‘অনেক তাড়াহুড়ো আর অপেক্ষাও আছে আমাদের জীবনে!’ স্যাম বলল।
মূল সড়কের পাশে থাকা সুন্দর ভবনগুলোর একটা হচ্ছে ম্যানচেস্টারের অফিস। দোতলা ভবনের গায়ে যে রং করা আছে সেটার হাল দেখে মনে হচ্ছে সর্বশেষ ১০ বছর আগে রং করা হয়েছে ভবনটা। এক সুন্দরী নারী এসে ওদের দুজনকে ভবনের পেছনের অংশে নিয়ে গেল। সেখানে ম্যানচেস্টার স্যুট পরে বড়সড় একটা গাড়ি সাইজের টেবিলের পেছনে বসে অপেক্ষা করছে।
বসুন, আপনারা। ভ্যানা তো ফোনে পরিষ্কার করে কিছু বললই না। শুধু বলল, আপনারা নাকি কোন অ্যাডভেঞ্চারে আছেন… একটু সাহায্য লাগবে?
‘সাহায্য লাগবে ঠিক আছে কিন্তু অ্যাডভেঞ্চারের বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।’ বলল রেমি।
পানির নিচে থাকা ইমারতের ব্যাপারে স্যাম সব বলল। সবগুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেল ম্যানচেস্টারের। কথা শুনে ম্যানচেস্টার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। জানালার পাশে গিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকাল সে।
‘গল্প তো ভালই। এ থেকে আসলে কী পাওয়া যাবে সে-ব্যাপারে আমি কিছু ঠাওর করে উঠতে পারছি না।’ ইতস্তত করল ম্যানচেস্টার। আপনারা আমাকে কী করতে বলছেন?
‘কিছু সাহায্য লাগবে? এই ইমারতের কোনো প্রমাণাদি আছে নিশ্চয়ই। কোনো ঐতিহাসিক দলিল? কিংবা কম করে হলেও কোনো লোককাহিনি।
হয়তো আছে। কিন্তু আমাদের এখানে কোনো লিখিত ইতিহাস নেই। তাই খুব বেশি কিছু পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। আমি নিজেও সেরকম কিছু শুনিনি।
হয়তো বয়স্ক কেউ পুরানো গল্প কিংবা লোককাহিনি সম্পর্কে ভাল বলতে পারবে?’
চিন্তিত হয়ে পড়ল ম্যানচেস্টার। কয়েকজন বুড়ো আছে যারা হয়তো সাহায্য করতে পারবে। কিন্তু ওদের কোনো থাকার ঠিক নেই। শহরে ওরা থাকতে চায় না। গ্রামের কোথাও গিয়ে আছে হয়তো।
‘আপনি কোনো ঠিকানা দিতে পারবেন?’
ম্যানচেস্টার হাসল। ওদেরকে একটা ই-মেইল করতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না। আমি বরং আপনাদেরকে দিক-নির্দেশনা দিতে পারি। সাথে একটা নোট দিয়ে দেব। ওরা হয়তো লেখা পড়তে জানে না কিন্তু কাগজের মুল্য ঠিকই বুঝবে।
‘তাহলে তো দারুণ হয়। স্যাম বলল। আরেকটা বিষয়। অভিযান চালানোর জন্য সরকারের অনুমতির বিষয়টা…’।
‘ওটা নিয়ে ভাবতে হবে। এমপি হওয়ার পর থেকে আমি আজপর্যন্ত কখনও এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। তাই বুঝতে পারছি না কোন পদ্ধতি কিংবা আইন অনুসরণ করলে ভাল হবে। এ-ব্যাপারে আদৌ কোনো আইন আছে কিনা সে-ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত নই।’
‘আইন না থাকাতে ভাল দিকও আছে তেমনি খারাপ দিকও আছে।’ বলল রেমি।
হ্যাঁ। আমি বিষয়টা বুঝতে পেরেছি। আজকে অন্যান্য এমপিদের সাথে লাঞ্চে বসে এই বিষয়ে আলোচনা করব। দেখি, তারা কী বলে। আচ্ছা, আপনারা তো কোনো খনিজ পদার্থ তুলবেন না? জাস্ট পানির নিচে ডুব দিয়ে অনুসন্ধান চালাবেন, তাই তো?’
‘একদম। আমরা যদি অনুসন্ধানে কোনোকিছু পাই সেটার মালিক সলোমন আইল্যাণ্ডের বাসিন্দারা। আমরা স্রেফ আগ্রহী হয়ে ডাইভ দিচ্ছি। কোনো লোভের বিষয় নেই এখানে।
“ঠিক আছে। তাহলে আপনারা বিনা মজুরীতে কাজ করছেন। আমাদের ইতিহাসের ব্যাপারে ক্যাটালগ তৈরিতে সাহায্য করছেন, তাই তো?’
‘হ্যাঁ, এভাবে বললেই ভাল হয়। স্যাম সায় দিল।
হাসল ম্যানচেস্টার। বেশ। অনুমতির ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছি না। তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। ওর কণ্ঠে দ্বিধা।
‘আমরাও অতটুকুই চেয়েছি আপনার কাছ থেকে।
‘বয়স্ক লোকদের মধ্যে দুজনের কথা মনে পড়ছে এখন। একজন মিনু তে থাকে… দ্বীপের পূর্ব অংশে। আরেকজন থাকে অনেক দূরে… আওলা গ্রামের পুবে… নদীর পাশে। কোন গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন আপনারা?’
স্যাম ও রেমি পরস্পরের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করল। একটা গাড়ি ভাড়া করে নেব।’
‘একটা এসইউভি নেবেন। ভাল টায়ার, ফোর-হুঁইল ড্রাইভ যেন থাকে। দরকার পড়বে।’
‘কোথায় পাওয়া যাবে?
নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল ম্যানচেস্টার। সলোমন আইল্যান্ডের সরকারি কাগজে প্রয়োজনীয় নোট আর অন্য একটা সাধারণ কাগজে কয়েকটা নাম আর ঠিকানা লিখল। লেখা শেষে কাগজ দুটো রেমিকে দিল সে।
রুবোর বয়স প্রায় ১০০। তিনি আওলা গ্রামের দিকে থাকেন। কুসংস্কার আছে, তিনি নাকি একজন শ্যামান… কবিরাজ। আর টম এই দ্বীপের সবার খোঁজ রাখে। হয়তো সে ইতিমধ্যে জেনে গেছে আপনারা তার মতো কারও খোঁজ করছেন।’ হাসতে হাসতে বলল ম্যানচেস্টার। এদের দুজনই একটু-আধটু ইংরেজি জানে। তাই আপনাদের কোনো দোভাষী প্রয়োজন পড়বে না। আর গাড়ির জন্য ঠিকানা দিয়ে দিয়েছি। যার ঠিকানা দিয়েছি সে বেশ সং… ওর গাড়িগুলোও মন্দ না। ওকে গিয়ে বলবেন আমি পাঠিয়েছি। তাহলে আপনাদের ভাল খাতির করবে।
কথা শেষে ওরা তিনজন উঠে দাঁড়াল। বাইরে বেরিয়ে এসে কাগজে চোখ বুলাল স্যাম।
‘অ্যাডভেঞ্চার আর কাকে বলে! একদম অঁজপাড়া গাঁয়ে যেতে হবে এবার!
রেমি শ্রাগ করল। আপাতত এরচেয়ে ভাল কোনো রাস্তা আমাদের সামনে খোলা নেই।
‘রাইট। কিন্তু যদি কিছু গড়বড় হয়…?”
রেমি থামল। কতবার বলেছি তোমাকে…’
‘ওই… সরি… মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে। আর হবে না।
বলেই তো ফেলেছ। এখন আর সরি বলে লাভ আছে?”
.
১০.
কার রেন্ট কোম্পানির মালিক দেখতে নাদুসনুদুশ বুদ্ধের মতো। প্রতিটা বাক্য বলা শেষে হেসে ওঠা তার মুদ্রাদোষ। একটা রূপোলি নিশান এক্সটেরা দেখাল সে। তবে গাড়ির তুলনা ভাড়াটা বেশি চাইল।