প্রচণ্ড বৃষ্টি নামতে শুরু করল স্যাম ও রেমি গাড়িতে ওঠার পর। ড্রাইভিং সিটে স্যাম বসে আছে। ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে এগোচ্ছে ওরা। কয়েক মিনিটের মধ্যে ওরা শহর ছাড়িয়ে গ্রাম্য অঞ্চলে প্রবেশ করল। হেন্ডারসন ফিল্ড ও যুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনী কর্তৃক নির্মিত আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের পাশ দিয়ে এগোল ওদের গাড়ি। এরপর রাস্তার দু’পাশে গভীর বন দেখা দিল। আকাশ থেকে অঝরো বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির পরিমাণ এতই বেশি যে নিশানের ওয়াইপার গাড়ির সামনের কাঁচ থেকে পানি মুছে কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
এভাবে কয়েক মাইল যাওয়ার পর বৃষ্টি থেমে গেল। হঠাৎ করে শুরু হয়েছিল, হঠাৎ করেই থেমে গেল। মেঘ সরে গিয়ে সূর্য দেখা দিল আকাশে।
এই এলাকার একটা দিক ভাল,’ বলল স্যাম। ওদিকে রেমি গাড়ির এসি চালু করার জন্য নব হাতড়াচ্ছে।
কী সেটা?
যদি আবহাওয়া সুবিধের না হয় তাহলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এখানকার আবহাওয়া একটু পর পর বদলে যায়।
‘ঠিক বলেছ! যখন গরম পড়ে তো পড়েই আর যখন বৃষ্টি নামে তখন একেবারে ভাসিয়ে দেয়। এরকম আবহাওয়ায় আমার চুলের বারোটা বাজবে।’
‘এখানকার কাজ শেষ হয়ে যাক। তারপর তুমি যেখানে যেতে চাইবে আমি সেখানেই নিয়ে যাব। রিও, মিলান, স্পা, স্যালুন, শপিং…. যেখানে তুমি চাইবে।’
‘আচ্ছা, এখানকার কাজে ফাঁকি দিয়ে সরাসরি ঘুরতে যাওয়ার কোনো উপায় আছে?
‘না। আমরা তো এখানেও ঘুরছি, তাই না?’ স্যাম হাসল।
রাস্তার পাশে থাকা একটা ছোট্ট চিহ্ন জানান দিল ওরা ব্রিজ দিয়ে অ্যালিগেটর রিভার পার হচ্ছে। স্যামের দিকে তাকাল রেমি। এখানে ইন্টারেস্টিং জিনিসের অভাব নেই।
হুম, তবে অ্যালিগেটর কিন্তু কুমীর থেকে আলাদা। অ্যাটিগেটরের মুখ তুলনামূলক কম লম্বা ও কিছুটা ভোতা হয়।
‘আলাদা হোক কিন্তু দুটোর স্বভাব একই। মানুষ খায়।’
‘তা ঠিক।
চলতে চলতে আরেকটা ব্রিজের কাছে চলে এসেছে ওরা। এই ব্রিজটা অনেক সরু। ওদের নিশান গাড়ির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা হওয়াই কঠিন। ব্রিজের পাশে লেখা রয়েছে “গোল্ড রিজ।” লেখাটার পর দক্ষিণ দিকে তীর চিহ্ন আঁকা।
‘কোনো খনি হবে হয়তো। বলল রেমি।
‘যদি তুমি চাও তাহলে ফেরার পথে একবার দেখে যাব। আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় আছে।’
‘ঠিক আছে। আগে আজকে যে কাজের জন্য এসেছি সেটার কতদূর কী হয় দেখি। তারপর দেখা যাবে।
‘ওকে। ম্যাডামের যা মর্জি।
ম্বিনু-তে পৌঁছে ওরা যে গ্রামটাকে দেখল সেখানে হাতেগোনা কয়েকটা ঘর ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। ছোট্ট একটা বাজারের পাশে থামল ওরা। গাড়ি থেকে নামতেই পোকামাকড় আর তীব্র গরম ওদের উপর হামলে পড়ল। কয়েকজন গ্রামবাসী রাস্তার পাশে থাকা গাছের ছায়ার নিচে বসে আছে, আগ্রহ নিয়ে দেখছে ওদেরকে। ম্যানচেস্টারের দেয়া নাম-ঠিকানা লেখা কাগজটা হাতে নিয়ে এগোল স্যাম।
‘টম নামের একজনের কাছে এসেছি আমরা। এখানেই থাকে। একটু সাহায্য করবেন?’ মুখে হাসি নিয়ে স্যাম জিজ্ঞাস করল।
গ্রামবাসীরা ভাল করে স্যামকে দেখে নিয়ে বিজাতীয় ভাষায় বলল কী যেন। স্যাম ও রেমি দু’জনের কেউ-ই এই ভাষা বোঝে না। ওরা কিছু বুঝতে পারছে না টের পেয়ে হেসে উঠল গ্রামবাসীরা।
রেমি সামনে এগোল। আপনারা কেউ টমকে চেনেন?
আবার গুঞ্জন শুরু হল গ্রামবাসীদের মধ্যে। এবার আরও জোরে হাসল তারা। স্যামের দিকে রেমি ফিরল। অবস্থা দেখেছ?
যতদূর মনে পড়ে এই দ্বীপের অফিসিয়াল ভাষা হলো ইংরেজি। কিন্তু খুব কম লোকই ইংরেজি জানে।
‘আমাদের সামনে এখন যারা আছে তারা সেই “কম লোকের মধ্যে নেই।
গ্রামবাসীদের দিকে হাত নেড়ে সরে গেল ওরা। গ্রামবাসীরা পাল্টা হাত নাড়ল। বাজারের ভেতরে ঢুকল ফারগো দম্পতি। ওদের কপাল ভাল বলতে হবে। প্রাচীন এক ক্যাশ রেজিস্টারে বসা দশাসই সাইজের এক মহিলাকে পাওয়া গেল, সে একটু-আধটু ইংরেজি বলতে পারে।
‘টম? হি বাই দ্য চার্চ। ডাউন দ্য রোড। অশুদ্ধ ইংরেজি বলল মহিলা।
‘চার্চ? স্যাম প্রশ্ন করল।
‘হ, পিছন দিকে।
‘আচ্ছা, টমের বাসাটা ঠিক কোথায়?
‘চিহ্ন খোঁজেন… পাইবেন।
‘চিহ্নটা কী?
‘Skink
‘সরি, বুঝতে পারিনি।’
Skink,’ হামাগুড়ি দেয়ার অভিনয় করে দেখাল মহিলা।
‘ওহ।
ওরা গাড়িতে গিয়ে বসল। গাড়ি নিয়ে দুই-তিনবার চক্কর দেয়ার পর কাদায় মেখে যাওয়া একটা চিহ্ন চোখে পড়ল ওদের। টিকটিকি।
মহিলা কী বলছিল? কিঙ্ক?’ স্যাম প্রশ্ন করল।
‘স্কিঙ্ক। একটা s ছিল। অন্তত উচ্চারণ শুনে তো তা-ই মনে হলো।’ স্বামীকে শুধরে দিল রেমি।
চিহ্ন পার হয়ে ৩০০ ফুট এগোল ওরা। গাছের ছায়ার নিচে একটা জীর্ণ বাড়ি দেখা যাচ্ছে। ৬০ শতকের জং ধরা টয়োটা সেডান পার্ক করা আছে। বাড়ির পাশে। ওদের গাড়ি দেখতে পেয়ে এক বয়স্ক লোক গাঢ় রঙের টি-শার্ট পরতে শুরু করল। গাড়ি থেকে নামল ফারগো দম্পতি। বয়স্ক লোকটার পরনে এখন টি-শার্ট আর শর্টস রয়েছে। তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
টম?
‘আমি।’ হাসল লোকটা। লোকটার গায়ের রং কালো, দাঁতগুলো হলুদ। হাসার সময় হলুদ দাঁতগুলো গাড়ির হেডলাইটের মতো জ্বলে উঠল যেন।
‘আমরা অরউন ম্যানচেস্টারের বন্ধু।’
‘ওই চোরের বন্ধু? ওরে দিয়া কোনো ভালা কাজ হয় না।’ হাসতে হাসতে বলল টম। কন, আমি আপনাগো লাইগ্যা কী করবার পারি? Skink লইবেন? কোলে থাকা একটা সবুজ টিকটিকি উঁচু করে ধরে দেখাল সে।