‘ধন্যবাদ। আসলে আমরা তো তাকে চিনিও না। সে হয়তো বুঝতেও পারবে না আমরা কারা?’ বলল রেমি।
“ঠিক আছে, আমি বলব, যারা আপনার জীবন বাঁচিয়েছিল তারা দেখতে এসেছিল আপনাকে।
“থ্যাঙ্ক ইউ।
আপনাদের কাছ থেকে অনুদান পাওয়ার আশায় আছি। এতটুকু খে করতেই পারি।’ মজা করল ভ্যানা।
‘আপনি গতরাতে বলেছিলেন, সাহায্য করবেন আমাদের। আমি যদি এখন সাহায্য চাই কিছু মনে করবেন? স্যাম বলল।
“অবশ্যই নয়। বলুন, কী করতে পারি?
‘প্রথমত, কথা এ-কান ও-কান হতে দেয়া যাবে না। চারিদিকে তাকিয়ে বলল রেমি।
‘আমার ঠোঁটে তালা-চাবি মারা থাকবে।
‘আমরা এখানে যেটা নিয়ে রিসার্চ করছি… দেখা যাচ্ছে ওটা কোনো তলিয়ে যাওয়া শহরের অংশবিশেষ।’
দু’বার চোখের পলক ফেলল ভ্যানা। কী?
সমুদ্রের পাড়ে থাকা কোনো প্রাচীন শহর।’
‘গোয়াডালক্যানেলে? আপনারা মজা করছেন।
স্যাম মাথা নাড়ল। না, করছি না। আমরা জানতে চাই এরকম জিনিস নিয়ে কোনো লোককাহিনি আছে কিনা। আমার বিশ্বাস, আছে। এক বয়স্ক ক্যাপ্টেন “অভিশাপ” নিয়ে কী যেন বলল। আমরা এর পেছনের কাহিনি জানতে চাই।’
রোগীদের বসার জায়গা এখন ফাঁকা। ভ্যানা ওখানে বসে ওদের দুজনের দিকে এমনভাবে তাকাল যেন ওরা ভিন্ন কোনো গ্রহের বাসিন্দা। আমি এখানে জন্মেছি। কিন্তু কখনও পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া অভিশপ্ত শহরের ব্যাপারে কিছু শুনিনি। সাইন্স ফিকশনের মতো শোনল বিষয়টা। দুঃখিত, মাইন্ড করবেন না।’
না, করিনি। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও কিছু করার নেই। আমরা কিন্তু এবারই প্রথম এরকম লোককাহিনি নিয়ে কাজ করছি না। এরআগেও আমরা এসবের মুখোমুখি হয়েছি এবং দেখেছি এসব লোককাহিনি অনেকসময় একদম সত্য কাহিনিতে পরিণত হয়। রেমি বুঝিয়ে বলল।
‘আসলে আমি আপনাদের কথাকে অবিশ্বাস করছি না। কিন্তু বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার… এখানে পানির নিচে ভবনের ধ্বংসাবশেষ। সলোমনদের ইতিহাসের কোথাও উল্লেখ নেই যে তারা ভাল নির্মাতা ছিল। দ্বীপের চারিদিকে দেখুন। কী মনে হয়? প্রাচীনকালে এদের পূর্বপুরুষরা ভাল নির্মাতা হওয়ার কোনো নজির দেখতে পাচ্ছেন? অথচ পানির নিচে আস্ত শহর ডুবে রয়েছে…’।
‘আসলে “শহর” বললে বেশি বলা হয়। তবে কমপ্লেক্স ভবন” বলা যেতে পারে।’ বলল স্যাম। আচ্ছা, আপনি এমন কাউকে জানেন যিনি আমাদের প্রশ্নের দিতে পারবে? বয়স্ক কেউ? যিনি এখানকার প্রাচীন রীতিনীতি ও লোককাহিনি সম্পর্কে জানে?
ডা. ভ্যানা মাথা নাড়ল। হয়তো অরউন জানে। এই এলাকার লোকদের সাথে ওর বেশি ওঠাবসা আছে। রাজনীতিবিদ বলে কথা! তবে আমার পরিচিত এরকম কেউ আছে বলে মনে পড়ছে না।
ভ্রু কুঁচকাল স্যাম। দ্বীপে আগত বিদেশিদের উনি খুব একটা পছন্দ করেন বলে মনে হলো না। বিশেষ করে যেসব বিদেশি লোক এসে এখান থেকে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে তাদেরকে তো উনার পছন্দই হয় না বোধহয়।
না, অরউনকে ভুল বুঝবেন না। আপনারা সাহায্য চাইলে ও সাহায্য করবে, দেখবেন।
‘আমরা চাচ্ছি, বিষয়টা যাতে অনেক লোকের কানে না যায়। রেমি সতর্ক করে দিল।
‘আপনারা যদি সত্যি সত্যি সিরিয়াস অভিযান পরিচালনা করতে চান তাহলে কিন্তু সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আর সেই অনুমতির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে অরউন। আপনারা যদি সরকারকে নিশ্চিত করে তথ্য না দেন তাহলে কীসের ভিত্তিকে সরকার আপনাদেরকে অনুমতি দেবে? সরকারের সাথে যাবতীয় লেনদেনের ব্যাপারে অরউন-ই আপনাদের শ্রেষ্ঠ খুঁটি। ওকে দরকার হবে আপনাদের।
‘আসলে আমরা বিস্তারিত কিছু এখনও জেনে উঠতে পারিনি। এখুনি সরকারকে অফিসিয়ালি কিছু জানানোটা কেমন হয়।’
‘আচ্ছা, বলুন, অনুমতি নিয়ে কাজ করা ভাল নাকি পরে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে “দুঃখিত” বলা ভাল? ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন দ্বীপের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু হলে দ্বীপের বাসিন্দারা স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। আপনাদের জায়গায় আমি হলে শুরু থেকে সকল অনুমতি নিয়ে রাখতাম।’
স্যাম মাথা নাড়ল। ভাল পরামর্শ দিয়েছেন। অরউন সাহেবের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারবেন?
‘আমি এখুনি ফোন দিচ্ছি। একটু অপেক্ষা করুন।
হাসাপাতালের পেছনের অংশে চলে গেল ভ্যানা। স্যাম রেমির দিকে ঝুঁকল। আমাদের আবিষ্কারের ব্যাপারে কোনোকিছু শেয়ার না করতে পারলে ভাল হতো।’
‘হুম। কিন্তু না জানিয়েও উপায় নেই। এই দ্বীপে যেসব ইকুইপমেন্ট পাওয়া যায় সেগুলো দিয়ে কিন্তু বেশি কিছু করা সম্ভব না। ওরা হয়তো ডাইভ দিয়ে এতটুকু নিশ্চিত হতে পারবে পানির নিচে থাকা ইমারতটা মানুষ নির্মিত, এ-পর্যন্তই। এতে তো কোনো ক্ষতি দেখি না।’
তারপরও…’
‘পানির নিচে যা আছে সেটাকে তো আর কেউ তুলে নিয়ে যেতে পারছে না। আর এরমধ্যে আমাদের রিসার্চ শিপও চলে আসবে। তাছাড়া স্থানীয় লোকজন কুসংস্কারের ভয়ে আধামরা। ওরা কোনো উঁকি-ঝুঁকি মারবে বলে মনে হয় না।’
হাসিমুখ নিয়ে ফিরল ভ্যানা। যদি আপনারা ওর অফিসে যান তাহলে অরউন আজ দেখা করতে পারবে। এই হলো অফিসের ঠিকানা, ভ্যানা একটা বিজনেস কার্ডের পেছনে হাতে লিখে ঠিকানাটা স্যামকে দিল।
‘অসংখ্য ধন্যবাদ।’ বলল রেমি।
‘মাই প্লেজার। আপনাদের রহস্যের জন্য শুভ কামনা রইল। কী বৈচিত্রময় আপনাদের জীবন!