“অবশ্যই। পুরোটাই প্রেজেন্টেশন আকারে রেডি আছে।
‘আমরা কি একটা কপি পেতে পারি? রেমি প্রশ্ন করল।
অবশ্যই। আপনাদেরকে একটা কপি দিতে পারলে আমিও খুশি হব। আপনারা তাহলে সত্যিই এখানকার ক্লিনিকের জন্য দান করতে আগ্রহী? জানতে চাইল ভ্যানা। ওর কণ্ঠস্বরে চাপা উত্তেজনা।
স্যাম বিয়ার খাওয়া শেষ করেছে। কথা দিচ্ছি না। আগে দেখি, তারপর বলব।
মাছের ডিশ হাজির। খাবারের উপর প্রথম হামলা করল ম্যানচেস্টার। ওর হামলে পড়া দেখে যে-কেউই বুঝতে পারবে এই লোক বেজায় ভোজন রসিক। কোনো খাবারে এর অরুচি নেই। মাছ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলল না। সবাই চুপ। খাওয়া শেষে পেছনে হেলান দিল স্যাম। ‘দারুণ তো। মাছগুলোকে বোধহয় মাত্র ধরে এনেছে। একদম টাটকা।
মাথা নেড়ে সায় দিল ভ্যানা। কয়েক ঘণ্টা আগে হয়তো এনেছে। সৌভাগ্যবশত এখানে প্রচুর সামুদ্রিক খাবার পাওয়া যায়। কোনো কমতি নেই। এই একটা দিকে আমরা ভাগ্যবান।
এখানে অনেক খনিজ পদার্থও আছে। কিন্তু উপযুক্ত প্রযুক্তি ও লোকবলের অভাবে আমরা ওগুলোকে মাটির নিচ থেকে তুলতে পারছি না। তিক্ত কণ্ঠে বলল ম্যানচেস্টার।
‘তাই?’ স্যাম প্রশ্ন করল। কীরকম খনিজ পদার্থ আছে?’
‘তেল, ভাই। তেল। কত তেল চাই আপনার? তাছাড়া সোনা, পান্না, রুবিসহ আরও অনেক কিছুই আছে। সৌদির চুতিয়া বাদশাগুলোর চেয়েও আমরা ধনী হতে পারতাম। কিন্তু কপাল দোষে আমরা নিজেরাই নিজেদের পেছনে বাঁশ দেয়ার জন্য ছুটে মরছি।’
‘এই তো ভাষণ শুরু হলো।’ মন্তব্য করল ভ্যানা। ওয়েটার এসে ইতিমধ্যে টেবিল থেকে প্লেটগুলো সরিয়ে ফেলেছে।
ইতিহাস বলে, আমাদের এখানে বিদেশিরা এসে ইচ্ছেমতো লুটপাট করে গেছে। আচ্ছা, আপনি আমাদের ইতিহাস কতখানি জানেন?’ ম্যানচেস্টার বলল।
‘বেশি কিছু না।’ জবাব দিল স্যাম।
‘অনেক বছর আমরা ব্রিটিশদের অধীনে ছিলাম। তারপর জাপানীরা দ্বীপের দখল নিয়ে নিয়েছিল। তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে আবার ব্রিটিশদের হাতে গিয়ে পড়েছিলাম আমরা। ফুটবলের মতো একবার এদিক তো আরেকবার ওদিক… এভাবে আমাদেরকে লাখানো হয়েছিল। কোনো স্বকীয়তা, সার্বভৌমত্ব ছিল না। সবসময় কারও না কারও অধীনে ছিলাম।’ ফাটা হাসি দিল ম্যানচেস্টার। ভাগ্যের ফের দেখুন… কাড়ি কাড়ি প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বসে থেকেও আমরা সবাই গরীব। এরকম করুণ কাহিনি আপনি দুনিয়ার আর কোথাও পাবেন না।’
হাঁপ ছাড়ল ভ্যানা। এই একই ভাষণ ও এরআগে বহুবার শুনেছে। এরপর ও সোনার খনি নিয়ে কথা বলবে, আমি জানি।
‘আচ্ছা, তাহলে এখানে এখনও সোনা আছে? জানতে চাইল রেমি।
‘অবশ্যই আছে। কিন্তু এখানকার লোকদের হাবভাবে সেটা মনেই হচ্ছে না, তাই তো? আর ভ্যানা তো ইতিমধ্যে আমাদের সরকার ব্যবস্থার বেহাল দশা সম্পর্কে বলেই দিয়েছে। জনগণ সন্তষ্ট না হওয়ায় নিয়মিত সরকার পরিবর্তন হয়। তাই রাজনীতিবিদদের মূল লক্ষ্য থাকে কীভাবে মেরে কেটে নিজের পকেট বোঝাই করবে। এটাকে একধরনের দুষ্ট চক্র বলতে পারেন। তবে একমাত্র আমিই টানা ২০ বছর যাবত টিকে আছি।’
ম্যানচেস্টারের দিকে তাকাল ভ্যানা। এখানে যদি একজন ভাল মানুষ থেকে থাকে তাহলে সেটা অরউন। আমাদের গোয়াডালক্যানেলে অনেক রকম সমস্যা আছে ঠিকই, কিন্তু এখানকার জনগণের মনটা বড়।
বিয়ারের বোতল খালি করল ম্যানচেস্টার। কুমীরও বড়। ওদের একটা ব্যবস্থা করা দরকার।’
আলোচনার গতি কমে গেছে। একদম মোক্ষম সময়ে ভ্যানা উপযুক্ত প্রসঙ্গ টানল। কিছু বিষয় স্বীকার করে নেয়া দরকার। আমি আপনাদের দুজনের কাছে পুরোপুরি সৎ থাকতে চাই।’ নিচু স্বরে বলল সে।
‘তাই?’ ভ্রূ উঁচু করে রেমি প্রশ্ন করল।
‘হ্যাঁ। ঘাটাঘাটি করার অভ্যাস আছে আমার। পোশাক বদলাতে বাসায় গিয়ে স্যাম আর রেমি ফারগো লিখে গুগলে সার্চ করেছিলাম। বুঝতেই তো পারছেন আপনাদের ব্যাপারে কী কী জেনেছি।
স্যামকে অপ্রস্তুত দেখাল। ইন্টারনেটে যা পড়া হয় তার সবকিছু বিশ্বাস করা যায় না।
হয়তো।’ ম্যানচেস্টারের দিকে তাকাল ভ্যানা। অরউন, তুমি কিন্তু এখন সেলিব্রিটিদের সাথে বসে আছ! স্যাম আর রেমি হলেন স্বনামধন্য ট্রেজার হান্টার। গুপ্তধন খুঁজে বের করার কাজে ওনাদের অনেক সুনাম আছে।’
ম্যানচেস্টারের মুখ দেখে মনে হলো কেউ বোধহয় ওর মুখে পাথর ছুঁড়ে মেরেছে। ট্রেজার হান্টার?
মিডিয়ার কাজই এই। সবকিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি। বিনয় দেখাল রেমি। ‘আমরা সৌভাগ্যবান বেশকিছু উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের সন্ধান বের করতে সক্ষম হয়েছি। প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক অনেক প্রজেক্ট পরবর্তীতে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের হদিস পাইয়ে দিয়েছে। তবে ট্রেজার হান্টার মানে এই না যে, আমরা গুপ্তধন উদ্ধার করে নিজেরা নিয়ে নিই। যা কিছু উদ্ধার করা হয় সব বুঝিয়ে দেয়া হয় উপযুক্ত মালিককে, যাতে সেগুলো বিভিন্ন দাঁতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করা যায় ও তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়।
‘একদম ঠিক। কিন্তু পত্রিকায় অনেক কিছু বানিয়ে বানিয়ে লেখে। ওদেরও তো পেট চালাতে হবে নাকি!’ স্যাম বলল।
‘বুঝেছি, ফারগো দম্পতি গুপ্তধন উদ্ধারের পাশাপাশি অনেক বিনয়ী। বলল ভ্যানা। অরউন, ইনারা স্বামী-স্ত্রী মিলে যত গুপ্তধন উদ্ধার করেছেন পৃথিবীর আর কেউ অতটুকু, করতে পারেনি। অথচ এদের সরল কথাবার্তা শুনে কিছু বোঝার উপায় নেই।