তাই?’ প্রশ্ন করল রেমি।
‘হ্যাঁ। স্প্যানিশরা যখন ষোড়শ শতাব্দীতে এখানে আসে তখন তারা মাটানিকো নদীর মুখে সোনা পেয়েছিল। তাদের নেতার নাম ছিল অ্যালভারো ডি ম্যানডেনা ডি নেই। সেই নেতা তখন ঘোষণা করলেন এই এলাকা থেকেই হয়তো বাইবেলে বর্ণিত রাজা সলোমন তার বিখ্যাত সোনা পেয়েছিলেন। সেই ধারণার উপর ভিত্তি করে নেইরা এই দ্বীপের নাম দিলেন সলোমন আইল্যান্ড। তিনি একজন সাধারণ ভ্রমণকারী ছিলেন। ভূগোল সম্পর্কে তার ধারণা কম থাকতেই পারে।
মজা তো।’ বলল রেমি। আসলে কখনও কখনও কাল্পনিক কাহিনির চেয়েও বাস্তব সত্য অনেক বেশি আশ্চর্যজনক হয়।’
স্যাম সামনে ঝুঁকল। আচ্ছা, মূল প্রসঙ্গে আসি। টমের গল্পের ব্যাপারে আপনার কী মত?’
‘মানুষ গায়েব হয়, এটা সত্য। আর দিনকে দিন গায়েব হওয়ার পরিমাণ বাড়ছে মনে হয়। কিন্তু আমি সেটার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নই। কোনো দুর্ঘটনা, ডুবে যাওয়া, কুমীর… এগুলোর মধ্যে যে-কোন কারণেই মানুষ গায়েব হতে পারে। আমরা নিয়মিত রিপোটিং করছি যাতে মানুষ উধাও হওয়ার যথাযথ কারণটা খুঁজে বের করতে পারি। বিষয়টা অনেকটা মহামারীর মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ২০ জন করে গায়েব হয়। তবে সে-হিসেবে এত কম মানুষ খেয়ে জায়ান্টরা কত-ই-বা ক্যালরি পায়? মাঝে মাঝে ভাবি, এত কম ক্যালরিতে ওদের চলে?’
‘আপনি নিশ্চয়ই জায়ান্টের গল্পে বিশ্বাস করেন না?’ রেমি প্রশ্ন করল।
‘টম মানুষ হিসেবে ভাল। তবে আমি বাস্তব দুনিয়ার থাকতে পছন্দ করি… যতটুকু সম্ভব আরকী। রূপকথার যাবতীয় বিষয় আমি অন্যদের উপর ছেড়ে দিয়েছি। ওসব নিয়ে আমার আগ্রহ নেই।’
দ্বীপের কিছু অংশকে তিনি অভিশপ্ত” বলেছেন। কারণ কী?
কী হতে পারে? হয়তো ওখানে কুমীরের আনাগোনা বেশি, তাই। আসলে প্রত্যেকটা অভিশাপঅলা কাহিনির পেছনে যুক্তিযুক্ত বাস্তব কারণ থাকে। সেটা বোঝার জন্য রকেট সাইন্স জানার প্রয়োজন পড়ে না।
আচ্ছা। আমরা আগামীকাল রুবো’র সাথে দেখা করার পর সোনার খনি দেখতে পাব বলে ঠিক করেছি।’
‘আশা করি, রুবো এখনও পরলোক গমন করেনি। আর সোনার খনিতে আসলে দেখার মতো কিছু নেই। বন্যার কারণে খনি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তারপরে আর ভোলা হয়নি।’
‘আমাদের হাতে অনেক অবসর সময় আছে। তাই এটা-সেটা দেখব। আচ্ছা, জায়ান্টরা যে গুহাগুলোতে থাকে… সেগুলো কোথায়?’
‘পাহাড়ের উপরে,’ অস্পষ্টভাবে বলল ম্যানচেস্টার। কিন্তু ওখানে যাওয়ার জন্য কোনো ভাল রাস্তা নেই। খুব একটা নির্ভরযোগ্য নয় ওদিকটা। আপনারা কোন দুঃখে ওদিকে যেতে চাচ্ছেন, আমার মাথায় ধরছে না। সময় কাটানোর কত উপায় আছে। ডাইভিং, মাছ ধরা,…’।
ম্যানচেস্টারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলের দিকে ফিরল ফারগো দম্পতি।
‘টমের গল্প শুনে ম্যানচেস্টার খুশি হয়নি বলে মনে হলো, তাই না? স্ত্রীকে বলল স্যাম।
হুম। হয়নি। তবে ম্যানচেস্টারের মধ্যে অন্য একটা ব্যাপার আছে। সেটা কী, আমাকে প্রশ্ন কোরো না কিন্তু। ‘ও আচ্ছা, তুমিও টের পেয়েছ? আমি ভাবলাম, শুধু আমার চোখেই পড়েছে বিষয়টা।
১১. সমভূমি থেকে পাহাড়ের দিকে
১১.
একটা ট্রাক সমভূমি থেকে পাহাড়ের দিকে যাত্রা করেছে। খাড়া রাস্তা ধরে উপরে উঠতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে ওটার ইঞ্জিনকে। চালু করা রেডিওর সাথে তাল মিলিয়ে ড্রাইভার গুনগুন করছে। তার সঙ্গী ঘুমুচ্ছে পাশের সিটে। পরনে খাকি পোশাক। তবে পোশাকটা ময়লা। অনেক কাজ করেছে আজ।
ওরা দুজনই অস্ট্রেলিয়ান। বিগত ৬ মাস ধরে গোয়াডালক্যানেলে রয়েছে। ২০০৬ সালের দাঙ্গার পর থেকে এখানে বিভিন্ন সময় সাহায্য সহযোগিতার জন্য বিদেশিরা আসছে। ওরা হচ্ছে সেরকম বিদেশি ব্যক্তি। তবে ইদানিং ওদের দিনকাল একঘেঁয়েমিতে কাটে। গত কয়েক বছর ধরে এখানে কোনো বড়ধরনের বিপদ-আপদ হচ্ছে না। তাই ওদের ডিউটিও হালকা।
বিপদজনক মোড়ে এসে সাবধানতা অবলম্বন করল ড্রাইভার। ওপাশ থেকে হুট করে হেডলাইটবিহীন গাড়ি উদয় হতে পারে। সাবধান হওয়া ভাল। তার উপর এখন সন্ধ্যা নেমেছে। দিনের আলো নেই বললেই চলে। এই পথে চলাচলরত গাড়িগুলোর ব্রেক আর নিরাপত্তার কোনো মা-বাপ নেই। কখন কোন গাড়ি বিগড়ে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটাবে তা কেউ জানে না। তাছাড়া বিভিন্ন প্রাণী, ভেঙ্গে পড়া গাছ, ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়া গাড়ি… ইত্যাদি ঝামেলা তো আছেই। তাই সবমিলিয়ে মোড় পার হওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই।
‘ধ্যাৎ! এরা রাস্তার মাঝে কী করছে?’ একটা তীক্ষ্ণ বাঁক পেরিয়ে এসে নিজেই নিজেকে বলল ড্রাইভার। সামনের রাস্তার ঠিক মাঝখানে একটা ভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইমার্জেন্সি লাইট জ্বলছে ওটাতে। আলফ্রেড, ওঠো।
আলফ্রেড উঠে হাত দিয়ে চোখ-মুখ ডলল। ট্রাকের গতি কমে গেছে। সামনের রাস্তা বন্ধ। ওদের ট্রাকের পক্ষে ভ্যানটাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
‘খুউব চমৎকার, সাইমন। এবার ঘণ্টাখানেক এখানে বসে বসে খই ভাজা যাবে!
ড্রাইভার ট্রাকটাকে দাঁড় করিয়ে ভ্যানের পেছন দিকে নজর দিল। আশা করছি, ড্রাইভারটা যেন এখানেই থাকে। যদি সে সাহায্য চাওয়ার জন্য দূরে কোথায় গিয়ে থাকে তাহলে আমাদের বাশ!