‘দশ বছর পর্যন্ত আমি এখানেই ছিলাম। তারপর আমার পরিবার সিডনি চলে যায়। ওখানকার স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর কোনো একসময় আমার স্থানীয় উচ্চারণ মুছে গেছে। হাসল ভ্যানা। কিন্তু একটা কথা আছে, শুনেছেন বোধহয়… “দ্বীপের বাসিন্দাকে দ্বীপের বাইরে নেয়া গেলেও তার বুক থেকে দ্বীপ নেয়া যায় না।” গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর আমি আমার মাতৃভূমিতে এসে সেবা করতে চেয়েছিলাম। তাই ৯ বছর আগে আবার এই দ্বীপে ফিরে আসি।’
‘দারুণ।’ বলল স্যাম।
‘এখানে আমার বর্তমান প্রজেক্ট হলো, একাধিক গ্রাম্য ক্লিনিক খোলার জন্য অনুদান সংগ্রহ করা। দেখে মনে হতে পারে দ্বীপটা ছোট। কিন্তু যখন আপনার কোনো দূর্ঘটনা হবে কিংবা কোথাও কেটে-ছড়ে যাবে তখন দেখবেন পথ আর শেষ হতে চাইছে না। তাছাড়া বিভিন্ন রোগের টিকা এখানে সহজলভ্য নয়। আমাদের এখানকার সরকার ব্যবস্থা সবসময় নাজুক। কোনো স্থিতিশীলতা নেই। তাই যা করার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই করতে হয়।’
‘দারুণ উদ্যোগ।’ স্যাম প্রশংসা করল। এ-ব্যাপারে আমাদেরকে আরও কিছু জানাতে পারেন?
‘কেন? অনুদান দেবেন?’ একটু খোঁচা মেরে বলল ভ্যানা।
এবার রেমি এগিয়ে এলো। আমরা একটা ফাউণ্ডেশন চালাই। ফাউণ্ডেশন থেকে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দাঁতব্য প্রতিষ্ঠানে অনুদান দেয়া হয়।
পরপর দু’বার চোখের পলক ফেলল ভ্যানা। তারপর অপ্রস্তুতভাবে হাসল। ইয়ে, তাহলে তো আপনাদেরকে অবশ্যই আমার সাথে ডিনার করতে হবে। এখানে আছেন ক’দিন?
শ্রাগ করল রেমি। এখনও ঠিক করিনি।’
স্যাম মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “দ্বীপ থেকে আমারদেরকে যতদিন না বের করে দেয়া হচ্ছে!
হেসে উঠল সবাই। ভ্যানা মাথা নাড়ল। আপনারা সম্প্রতি যা করে দেখিয়েছেন সেটাকে বীরত্ব বললেও কম বলা হবে। সত্যি! আজ সন্ধ্যায় যদি হাতে কাজ না থাকে তাহলে চলুন একসাথে ডিনার করি। আমার সাথে এক সহকর্মী থাকবেন। আপনাদের প্রজেক্ট নিয়ে সে কথা বলতে আগ্রহী হবে, আমি নিশ্চিত। আমাদের এখানে আর্কিওলজিস্টটরা খুব একটা আসেন না। আর হ্যাঁ, আমার ক্লিনিক সম্পর্কে অবশ্যই বলব।
স্যামের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করল রেমি। আমরা অযাচিত অতিথি হয়ে যাব না? আপনি নিশ্চিত?
“একদম, ভ্যানা বলল। সত্যি বলতে, এখানে টানা কাজ করতে করতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি। নতুন মুখদের সাথে বসে নতুন নতুন গল্প শুনতে ভাল লাগবে। তবে একটা কথা বলে রাখা হলো, আমার এই দাওয়াতের পেছনে কিন্তু শতভাগ স্বার্থ কাজ করছে।
‘সমস্যা নেই।’ স্যাম বলল। আমরা তাহলে আপনার সাথে এখানে দেখা করব?’
যদি চান। থামল ভ্যানা। কী যেন ভাবছে। কিংবা আমি-ই আপনাদের কাছে চলে আসতে পারি। প্রথমে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হব তারপর পোশাক বদলে চলে আসব, অবশ্য বৃষ্টি থাকলে ভিন্ন কথা। আপনারা যেন কোন হোটেলে উঠেছেন?’
ভ্যানাকে হোটেলের ঠিকানা দিল স্যাম। রাত আটটায় হোটেলের লবিতে দেখা করবে বলে ঠিক করল। আরও একমিনিট রিকির সাথে থাকল ভ্যানা। আংকেল বেনজির শারীরিক অবস্থা ওকে বুঝিয়ে বলল। তারপর ভাঙ্গা হাত নিয়ে আসা শ্রমিকটিকে পরীক্ষা করে চলে গেল ভেতরে।
০৬. ডা. ভ্যানার মেসেজ
০৬.
ডা. ভ্যানা কোনো মেসেজ দিয়ে গেছে কিনা সেটা দেখতে হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্কে খোঁজ নিল স্যাম ও রেমি। ক্লার্ক ওদেরকে একটা মেসেজ স্লিপ ধরিয়ে দিল।
কাজ হয়েছে দেখা যায়, নোটটা পড়তে পড়তে বলল স্যাম। লিও আগামীকাল সকাল ছ’টায় আমাদেরকে নিতে আসবে।’
‘কুমীর ভর্তি জলাভূমিতে ডাইভ দিতে আমার কেমন যেন লাগছে,’ রেমি বলল।
ভুল বললে ওটা জলাভূমি নয় আর কুমীর তো মাত্র একটা ছিল।’
‘আচ্ছা, পানির নিচে যদি কুমীর আক্রমণ করে তাহলে ঠিক কী উপায়ে আত্মরক্ষা করতে হয়? হাঙ্গর থেকে বাঁচার জন্য যে-রকম কায়দা ব্যবহার করা হয় সেরকম নাকি?
“চিন্তার কিছু নেই! কুমীর থেকে বাঁচার কায়দা আমার জানা আছে।’
‘ভাল। তো তোমাকে যখন একটা কুমীর আক্রমণ করবে তখন কী করবে শুনি?
এটা কোনো ব্যাপার হলো!’ স্যাম বলল। আমি দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটতে পারি।
কুমীরের চেয়ে দ্রুত সাঁতার কাটাতে পার না নিণ্ডয়ই?’
‘তা ঠিক। কিন্তু যা পারি তাতেই যথেষ্ট। হাসল স্যাম। গতিতে তোমাকে হারাতে পারলেই চলবে।
পাল্টা হাসি দিল রেমি। ফাজিল।
‘নোনাপানির কুমীররা কম নড়াচড়া করে। সে-হিসেবে আমরা যেখানে ডাইভ দিতে যাচ্ছি সেখানে ওদের হানা দেয়ার সম্ভাবনা নেই। নিরাপদ থাকব আমরা। তারপরও চোখ-কান খোলা রাখব। সাবধানের মার নেই।’
‘প্রার্থনা করি, কেউ কুমীরদেরকে গিয়ে বলে আসুক, ওরা যেন আমাদের ডাইভিং এরিয়ায় হাজির না হয়।’
কাদায় মাখামাখি হয়ে যাওয়া একটা সিলভার মিতসুবিশি নিয়ে হাজির হলো ডাক্তার ভ্যানা। স্যাম আর রেমি পেছনের সিটে গিয়ে বসে সিটবেল্ট বেধে নিল। সন্ধ্যা নামছে। বৃষ্টি থেমে গেলেও রাস্তার অনেক জায়গায় পানি জমে আছে এখনও। খানা-খন্দ দেখে খুব সাবধানে ডা. ভ্যান গাড়ি চালাচ্ছে।
‘আশা করি, আপনারা সামুদ্রিক খাবার পছন্দ করেন। এই দ্বীপে খুব ভাল পাওয়া যায় ওগুলো! একদম তরতাজা টাটকা, যদিও সৌন্দর্যের বিচারে একটু ঘাটতে আছে। তবে বিশ বছর ধরে এখানে সামুদ্রিক খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। ভাল তো হবেই।’