কোনো প্রমাণই রইল না।
‘কাজ শেষ। এবার তোরা কেটে পড়। সমুদ্রে গিয়ে নিজেদেরকে পরিষ্কার করে নিবি। পোশাকে, শরীরে আর অস্ত্রে কোথাও যেন রক্ত লেগে না থাকে। আর মনে রাখিস, কাউকে কিছু বলবি না। যদি একটা শব্দও বলেছিস, তাহলে আমি তোদের জিহ্বা কেটে ফেলব।
সবাই লোকটার কথা বিশ্বাস করল। কারণ, ওরা জানে এই লোক যা বলে সেটা করেও দেখায়। মাথা নেড়ে আততায়ীরা ভ্যানে উঠে বসল। চটপট ইঞ্জিন চালু হয়ে রওনা হয়ে গেল গন্তব্যের উদ্দেশে। ঘটনাস্থলে এখন শুরু সেই নির্দেশদাতা একা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে এইমাত্র খুন হয়ে যাওয়া জায়গাটাকে আবার পরীক্ষা করল সে। হাসল। সবকিছু একদম প্ল্যান অনুযায়ী হচ্ছে। এখন একটা কন্টাক পেপার নিয়ে তাতে লিখতে হবে, বিদ্রোহীরা সব বিদেশি কোম্পানীদেরকে দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে বলেছে, নইলে এরকম আরও বিদেশি খুনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
চারপাশের জঙ্গল একদম নিশ্চুপ। তবে নিশাচর প্রাণীরা তাদের আজ রাতের ফ্রি ডিনার খাওয়ার জন্য ঠিকই তৈরি হয়ে নিচ্ছে। ঝোঁপ থেকে প্রায় ৬০ ফুট দূরে একটা কালো এসইউভি-তে চড়ল লোকটা। দু’টো অস্ট্রেলিয়ান লাশ আর ট্রাক ফেলে চলে গেল সে। দ্বীপে আরও দুটো খুন হলো আজ। স্রেফ এখানকার ক্ষমতা দখলের জন্য।
.
১২.
পরদিন সকালে স্যাম ও রেমি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হলো। এবার ডা. ভ্যানা ওদেরকে ঢুকতে দিল হাসপাতালের ভেতরে। বেনজির সাথে দেখা করল ওরা। জীবন বাঁচানোর জন্য বেনজি ফারগো দম্পতিকে অনেক ধন্যবাদ জানাল, যদিও তার ইংরেজি বুঝতে খুব কষ্ট হলো ওদের। বেনজির সাথে ওদের কোনো পূর্ব-পরিচয় না থাকায় বাড়তি কোনো কথা বলার সুযোগ রইল না। তবে বেনজিকে ফারগো দম্পতি নিশ্চিত করল হাসপাতালের যাবতীয় বিল লিওনিড দিয়ে দেবে, সে যেন কোনো দুশ্চিন্তা না করে। কয়েক মিনিট পর ওরা ভ্যানার সাথে বেনজির রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
‘আজকে আপনাদের প্ল্যান কী?’ জানতে চাইল ডাক্তার।
স্থানীয় লোকজনদের আমরা গোয়াডালক্যানেলের লোককাহিনি সম্পর্কে জিজ্ঞাস করব। তারপর খনি দেখতে যেতে পারি।’ বলল রেমি।
‘আচ্ছা। তবে সাবধান থাকবেন। শহরের বাইরে কিন্তু রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। আর জঙ্গলে কী থাকতে পারে না পারে তা তো ইতিমধ্যে শুনেছেন। কুমীর কিন্তু এখানকার অনেকগুলো বিপদের মধ্যে একটা মাত্র। এরকম আরও অনেক বিপদ মানুষের জন্য ওঁত পেতে আছে।’
হ্যাঁ, ম্যানচেস্টার আমাদেরকে জায়ান্টের ব্যাপারেও বলেছেন। স্যাম বলল।
হাসল ভ্যানা। তবে বোঝা গেল হাসিটা মেকি। এখানে বিভিন্ন রকম গল্প প্রচলিত আছে। মানুষজন অনেক কিছুতে বিশ্বাস করে।
এরকম গ্রাম্য বিচ্ছিন্ন জনপদের কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি আর কী আশা করা যায়, বলুন? বলল স্যাম। আমরা ভিন্নধর্মী সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করি তারপরও বিষয়টা যেন কেমন কেমন…
‘আমি সেই ছোট্টবেলা থেকে জায়ান্টের গল্প শুনে আসছি। কিন্তু পাত্তা দেইনি। এই লোককাহিনিগুলোকে আমি ধর্মের মতো মনে করি। বিশ্বাস করলে আছে, না করলে নেই। মানুষ সেটাই ভাবে, যা তারা ভাবতে চায়। ভ্যানা বলল।
কিন্তু তিনি হুটহাট মানুষ গায়েব হওয়ার বিষয়েও বললেন আমাদের। ইদানীং নাকি মানুষ গায়েব হওয়ার পরিমাণ আরও বেড়েছে। জানাল রেমি।
‘গুজব শুনেছি পাহাড়ে নাকি এখনও বেসামরিক বাহিনি আছে। আমার মনে হয় এগুলো তাদের কাজ। জায়ান্ট-টায়ান্ট কিছু না।
বেসামরিক বাহিনি?
‘অস্ট্রেলিয়ান সেনাবাহিনির তরফ থেকে দ্বীপে শান্তি বজায় রাখার জন্য আমর্ড টাস্ক ফোর্স পাঠানো হয়েছিল। স্থানীয় লোকজন তাদেরকে স্বাগত জানালেও কিছু স্থানীয় আছে যারা এটাকে তাদের জন্মভূমিতে বিদেশিদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ বলে মনে করে। দ্বন্দটা এখানেই। এদেরকে বেসামরিক বাহিনি না বলে জঙ্গি বলা ভাল।’