‘একদম, রেমি বলল। সামুদ্রিক খাবার আমার পছন্দ।
‘আমারও। একমত হলো স্যাম।
রেস্টুরেন্টের বাইরের কাঠের দেয়ালের রং নীল। তবে সময়ের বিবর্তনে সেটা ঝাপসা নীল হয়ে গেছে। দরজার উপরে সাদামাটা হস্তাক্ষরে রেস্টুরেন্টের নাম লেখা: Eleanor’s.
‘এটার মালিক একজন মহিলা। তাঁর হাতে জাদু আছে! দারুণ সব রেসিপি করে। যা তৈরি করে সবই ভাল। কোনোটাতেই আপনাদের অরুচি হবে না। ভ্যানা ওদেরকে নিশ্চিত করল।
বাইরের মতো ভেতরেও একই দশা। একদম সাদামাটা। তবে রান্নাঘর থেকে দারুণ সুঘ্রাণ ভেসে আসছে। স্থানীয় লোকজন খাবার খাচ্ছে ডাইনিং এরিয়ায়। পেছনের দিকে থাকা এক টেবিলের দিকে এগোল ভ্যানা। কয়লার মতো কালো দেখতে একজন হৃষ্টপুষ্ট লোক স্যুট-টাই পরে বসে রয়েছে। ভ্যানাদেরকে দেখে হাসল সে। ওরা এগিয়ে আসতেই উঠে দাঁড়াল স্যুট পরা ব্যক্তিটি। সে এতই লম্বা যে আর একটু হলেই রেস্টুরেন্টের ছাদে গিয়ে তার মাথা ঠেকতো। ভ্যানা পরিচয় করিয়ে দিল।
‘স্যাম ফারগো ও রেমি ফারগো… ও হচ্ছে অরউন ম্যানচেস্টার। অরউন। এখানকার একজন খাঁটি সেলিব্রেটি। আমাদের সংসদে টিকে যাওয়া কয়েকজন সদস্যের মাঝে ও একজন।
‘ধন্যবাদ, ভ্যানা। খুব ভাল বলতে পারো তুমি। তোমার তো সরকারের হয়ে কাজ করা উচিত। ভাল করতে পারবে।’ বলল ম্যানচেস্টার। তার কণ্ঠস্বর বেশ ভরাট। তবে রসিক বলে মনে হলো। “Halo olkata,” স্থানীয় ভাষায় অভিবাদন জানাল সে। তার সাথে রেমি হাত মিলালো। ম্যানচেস্টারের হাত রেমির হাতের চেয়ে সাইজে দ্বিগুণ বড়। স্যামও হাত মিলালো। খেয়াল করল অরউন তার হাতের ব্যাপারে বেশ সচেতন। অতিথিদের হাতে যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন করছে।
‘হয়েছে। এত বিনয় তোমাকে মানায় না, অরউন। তুমি সলোমন আইল্যান্ডের আইকন ব্যক্তিত্ব। বলল ভ্যানা।
‘আমার ভাগ্যটা ভাল। ম্যানচেস্টার মাপা হাসিতে জবাব দিল। ভাল ডাক্তাররা সবকিছু বাড়িয়ে বলে। আমি এমন একটা পেশায় জড়িত যেটায় কেউ আসতে চায় না। তাই আমার কাজে তেমন প্রতিযোগী নেই, প্রতিযোগিতাও নেই।’
ভ্যানার মতো ম্যানচেস্টারের ইংরেজি উচ্চারণও সুন্দর। বোঝা গেল সে ও অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষাব্যবস্থার অধীনে পড়ালেখা করেছে। টেবিলের চারপাশে বসল সবাই। ওয়েটার হাজির, হাতে কোনো মেনু নেই। পটপট করে মেনু বলে গেল সে। কিছু বুঝতে না পেরে হতভম্ব হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাল স্যাম ও রেমি।
বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে ভ্যানা এগিয়ে এলো। যদি আপনারা বিয়ার নিতে চান তাহলে এখানকার সলব্রিউ ভাল হবে। এক বন্ধুর কাছে শুনেছি ড্রিঙ্কসকে ঠাণ্ডা রাখার বিশেষ ব্যবস্থা আছে এদের। আর এখানে কিন্তু ভাল সোডাও পাওয়া যায়।
একটা কোলা চাইল রেমি! ম্যানচেস্টার আর স্যাম বিয়ার অর্ডার করল। স্রেফ এক বোতল পানি নিল ভ্যানা, বলল সোডার সাথে ক্যাফেইন আর চিনি খেলে ওর সারারাত ঘুম হবে না। এই দ্বীপের প্রায় কোনো মেয়েই অ্যালকোহল পান করে না। আমাকে এখন যদি কেউ দেখে এখানে বসে অ্যালকোহল খেয়েছি তাহলে পুরো দ্বীপে কানাঘুষা শুরু হয়ে যাবে।’ ভ্যানা বলল। অস্ট্রেলিয়ায় এসব খেতাম। এখানে মিস করি। ঠাণ্ডা বিয়ার আর ভাল ওয়াইন।
‘আপনাকে হিংসা করতে পারছি না, ওয়েটার ড্রিঙ্কসের বোতল আর চারটা এক পৃষ্ঠার মেনু দিয়ে যাওয়ার পর বলল স্যাম।
‘কপাল ভাল, এই নিয়ম পুরুষদের উপর প্রযোজ্য নয়। চিয়ার্স! ম্যানচেস্টার বোতল তুলে টোস্ট করল। বোতলে বোতলে ঠুকে চুমুক দিল স্যাম। বলল, “ভাল তো। এটা নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
‘কোনো বিয়ারই স্যামের খারাপ লাগে না।’ রেমি মেনু পড়তে পড়তে বলল। মেনু আপনিই ঠিক করুন, নাকি?
‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’ বলল ভ্যানা। মাথা নেড়ে ম্যানচেস্টার সম্মতি দিল।
পাশের টেবিলের দিকে তাকাল স্যাম। স্থানীয় লোকজন হাত দিয়ে মাছ খাচ্ছে। ম্যানচেস্টার বিষয়টা খেয়াল করে হাসল। হাত দিয়ে খাওয়া এখানকার প্রচলিত রীতি। চিন্তার কিছু নেই। আমাদের টেবিলের সবাই কাঁটা চামচ আর ছুরি ব্যবহার করেই খাবে।
৪ টা টাটকা মাহি মাহি ডিস অর্ডার করল ওরা। ওয়েটার মেনুগুলো নিয়ে ফিরে গেল।
‘আপনারা এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করতে এসেছেন, তাই?’ ওয়েটার যাওয়ার পর বলল ভ্যানা।
রেমি মাথা নাড়ল। এক বন্ধুকে সাহায্য করছি।
‘গোয়ালক্যানেলে এসেছেন কবে?’ ম্যানচেস্টার প্রশ্ন করল।
আজ সকালে।
‘প্রথম দিনেই কাহিনি হয়েছে, অরউন। কুমীরের কামড় খাওয়া এক লোককে নিয়ে হাসাপাতালে এসেছিলেন ওরা। সেখানেই পরিচয় হয় আমাদের।’
‘ও খোদা! সত্যি? নাকি মজা করছ?’ বলল ম্যানচেস্টার। সত্যি সত্যি অবাক হয়েছে।
মজা হলে তো ভালই হত। কিন্তু এটাই সত্য।’ স্যাম জানাল। কুমীরকে মেরে ফেলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু অনেক রক্ত ঝরেছে লোকটার।
‘মর্মান্তিক। আমি দুঃখিত, দ্বীপে এসেই আপনাদেরকে এরকম একটা পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। আমরা সাধারণত চেষ্টা করি কুমীর আর অ্যাটনীরা যেন পর্যটকদের কাছ থেকে দূরে থাকে। অন্তত শুরুতে সেরকমটাই করা হতো। এরকম আক্রমণ হলে তো পর্যটন ব্যবসা লাটে উঠবে।’ থামল সে। অ্যাটনী আর কুমীরের মধ্যে পার্থক্য নেই। তবে ভাল অ্যাটনীরা বন্ধুর মতো আচরণ করে।