রেমির চোখ বড় বড় হয়ে গেল। না!’
‘হা! সেলমা এই এরিয়া নিয়ে গবেষনা করেছে। কুমীরের পাশাপাশি হাঙরও আছে এখানে।
‘তারপরও আমরা আজ পানিতে নামব?”
শ্রাগ করল স্যাম। কেউ তো আর চিরদিন বাঁচে না।’
লিও’র দিকে তাকাল রেমি। আবার বলো তো শুনি, কেন আমরা এত পথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসতে রাজি হয়েছিলাম?’
বন্ধুর হয়ে স্যাম জবাব দেয়ার চেষ্টা করল। বৈজ্ঞানিক বিষয়ে আগ্রহ, বন্ধুত্ব, নতুন কিছু আবিষ্কার করার রোমাঞ্চ, জ্ঞান আহোরণ ইত্যাদি।
‘ক্লান্তি ও বিরক্তি। এটা বলতে ভুলে গেছ।’ বলল লিও। হেসে উঠল সবাই।
তুমি জানো, ওয়েট স্যুট পরে পানিতে নামলে হাঙরের চোখে আমাদেরকে সীল (একধরনের সামুদ্রিক প্রাণী)-এর মতো দেখাবে? রেমি বলল।
দাঁত বের করে হাসল স্যাম। আমি তো শুনেছি ওয়েট স্যুট খেতে খুব একটা সুস্বাদু নয়। হাঙররা ওয়েট স্যুট এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।’
হাঙর নয়। তুমি ভোদরের কথা বলছ।’ সংশোধন করে দিল রেমি।
‘ওহ, আমি বারবার গুলিয়ে ফেলি। তাহলে পানিতে নেমে ভোদরের মতো অভিনয় করতে হবে। তাহলে হয়তো হাঙর এড়িয়ে যাবে আমাদের।
‘পানিতে কুমীর খুব একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। সমুদ্র কিংবা নদীর পাড়ে কুমীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে।’
‘যেমনটা বেনজির ক্ষেত্রে হয়েছে। বেচারা।’
সাগর পাড়ে ওরা পৌঁছে দেখল নতুন একটা ট্রাক পার্ক করে রাখা আছে। পাম গাছের ছায়ায় অপেক্ষা করছে তিনজন। ওদের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। কাছেই একটা নৌকো অলসভঙ্গিতে ভাসছে পানিতে। রোদ পোহাচ্ছে।
চারদিকে ভাল করে চোখ বুলিয়ে নিল স্যাম ও রেমি। দেখে নিল আশেপাশে কোনো কুমীর ঘাপটি মেরে আছে কিনা। কুমীরের দেখা না পেয়ে ওয়েট স্যুট পরে নিল ওরা দু’জন। নৌকোয় উঠল। নৌকোর ইঞ্জিনের অনেক বয়স হয়েছে। একবার কেশে নিয়ে চালু হল ইঞ্জিন। ক্যাপ্টেনকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে লিও, ওর হাতে একটা জিপিএস রয়েছে।
জায়গামতো পৌঁছুনোর পর ক্যাপ্টেন গতি বন্ধ করে স্রেফ ইঞ্জিন চালু করে রাখল। ওদিকে স্যাম ও রেমি ওদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে। লিও হাসিমুখে মাস্ক, রেগুলেটর ইত্যাদি এগিয়ে দিয়ে ওদেরকে সাহায্য করল।
‘পানির তলা এখান থেকে প্রায় ৮০ ফুট নিচে। সবকিছু বেশ পরিষ্কার দেখতে পাবার কথা, ডাইভাররা তো সেরকমটাই জানিয়েছে। তাছাড়া সমুদ্রের পানি এমনিতেও বেশ টলটলে।’
রেগুলেটর বের করল স্যাম। কিন্তু গতকাল ঝড় হয়েছে। বিষয়টা মনে রাখতে হবে। দেখা যাক… কী আছে কপালে।
পিঠ পেছনে দিয়ে নৌকো থেকে ডাইভ দিল রেমি। স্যাম একটা ধাতব ডাইভ মই বেয়ে পানিতে নামল। পানিতে নেমে শুকরিয়া জ্ঞাপন করল স্যাম। পানির তাপমাত্রা বেশ আরামদায়ক। পানির গভীরে ডুব দিল ও। রেমিকে দেখতে পেল, দশ ফুট দূরে রয়েছে, অপেক্ষা করছে ওর জন্য। ওরা দুজন একে অপরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে থাম্বস আপ জানাল। ধীরে ধীরে আরও গভীরে যাত্রা করল ওরা। একদম তলায় কী আছে সেটা ওদের বর্তমান অবস্থান থেকে দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে।
৫০ ফুট নিচে নেমে রেমির কাঁধে টোকা দিল স্যাম। সমুদ্রের তলায় বিশালাকার কিছুর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ওদিকে এগোেনোর পর ওরা নিশ্চিত হলো জিনিসটা মানুষের তৈরি। ধ্বংসাবশেষের গায়ে বিভিন্ন সামুদ্রিক শৈবাল জড়িয়ে রয়েছে, তবে আকার-আকৃতি খুব একটা বিকৃত হয়ে যায়নি। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এটা কোনো একটা ইমারতের অংশ।
ইমারতের একদম কাছে পৌঁছুনোর পর পায়ের সাথে লাগানো ডাইভিং নাইফ বের করল স্যাম। রেমি দেখল স্যাম ধীরে ধীরে সব জলজ লতাপাতা আর শৈবালের জঞ্জাল কেটে পরিষ্কার করছে। কাজ সেরে কিছুক্ষণ পর স্যাম পিছিয়ে এলো যাতে রেমি দেখতে পারে।
দুই ব্লকের জোড়মুখ এটা।
হঠাৎ সমুদ্রের তলদেশের কাছ দিয়ে কিছু একটা সাঁতরে গেল। চুপ হয়ে গেল ফারগো দম্পতি। স্যাম তাকিয়ে দেখল ওটা একটা বড় হাঙর। গ্রেট হোয়াইট শার্কের মতো দৈত্যাকার না হলেও যথেষ্ট বড়। প্রায় নয় ফুট দীর্ঘ।
ওদের দুজনকে মাঝখানে রেখে কয়েক পাক ঘুরল হাঙরটা। কিন্তু আগ্রহী হওয়ার মতে কিছু না পেয়ে অন্যদিকে চলে গেল। মাস্কের ভেতরে রেমির চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। হাঙরকে চলে যেতে দেখে স্যাম নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ও হৃদপিণ্ডে স্পন্দন দু’টোকেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারল। এখানে ওরা কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে সেটা প্রমাণ হিসেবে এইমাত্র ঘটে যাওয়া ঘটনাই যথেষ্ট। ধ্বংসাবশেষের ভেতর দিয়ে দ্রুত চোখ বুলিয়ে উপরে উঠতে শুরু করল ওরা। সাঁতরে উপরে ওঠার সময় নির্দিষ্ট স্থানে এসে থামল, দ্রুত উপরে উঠলে ডিকমপ্রেশনে আক্রান্ত হতে হবে। অনাহুত কোনো অতিথি উদয় হয় কিনা সেটা দেখতে চোখ খোলা রেখে সজাগ থাকল ওরা।
ওয়েট স্যুটসহ যাবতীয় সরঞ্জাম খুলে ফেলল নৌকোয় উঠে।
“কী অবস্থা?’ প্রশ্ন করল লিও।
‘নিশ্চিত করে বলা যায়, দালান-কোঠা টাইপের কিছু একটা হবে। তবে বেশ পুরানো।’
মাত্র একবার দেখেই কীভাবে এতটা জোর দিয়ে বলছ?
ব্লকের গঠনশৈলী ব্যাখ্যা করল রেমি। সব শুনে লিও মাথা নাড়ল। তাহলে তোমরা একদম নিশ্চিত?
‘আমরা কিন্তু এরকমটাই সন্দেহ করেছিলাম।
‘তুমি ডাইভ দেবে না?’ স্যাম লিওকে প্রশ্ন করল।