স্যাম হাত নাড়ল। দুনিয়ার লোকজন এসব গুপ্তধনের পেছনে ছোটার চেয়ে আরও ভাল কাজ করছে। এসব করা খুব একটা কাজের কাজ নয়।’
‘আচ্ছা, আপনারা যেন কোথায় ডাইভ করতে যাচ্ছেন বললেন?’ প্রশ্ন করল ম্যানচেস্টার। তার বলার ধরন পুরোপুরি ভদ্র ও সভ্য কিন্তু তারপরও একটু শীতলভাব টের পাওয়া গেল।
সুন্দর করে হাসি দিল রেমি। আমরা এখনও জায়গায় নাম বলিনি। আসলে এটা আমাদের বন্ধুর প্রজেক্ট। তাই বেশিকিছু বলা সম্ভব নয়। তবে আমি আপনাকে এতটুকু নিশ্চিত করতে পারি এই প্রজেক্টের সাথে গুপ্তধনের কোনো সম্পর্ক নেই।
ম্যানচেস্টারের চোখ সরু হয়ে গেল। দ্বীপটা অনেক ছোট, বুঝলেন। আমি নিশ্চিত ইতিমধ্যে সবাই কুমীরের ঘটনাটা জেনে গেছে। এখানে গোপন বিষয় বেশিক্ষণ গোপন থাকে না।
তা হতে পারে। কিন্তু বন্ধুর ইচ্ছের প্রতি সম্মান দেখানোটাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমাদের বন্ধু একজন প্রফেসর, এই বিষয়গুলো ওর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বুঝিয়ে বলল রেমি।
ম্যানচেস্টার মাথা নাড়ল। বুঝতে পেরেছি। ভাবলাম, প্রজেক্টের ব্যাপারে আমি আপনাদের হয়তো কোনো কাজে আসব। অনুমতি-টনুমতির ব্যাপারে কিংবা অন্য কোনো কিছুতে…’।
হাই তুলল রেমি। ভ্যানা রেমির ইশারা বুঝতে পেরে ওয়েটারকে বিল আনতে ইশারা করল। ওয়েটার বিল আনতেই সেটাকে চট করে হাতে তুলে নিল স্যাম। ভ্যানা চেকটা নিতে যাচ্ছিল কিন্তু স্যাম ওর আগেই নিয়ে ফেলেছে। প্লিজ, আজকে ডিনারের বিলটা আমাদেরকে দিতে দিন। শেষ কবে এত সুস্বাদু মাছ খেয়েছি মনে করতে পারছি না। বিল দিয়ে তৃপ্তির ষোলকলা পূর্ণ করতে চাই।’
ভ্যানার চোখ দুটো চকচক করে উঠল, হাসল সে। বাহ্। খুব ভাল। আশা করা যায়, এভাবে আপনি আমাদের এখানকার মানুষদের জন্যও কিছু করবেন।’
‘ধুর! যদি জানতাম বিলটা অন্য কেউ দেবে তাহলে আরও কয়েক বোতল বিয়ার খেতাম!’ অট্টহাসি দিল ম্যানচেস্টার।
ডিনার শেষে স্যাম ও রেমিকে হোটেলে নামিয়ে দিল ভ্যানা। ক্লিনিকের প্ল্যান ই-মেইল করে পাঠাবে বলে কথা দিল। ফারগো দম্পতির কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে রওনা হলো হাসপাতালের দিকে। ওখানে ওর অসুস্থ রোগীরা সেবার অপেক্ষায় রয়েছে।
ম্যানচেস্টার একটা চিজ, কি বলো?’ বলল স্যাম।
তা আর বলতে। আচ্ছা, তাকে রাগী দেখাচ্ছিল, তাই না? ঠাণ্ডা রাগ।
হু, তবে আমি তাকে দোষ দিতে পারছি না। লোকটা অনেক চাপে থাকে। এক পা এগোয় তো পরিস্থিতি তাকে দুই পা পিছিয়ে দেয়।
‘যদি সে সবকিছু সত্য বলে থাকে তাহলে তোমার সহানুভূতি ঠিক আছে। তবে আমার সাথে সে যেভাবে কথা বলছিল তাতে কিন্তু ওরকমটা মনে হয়নি।
.
০৭.
স্যাম ও রেমিকে গাড়িতে তুলে নিল লিও। গাড়ির পেছনের অংশে দুটো ডাইভিং সট আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস রয়েছে। লিও-কে দেখে মনে হচ্ছে গতরাতে খুব ধকল গিয়েছে ওর উপর দিয়ে। দুই দিনের খোঁচা খোঁচা দাড়িতে লবণ, ময়লায় মাখামাখি আর চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।
‘গুড মর্নিং, বন্ধু,’ লিওর উপর নজর বুলিয়ে বলল স্যাম! কী অবস্থা?
লিও ফাটা হাসি দিল। আর বোলো না।’
‘ক্রু যোগাড় করতে পেরেছ?
সাগরের পাড়ে না যাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। গতকালের চেয়ে আজ দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিতে হবে ওদের। আশা করা যায়, আসবে।
হাতঘড়ি দেখল স্যাম। ব্যাকপ্যাক থেকে স্যাটেলাইট ফোন বের করল। দু’বার রিং হওয়ার পর ফোন ধরল সেলমা।
‘গুড মর্নিং, সেলমা।
‘আফটারনুন। এখানে বিকেল। ৬ ঘন্টার পার্থক্য আছে। অবশ্য আরও সঠিক করে বলতে গেলে তোমরা এগিয়ে আছে। তাহলে পার্থক্য দাঁড়াচ্ছে ১৮ ঘন্টার।
‘একদম ঠিক বলেছ। আচ্ছা, কোনো জাহাজের খোঁজ পেলে?
‘আমাদের ভাগ্য ভাল। অস্ট্রেলিয়া থেকে একটা জাহাজ আসছে। অবশ্য কয়েকদিনের মধ্যে ওটা আর ওখানে থাকতে পারবে না। আবহাওয়া সুবিধের নয়। আর হ্যাঁ, সত্যি কথা বলতে ওটা জাহাজ নয়। ১০০ ফুট দীর্ঘ অভিযানমূলক ইয়ট। গতি সর্বসাকুল্যে ১২ নট।
‘দারুণ খবর।
‘ওটা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে রিসার্চ করছিল। যে ইন্সটিটিউট ইয়টটার মালিক তাদেরকে বলে তোমাদের কাজের জন্য একটা সাইড ট্রিপের ব্যবস্থা করেছি।
‘হু, সাইড ট্রিপ বটে।
‘আচ্ছা, গোয়াডালক্যানেলে তোমাদের দিনকাল কেমন যাচ্ছে? আমি তো শুনেছি জায়গাটা নাকি খুবই সুন্দর।
স্যাম ওকে কুমীরের আক্রমণের ঘটনা বলল। সব শুনে কিছুক্ষণের জন্য চুপ রইল সেলমা।
‘ভয়াবহ ঘটনা। তোমরা এখনও ওখানে কী করছ? নিরাপদ কোথাও চলে যাচ্ছ না কেন?
‘আমি রেমিকে প্রতিনিয়ত বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি, আমাকে এসব থেকে রেহাই দাও। এবার অবসর নিই। কিন্তু সে কী আর আমার কথা শোনে!’ বলতে বলতে রিয়ারভিউ আয়না দিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকাল স্যাম। দেখল, রেমি আপত্তিসূচক মাথা নাড়ছে।
‘ইয়ট তোমাদের ওখানে পৌঁছতে আরও তিন-চারদিন লাগতে পারে। ততদিন পর্যন্ত নিজেদেরকে নিরাপদে রাখো আর অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকো। ভুলেও কুমীরদের ধারে কাছে যেয়ো না। কুমীর তো আছেই, আমি জেনেছি গ্রেট হোয়াইট শার্কও আছে ওখানে।
‘জেনে খুশি হলাম। আমাদের জন্য দেয়া কোরো।’
ফোন রাখল স্যাম। রেমি ওর দিকে ঝুঁকল। কী বলল, সেলমা?’
বলল, রেমি যেন শার্ক পানচিং (ঘুষি) চর্চা করে।