রেমি আর একটু হলেই কয়েক হাত পিছিয়ে আসতো কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিল। স্কিঙ্ক প্রায় দুই ফুট লম্বা। মাথাটা ত্রিভুজাকৃতির, চোখ কালো।
না। আমরা কিছু পুরানো গল্প জানতে চাই। অরউন বললেন, আপনি হয়তো আমাদেরকে সাহায্য করতে পারবেন। মিষ্টি হাসি হেসে বলল রেমি।
‘ও আইচ্ছা। আপনেরা কিছু খাইবেন? পানি? সোডা? আমার স্টকে খুব বেশি কিছু নাই। তারপরও মোটামুটি খাতির-যত্ন করবার পারমু।’
মাথা নাড়ল স্যাম। না, ঠিক আছে। আমাদের কিছু লাগবে না।
‘আইচ্ছা, আহেন, বহেন। তারপর কন, কীসের গল্প শুনবার চান?
বাড়ির সামনে থাকা কাঠের বেঞ্চে বসল ওরা। স্যাম গলা পরিষ্কার করল। সাগরের অভিশপ্ত পাড় নিয়ে কিছু জানেন?
টমের চোখ সরু হয়ে গেল। অভিশপ্ত পাড়?
‘জি। এক নৌকার ক্যাপ্টেনের মুখে তো সে-রকমই শুনলাম।
এরাম পুরান ফাউল জিনিস লইয়্যা আপনারা মাথা ঘামাইতাছেন ক্যান?
‘আমরা আসলে এই দ্বীপের লোকদের লোককাহিনি ও প্রচলিত গল্প সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।
দূরে দৃষ্টি মেলল টম। মাফ কইরেন। আমি আপনাগো কোনো সাহায্য করবার পারতাছি না।’
‘আপনি সৈকতের সাথে সম্পর্কযুক্ত কোনো গল্প জানেন না?’ প্রশ্ন করল রেমি।
টম মাথা নাড়ল। আপনেরা হুদাই আপনাগো সময় নষ্ট করছেন।
‘খুবই লজ্জাজনক হালো বিষয়টা। আমরা কিন্তু ওখানে একলোকের জীবন বাঁচিয়েছি। কুমীর আক্রমণ করেছিল তাকে। বলল স্যাম। ভাবল, এতে হয়তো লোকটা মুখ খুলবে।
কিন্তু টম কোনো আগ্রহই দেখাল না। হ, হুঁশ কম হইলে কুমীরের কামড় খাইতে হয়। এইহানকার কুমীরগুলান খুব ভয়ঙ্কর। আরও মেলা কিছু আছে। সাবধান না হইলে ওইগুলা থেইক্যা বিপদ হইবার পারে।’
‘তাই নাকি? রেমি বলল।
‘হু, তাই। হেইডা ছাড়াও যেইখানে সেইখানে আজাইরা নাক গলাইলেও বিপদ হইবার পারে।’
‘যেমন?
‘ধরেন, অভিশপ্ত সাগর। তারপর ধরেন গিয়া… গুহা। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে নরম করল টম। জায়ান্ট (রূপকথায় বর্ণিত বিশালাকার দানব বা বিরাকাটার মানুষ)-এর কাছ থেইক্যা দূরে থাকাই ভালা।’
‘দুঃখিত। কী বললেন? জায়ান্ট স্যাম প্রশ্ন করল।
মাথা নাড়ল টম। হ। পাহাড়ে অনেক আছে ওইগুলা। শুনেন, নিজের চড়কায় ত্যাল দেন, ওইডাই ভালা হইব। এইখানে আইছেন, ঘুরে-ফিরেন, মস্তি করেন। ভালা থাকেন।
‘আপনি বললেন, এখানে জায়ান্ট আছে?’ স্যাম আবার প্রশ্ন করল।
হ, আছে। তয় এখন একটু কমছে।
‘আপনি কি বড় সাইজের মানুষ বোঝাচ্ছেন?’ কথা পরিষ্কার করতে চাইল। রেমি। কথার মোড় ঘুরে যাওয়ায় অবাক হয়েছে।
না। মানুষ না। জায়ান্ট। বিশাল সাইজের। অরা গুহায় থাকে আর ধইরা ধইরা মানুষ খায়। এইখানকার মোটামুটি সবাই অগো কথা জানে। দেহাও যায়।’
‘এগুলো তো সব লোককাহিনি, তাই না?
‘যা খুশি নাম দেন, সমস্যা নাই। আমি আপনাগো সাবধান কইরা দিলাম, যাতে বিপদে না পড়েন। আপনারা অরউনের বন্ধু। আমি চাই না আপনাগো জায়ান্ট খায়া ফালাক।
স্যাম হাসল। আপনি সত্যি সত্যি জায়ান্টে বিশ্বাসী?
‘আবার জিগায়। আমি নিজের চোখে দেখছিও। আপনার চাইতে আরও দুইগুণ বড়। সারা শরীরে লোমে ভরা। আপনের বন্ধুরে যে কুমীর কামড়াইছে। ওইটার চেয়েও এরা ভয়ঙ্কর। এটুকু বলে টম থামল। ওর আর এ-নিয়ে কথা বলার আগ্রহ নেই মনে হচ্ছে। স্যাম ও রেমি আরও কিছু জানার জন্য চাপাচাপি করল কিন্তু কোনো লাভ হলো না। টম যেসব জবাব দিল সবই কোনো না কোনো ধাঁধা কিংবা হেঁয়ালীমূলক।
জায়ান্ট ছাড়া আর কী সম্পর্কে আমাদের জানা থাকা উচিত, বলুন তো শুনি। সুন্দর হাসি হেসে স্যাম প্রশ্ন করল।
‘হাসেন। যত খুশি মশকরা করেন এইসব নিয়া। এইখানে অনেক আজিব আজিব জিনিস হয়, বুঝছেন? মানুষ উধাও হয়া যায়। কোনো কারণ ছাড়াই ব্যারাম হয়। পাহাড়ের উপরে কেউ যায় না, বিষাক্ত সব। এই দ্বীপ বদলাইয়া যাইতাছে। জায়ান্ট হইল অনেকগুলা বিপদের মইদ্যে একটা। ওইরম জিনিস আমি জীবনেও দেখি নাই। খুব ভয়ঙ্কর।
‘লোকজন কি সাগরের পাড় নিয়েও এরকম ভাবে? বিষাক্ত? অভিশপ্ত? নরমভাবে রেমি প্রশ্ন করল।
‘আমি কোনো সাগরের পাড় চিনি নাহ।
‘পুরানো দিনের কোনো গল্প আছে? কোনো শহর তলিয়ে গেছে… এরকম কিছু?
কোলে থাকা স্কিঙ্কের মাথায় হাত বুলাল টম। আপনেরা এইবার ফাউ জিনিস নিয়া কথা বলছেন।
‘না। আমি হারানো শহর নিয়ে কিছু একটা শুনেছি।
‘আমি শুনি নাই। আইজকা প্রথম শুনলাম। বলল টম। তার কণ্ঠে সতর্কতা।
আরও কয়েক মিনিট প্রশ্ন-উত্তরের পর টম জানাল সে ক্লান্ত। ফারগো দম্পতি বিষয়টা বুঝতে পারল। গাড়ির দিকে এগোল ওরা।
ইঞ্জিন চালু করে রেমির দিকে তাকাল স্যাম। তার কথাগুলো বিশ্বাস হয়েছে তোমার?
‘কোনটা? জায়ান্ট? নাকি সাগর সম্পর্কে কিছু জানে না, সেটা?
‘দুটোই। আমি তার চোখ দেখেছি। সে যা জানে আমাদেরকে ততটা জানায়নি। আমার তো মনে হয়, জায়ান্টের কথা বলে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে।’
‘বিভ্রান্ত করতে পেরেছে। এরকম উদ্ভট জিনিস আমি এই প্রথম শুনলাম। কিন্তু সে কিন্তু অবলীলায় বলেছে সব।
‘আমার ধারণা, এসবই টুরিস্ট ভুলানোর ধান্দা। জায়ান্ট-টায়ান্ট কিছু। নেই।’
‘তার বলার ধরণ কিন্তু ভাল ছিল। প্রতি পদে পদে বিপদ আর লোকজন গায়েব হওয়ার বিষয়টার উপস্থাপনাভঙ্গিটা দারুণ। কী মনে হয় তোমার?