‘সত্যি বলতে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি শুধু এটুকু বুঝতে পেরেছি, এসব থেকে আমরা অভিশপ্ত সাগরের কোনো তথ্য পাচ্ছি না। টম আসলে আমাদেরকে ভয় দেখিয়েছে যাতে আমরা আর প্রশ্ন না করি।’
পশ্চিম আকাশে মেঘ গুড়গুড় শব্দে ডেকে উঠল। “প্লিজ, আর না।’ বলল রেমি।
‘আরেক বুড়োর কাছে যাব? হয়তো টমের চেয়ে বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে।’
‘আবার যদি বৃষ্টি নামে তাহলে কিন্তু কাদায় রাস্তার অবস্থা জঘন্য হবে।
‘তা তো হবেই। আমি বলি কি, যা আছে কপালে। চলো।’
‘আমি জানতাম, তুমি এটাই বলবে।’ বলল রেমি। ঠিক আছে। চলো। তবে পরে কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবে না। আমি কিন্তু সতর্ক করেছি, হুঁ।
১৫ মিনিটের মধ্যে নীল আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাস্তার বেহাল দশা। মাইলখানেক যাওয়ার পর দেখা গেল রাস্তা আর চেনাই যাচ্ছে না। পুরো রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। হার স্বীকার করল স্যাম। গাড়ি ঘুরিয়ে হোটেলের দিকে রওনা হলো। অনেক কষ্টে হোটেলে এসে পৌঁছুল ওরা।
বৃষ্টি এখনও থামেনি। হোটেলে ঢুকে দেখল ডেস্ক ক্লার্ক ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। রেমি গেল ক্লার্কের কাছে। দুটো মেসেজ দিল ক্লার্ক। একটা লিও’র আরেকটা ম্যানচেস্টারের। লিও জানিয়েছে, ডাইভিঙের প্রথম ক্লাস ছিল আজ। বিকেলে হাতেকলমে ডাইভিং শিখতে পানিতে নামছে। আরেকটা মেসেজে ওদের দুজনকে ডিনারের দাওয়াত দিয়েছে ম্যানচেস্টার।
যাবে? রুমে যেতে যেতে স্যাম ওর স্ত্রীকে প্রশ্ন করল।
‘অবশ্যই। কেন যাব না? দেখি রাজনীতিবিদ সাহেব জায়ান্ট সম্পর্কে কী বলেন।
‘আমার তো মনে হয় সবই বাচ্চা ভোলানো কাহিনি।’
হতে পারে। তবে যত যা-ই বলল। টমের সাথে কথাবার্তা পুরোপুরি শেষ হয়নি আমাদের। তার কথা শুনে মনে হলো সে আসলেই এসবে বিশ্বাস করে।
তার যে বয়স। এই বয়সে কোনটা হ্যালুসিনেশন আর কোনটা বাস্তব সেটা আলাদা করা কঠিন। কত বয়স হবে তার? আশি?
বলা মুশকিল। আমার কাছে অবশ্য অতটা বয়স্ক মনে হয়নি।
সমুদ্রের পাশে অন্য একটা রেস্টুরেন্টে ম্যানচেস্টারের সাথে দেখা করল ওরা। আগের রেস্টুরেন্টের চেয়ে এটা তুলনামূলক উন্নতমানের। টেবিলের উপরে একটা খালি বোতল দেখে বোঝা গেল স্যাম ও রেমি এখানে আসার আগেই ম্যানচেস্টার ইতিমধ্যে এক রাউন্ড বিয়ার সাবাড় করেছে।
‘দুঃখিত। আজকের আবহাওয়াটা সুবিধের নয়। আশা করা যায়, কালকের আবহাওয়া ভাল হবে। ম্যানচেস্টার এমনভাবে কথাটা বলল যেন এরকম আবহাওয়ার জন্য সে নিজেই দায়ী।
না, ঠিক আছে, সমস্যা নেই। আপনি যে দু’জনের কথা বলেছিলেন আমরা তাদের একজনের সাথে দেখা করেছি।’ বলল রেমি।
ভাল তো? কার সাথে দেখা করলেন?
‘টম।
‘সে একখান চিজ, তাই না? ওর কাছ থেকে কোনো কাজের কথা বের করতে পেরেছেন?
“তিনি স্রেফ জায়ান্টের গল্প শুনিয়েছেন।
‘ওহ, হ্যাঁ। জায়ান্ট। এখানকার বহুল প্রচলিত গল্প! কেউ না কেউ এমন কাউকে চেনে যে জায়ান্ট দেখেছে কিন্তু যখন একটু গভীরে গিয়ে সত্যতা খতিয়ে দেখতে যাবেন, তখন দেখবেন সবাই বাইন মাছের মতো পিছলাতে শুরু করবে।’
টম বললেন, তিনি নাকি জায়ান্ট নিজের চোখে দেখেছেন।
‘অবশ্যই দেখেছে। মানে আমি বলতে চাচ্ছি, সে অবশ্যই কিছু একটা দেখে সেটাকে জায়ান্ট ভেবে বসে আছে। রেইন ফরেস্টের ভেতরের কোনো ছায়া কিংবা কোনো ঝাপসা কিছু… দেখলে দেখুক। ক্ষতি তো নেই। কিন্তু সে কি আপনাদের পানির নিচে পাওয়া ধ্বংসাবশেষের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পেরেছে?
মাথা নাড়ল স্যাম। দূভার্গ্যবশত, না। তিনি মানুষের গায়েব হয়ে যাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন। তার ভাষ্য, মানুষখেকো জায়ান্টের কারণেই মানুষ গায়েব হচ্ছে।’
ওয়েটারকে আরও দুই বোতল বিয়ার আনার জন্য ইশারা করল ম্যানচেস্টার, তারপর রেমির দিকে তাকাল। আপনি কী নেবেন?
‘আমি পানি নেব। গরমে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে।
ম্যানচেস্টার রেমির জন্য ওয়েটারকে এক বোতল পানির অর্ডার দিল। ‘তাহলে পাহাড় জুড়ে মানুষখেকো জায়ান্টদের বসবাস, তাই তো? আমি সেই ছোটবেলা থেকে এসব গল্প শুনে আসছি। মজাই লাগে শুনতে। অবাক হয়ে ভাবি, এসব গল্পের শুরুটা হয়েছিল কীভাবে। আশেপাশের অন্যান্য দ্বীপগুলোর গল্পের চেয়ে আমাদের দ্বীপের গল্পগুলো কিন্তু বেশ আলাদা।
ওয়েটার বিয়ার ও পানির বোতল নিয়ে আসার পর ম্যানচেস্টার ওদের তিনজনের জন্য সামুদ্রিক খাবার অর্ডার করল। কিন্তু ম্যানচেস্টার যে পরিমাণ খাবার অর্ডার করেছে তা দিয়ে দশজন মানুষের পেট ভরে যাবে। খাওয়ার পুরো সময়টা চুপচাপ রইল ওরা। ম্যানচেস্টার গপাগপ খাবার সাবাড় করে ফেলল। খাওয়া শেষে সোনার খনির কথা তুলল স্যাম।
‘গতরাতে আপনি খনির কথা বলেছিলেন। কতদিন আগে চালু ছিল ওটা?
বিগত ১২ বছর ধরে বিভিন্ন সময় চালু হয়েছে… বন্ধ হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে খনিতে কোনো কাজকর্ম চলেনি।’
‘গোয়াডালক্যানেলের সাথে সোনার কোনো সম্পর্ক আছে বলে শুনিনি কখনও।
‘অনেক আমেরিকানই বিষয়টা জানে না। তারা শুধু এই দ্বীপের কথা জানে, কারণ ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিদের বিরুদ্ধে এই দ্বীপকে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু সোনা হলো আমাদের মূল সম্পদ। সোনার কারণেই কিন্তু এই দ্বীপের নাম সলোমন আইল্যান্ড রাখা হয়েছিল।’