মাথা নাড়ল রাশিয়ান। কখনও শিখিনি।’
‘ডাইভিঙের উপর শর্ট কোর্স সেরে নেয়া উচিত তোমার। পানির নিচে চলা এরকম অভিযানে যদি তুমি স্বশরীরে পানিতে না নামো তাহলে তো তোমার অভিযান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’
‘আমার যা বয়স হয়েছে… নতুন কি আর শিখতে পারব?
‘বোকারাম! আমরা একজন ট্রে খুঁজে বের করব। তারপর দেখবে শিখতে পার কি না। তাছাড়া সামনের কয়েকদিন কী নিয়ে ব্যস্ত তুমি?
লিও ঠিক ভরসা পাচ্ছে না। তুমি নিশ্চিত? আমি তো এটাকে, নিজের শরীরে দেখাল লিও, ফিট রাখিনি।’
‘এটা তেমন কঠিন কিছু না। স্রেফ ভেসে ভেসে সঁতরে যাওয়া। জ্যাকুস কসটিউ তোমার চেয়ে দ্বিগুণ বয়সে এসেও এসব করেছেন। এত আমতা আমতা করলে চলে! একটু সাহসী হও।’ বন্ধুকে খোঁচা মারল স্যাম।
নৌকো ওদেরকে পাড়ে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। বেনজিকে যেখানে কুমীরটা আক্রমণ করেছিল সেদিকে তাকাল রেমি। স্যামকে বলল
কুমীরের কী খবর?’ রেমির কণ্ঠস্বর বেশ নিচু।
স্থানীয়রা বোধহয় ভয়কে জয় করে এখান থেকে কুমীরগুলোকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ভয়ে লুকিয়ে থেকে আর কতদিন চলা যায়। বলল লিও। এবার ক্যাপ্টেনের দিকে ফিরল। কালকে আসতে পারবেন?
ক্যাপ্টেন আর ক্রুরা নিজেদের মধ্যে দুশ্চিন্তামাখা দৃষ্টি বিনিময় করল। তারপর বলল, না। এই জায়গায় ভালা না।
‘আরে, কী যে বলেন! কিছুই হবে না। কত সহজে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন ভেবে দেখেছেন?!
ভ্রু কুঁচকাল ক্যাপ্টেন। ট্যাকা দিয়া আপনেরা এইহানে কুনো সুবিদা করবার পারবেন না। আমি আর কক্ষনও আমু না এইহানে। এই জায়গাড়া অভিশপ্ত। যদি নিজেগো ভালা চান তো এইহান থিক্কা চইল্যা যান। আর কক্ষনও ফিরা আইয়েন না। আর যদি থাকবার চান তত থাকেন। খোদা আপেগো দেইখ্যা রাখুক।’
কর্কশ হাসি দিল লিও। কী যে বলেন! অভিশপ্ত? এসব বলে কী আর আমাদেরকে ভয় দেখানো যায়!
শীতল দৃষ্টিতে ক্যাপ্টেন লিও’র দিকে তাকাল। আপনে যা করতে কইছিলেন করছি, কিন্তু আর করমু না। আমাগো মজুরী দিয়া দেন। বাড়িত চইল্যা যাই। আপনেরা নিজেগো জীবন নিয়ে জুয়া খেলবেন, ভালা কথা। কিন্তু আমি খেলম না।’
নাটকীয় কথাবার্তা। মন্তব্য করল লিও। কয়েকটা বিল বের করে ক্যাপ্টেন হাতে দিল। আমাদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল মনে রাখবেন। কাউকে এই ব্যাপারে কিছুই বলবেন না। আরেকটা অতিরিক্ত বিল দিল সে।
আমি কাউরেই কইতাম না। আর কইলেও কেউ নিজের কপাল ফাটাইতে এইখানে আইব না। বেনজির কী অবস্থা হইছে আমি শুনছি। অভিশাপের লাইগ্যা ওর এক পাও কাড়া পড়ছে। একটু থামল ক্যাপ্টেন। এইডা তো ক্যাবল শুরু। সামনে আরও হইব।’
ক্যাপ্টেন ও তার ক্রু’রা তাদের ট্রাক নিয়ে বিদেয় হলো।
স্যামের দিকে তাকাল রেমি। লোকটার চেহারা খেয়াল করেছ? খুব ভয় পেয়েছে বেচারা।
স্থানীয় কুসংস্কার। মাম্বো জাম্বো। যতসব ফালতু। স্যাম তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিল।
‘সে এই জায়গা সম্পর্কে আগে থেকেই জানে। হয়তো তার মাধ্যমে আমরা চলমান গুজব সম্পর্কে জানতে পারব।’ বলল রেমি।
‘ওসব শুনে কি খুব একটা লাভ আছে? পাড় থেকে একটু দূরেই প্রাচীন কোনো ভবনের ধ্বংসাবশেষ ডুবে রয়েছে। কেউ এটা সম্পর্কে জানতো না পর্যন্ত। অথচ আমরা ঠিকই আবিষ্কার করেছি। তাদের ওসব বাচ্চা ভোলানো ভূতের গল্পে কে বিশ্বাস করে? লিও বেশ ক্ষিপ্ত।
তবে লিও, এসব লোককাহিনিতে কিন্তু কিছু সত্য উপকরণও থাকে। মন্তব্য করল স্যাম। আশেপাশে একটু খোঁজ নিয়ে দেখলে ক্ষতি কী?
‘বেশ, তোমরা যদি তোমাদের সময় নষ্ট করতে চাও, করো। আমি বরং আগামী তিনদিনের মধ্যে স্কুবা ডাইভিং শিখব।
.
০৮.
লা জল্ল্যা, ক্যালিফোর্নিয়া
সামনের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে চোখ সরাল সেলমা। ওর দুই সহকারী এসেছে হয়তো। পিট ও ওয়েন্ডি। লাঞ্চ করতে বাইরে গিয়েছিল ওরা। কিন্তু রুমে ভিন্ন একজনকে ঢুকতে দেখে জোলটান গরগর আওয়াজ করল। সেলমা হাত দিয়ে শান্ত করল জোলটানকে। আগন্তুকের নাম; ল্যাজলো।
পেশায় শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ায়। নিয়মিত আসে এখানে। সেলমা সন্দেহ করল এই ব্যক্তির হাতে এখন কোনো কাজ নেই তাই গল্প করে সময় কাটাতে আসছে। এরআগে লাওস অভিযানে গিয়েছিল ল্যাজলো। কিন্তু সেখান থেকে কোনো গুপ্তধন উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গুপ্তধন না পেয়ে ল্যাজলো খুব বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিল কিন্তু কুখ্যাত জলদস্য ক্যাপ্টেন কিডের হাতে লেখা একটা কাগজ পেয়ে নিজেকে সামলে নিয়েছে। ক্যাপ্টেন কিডের কাগজে সবকিছু কোডে লেখা।
‘সেলমা, কী আর বলব। আজকের এই সুন্দর দিনে তোমাকে যা অসাধারণ লাগছে। আর জোলটান, তুমি তো মোটাসোটা হ্যান্ডসাম। একদম ঠিকঠাক। বলল ল্যাজলো।
‘জোলটান মোটেও মোটা নয়,’ সেলমা আপত্তি করল। মাথা ঘুরিয়ে ল্যাজলোকে পর্যবেক্ষন করল জোলটান। তারপর বসে পড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ল্যাজলোর প্রতি তার এখন কোনো আগ্রহ নেই।
‘এত সিরিয়াস হওয়ার কী আছে? আমি তো আদর করে বলেছি। সেলমার কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকাল সে। কী নিয়ে কাজ করছ?
সেলমা মনিটরের পাওয়ার বাটনে চাপ দিল। তোমার ভাল লাগতে পারে এরকম কিছু করছি না, নিশ্চিত।
‘তা কী আর বলা যায়! যদি তুমি পাশে থাকো তাহলে যে-কোন বিষয়ই আমার অনেক ভাল লাগে।’