অভিযান থেকে ফেরার পর ল্যাজলো দিনের পর দিন মাত্রা বাড়িয়ে বাড়িয়ে ফ্লার্ট করেই যাচ্ছে।
‘তোমার যে বয়স তাতে কোনো বিষয়ের প্রতি আগ্রহ না থাকাটাই স্বাভাবিক।’ বলল সেলমা। তা এখানে এলে কী মনে করে?’
ভাবলাম আমি হয়তো তোমাকে সাহায্য করতে পারব। বলো, কোনো কাজ আছে? যেটাতে আমি তোমাকে হেল্প করতে পারি? কোনো জটিল সাইফার, কোড? কোনো ধাঁধা?’
‘ক্যাপ্টেন কিডের কাজ কতদূর এগোল? কোডের অর্থ উদ্ধার হয়েছে? জেনে-শুনে খোঁচা মারল সেলমা।
কাজ করছি। কাগজটা যার কাছে ছিল তার ধারণা জলদস্যুদের কোনো হারানো গুপ্তধন সম্পর্কে বলা আছে ওতে। কিন্তু সেরকম মনে হয় না।
এরকম বাড়িয়ে বলেই তো অনেকে সাধারণ একটা জিনিসকে অনেক উচ্চমূল্যে বিক্রি করে থাকে।
‘রাইট। সেজন্য আমি এ-ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিতে চাই। যদি ওই লোকের কথা সত্য হয় তাহলে তো কেল্লাফতে। অনেক লাভ হবে।
সেলমা মাথা নাড়ল। এসব করতে গিয়ে আসল চাকরি হারিয়ে না আবার।
হুঁ। এটা আমার আসল চাকরির চেয়েও বেশি মজার। অন্য দিকে তাকাল ল্যাজলো। আচ্ছা, আমাদের ফারগো দম্পতির কী খবর? কোথায় তারা?
সলোমন আইল্যান্ডের বিভিন্ন ডকুমেন্ট দেখাল সেলমা। আমি ওদের জন্য এই এরিয়া নিয়ে রিসার্চ করছি। আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প, জলোচ্ছাস… সবই আছে ওখানকার ইতিহাসে। ফারগোরা ওখানে যাওয়ার আগে আমি নামটাও পর্যন্ত জানতাম না।’
হুম। ইন্টারেস্টিং। পৃথিবীতে এরকম অনেক জায়গা আছে যেগুলো এখনও সেভাবে পরিভ্রমণ করা হয়নি। এটাও সেরকম একটা জায়গা হবে।
“হ্যা…’
‘ফারগোরা তো গুপ্তধন উদ্ধারে পটু। সবার চোখের সামনে দিয়ে গুপ্তধন উদ্ধার করতে পারাটা কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর।’
‘কিন্তু এই জায়গাটা কিন্তু তারা আবিষ্কার করেনি। ওদের বন্ধু লিওনিডের আবিষ্কার এটা। ওরা স্রেফ সাহায্য করতে গেছে।
“লিওনিড, এহ? আইরিশ নাম।’
ল্যাজ-লো, ওর নাম ভেঙে উচ্চারণ করল সেলমা। শুনেই কোনোকিছু সম্পর্কে মন্তব্য করা উচিত নয়। ফারগোদের প্রথম নিয়ম এটা। নিয়মটা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ। সেলমা ল্যাজলোকে ইশারায় সাবধান করল।
তারমানে ওই লোক রাশিয়ান নয়?
ছোট্ট করে হাসল সেলমা। আমি কি তোমাকে অন্য কোনকিছুতে সাহায্য করতে পারি?
ল্যাজলো উঠে দাঁড়াল। সেলমার ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছে। না, না। আমি তো তোমাকে সাহায্য করার জন্য এসেছিলাম। যা-ই হোক, ভাল থাকো, সেলমা। আর হ্যাঁ, যে-কোন কাজে আমার দক্ষতার প্রয়োজন হলে জাস্ট আমাকে ফোন দিলেই হবে। আমি হাজির হয়ে যাব।’
‘অনেক ধন্যবাদ। তবে আজকে হয়তো আর লাগবে না।’
‘সমস্যা নেই।
বিদেয় হলো ল্যাজলো। সেলমা এই ব্যক্তিকে মোটেও পছন্দ করে না। তাই কোন কাজে সাহায্য চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। মনিটরের পাওয়ার বাটন অন করল সেলমা। ওকে নড়তে দেখে জোলটান ওর পায়ের কাছে এগিয়ে এলো। প্রাণীটার বিশালাকার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিল ও।
.
০৯.
গোয়াডালক্যানেল, সলোমন আইল্যান্ড
লিও’র সাথে হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে নিল স্যাম ও রেমি। বেচারা আগামীকালের জন্য আরেকটা নৌকো খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেছে। কুমীরের ঘটনা এখন দ্বীপের সবার মুখে মুখে। তাই কেউ আর লিও’র সাথে কাজ করার সাহস পাচ্ছে না। লিও অনেক বাড়তি অর্থ প্রস্তাব করেছিল, তাতেও কাজ হয়নি।
‘দেখো, লিও, স্যাম বলল। তাড়াহুড়ো করে ডাইভ দিয়ে আমরা কিন্তু খুব বেশিকিছু উদ্ধার করতে পারব না। তারচে’ বরং রিসার্চ শিপের জন্য অপেক্ষা করি। ওতে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি থাকবে, লোকবলও পাব। পানির নিচের জিনিসটা মানুষ-নির্মিত। প্রথম ডাইভে যা দেখে এসেছি, ওতেই যথেষ্ট।
তুমি এই সুযোগে ডাইভিং শিখে ফেলল,’ বলল রেমি। হয়তো ডাইভিঙে আনন্দ খুঁজে পাবে।’
‘তাতে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।’ কফিতে চুমুক দিল লিও।
‘এত হতাশ হওয়ার কিছু নেই, বন্ধু। পানিতে নামতে পারছি না তো কী হয়েছে? আমরা এখানকার লোককাহিনি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া শহর নিয়ে কোনো গল্প না থেকে পারেই না।’
‘গুড লাক। আমি তো স্থানীয়দের সাথে কথাই বলতে পারি না। সব ব্যাটা মুখ সেলাই করে বসে থাকে।’
‘আমার সুন্দরী বউকে দিয়ে করার কাজটা।
‘ভাল। আমি আসলে মানুষদের সাথে খুব একটা মানিয়ে নিতে পারি না।
তাই আমরা এখন আলাদা হয়ে যাব। তুমি স্কুবা ডাইভিং শিখবে আর আমরা এখানকার বিভিন্ন লোকদের কাছ থেকে কথা আদায় করার চেষ্টা করব।’ বলল রেমি। “ঠিক আছে?
‘আমাকে পানিতে নামতে হবে…এই অংশটুকু ছাড়া বাকিসব ঠিক আছে।
হাসপাতালের দিকে পায়ে হেঁটে রওনা হলো স্যাম ও রেমি। ওরা যখন পৌঁছুল, সকালের সূর্য তখন কেবল হাসপাতাল ভবনের গায়ে লাগতে শুরু করেছে। ভ্যানার খোঁজ করল ওরা। ইমার্জেন্সি দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো ভ্যানা। তাকে দেখে খুব খুশি মনে হচ্ছে।
‘বাহ, কি দারুণ সারপ্রাইজ। আপনারা এত তাড়াতাড়ি আসবেন ভাবিনি।
কাছ দিয়েই যাচ্ছিলাম, ভাবলাম…’ বলল স্যাম।
‘খাবার প্লেট সাইজের শহরে আপনি যেখানেই যাবেন সেখান থেকেই। সবকিছু কাছে বলে মনে হবে।
‘রোগীর কী অবস্থা?’ রেমি প্রশ্ন করল।
‘অবস্থা স্বাভাবিক তবে এখুনি কারও সাথে দেখা করতে দেয়া সম্ভব নয়। সিডেটিভ দিয়ে রাখা হয়েছে। দুঃখিত। তবে আমি তাকে বলব, আপনারা এসেছিলেন।