কিন্তু গাড়ির ভেতরে চোখ পড়তেই ওদের হাসি থেমে গেল। বেনজির রক্ত দেখতে পেয়েছে ওরা। গাড়ি ধোয়ার আধঘণ্টা রেমি, স্যাম আর লিও এক বটগাছের ছায়ায় বসে কাটাল। ওরা দেখল ছেলেগুলো বেশ অস্বস্তির সাথে গাড়ি ধোয়ার কাজ করছে।
হঠাৎ একটা পুলিশের গাড়ি উপস্থিত হলো। দু’জন অফিসার এলো ওদের তিনজনের দিকে। কুমীরের আক্রমণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসবাদ করার পর হাসপাতালে রেডিওতে যোগাযোগ করল তারা। সবকিছু চেক করে, নিশ্চিত হয়ে বিদেয় হলো।
পুলিশ চলে যাওয়ায় যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল লিও। দূরে কোথাও মেঘ ডাকার আওয়াজ শুনে আকাশে জমা কালো মেঘের দিকে তাকাল।
শব্দ শুনে মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি কাছে আসছে,’ মন্তব্য করল লিও।
বৃষ্টি হলে পানি ঘোলা হয়ে যাবে। কালকে পানিতে ডাইভ দেয়ার পর আমরা হয়তো নিচে দূরের কিছু ঠিকভাবে দেখতে পাব না। স্যাম বলল। আশা করি, তুমি সাথে আছে।’
‘সাগর পাড়ের অত বড় কুমীর কি তোমার চোখে পড়েনি? জানতে চাইল রেমি।
‘পড়েছে। এখন আমরা জানি কুমীর কোথায় থাকে।
‘তুমি সিরিয়াস তো?’।
“আচ্ছা, জীবনে যদি একটু উত্তেজনা-ই না থাকে তাহলে আর মজা কোথায়?
ভ্রু কুঁচকাল রেমি। শব্দটা উত্তেজনা” নয়। “নিরাপত্তা” কিংবা “দীর্ঘ” হবে।’
স্যাম হাত তুলে আকাশ দেখাল। “ওই দেখ, আকাশের চেহারা। চলো, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাই। আংকেল বেনজির খোঁজ-খবর নিয়ে কিছু ডাইভিং গিয়ারের খোঁজে বেরোতে হবে। আমি বিষয়টাকে কাছ থেকে দেখতে চাই, সেজন্যই তো এখানে এসেছি। কুমীরের আক্রমণ হয়েছে বিচে। তারমানে সাগরের কোথাও আমরা নিরাপদ নই।
সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল স্যাম। কিন্তু নৌকা পাওয়া কঠিন হবে। আজ যেটাকে ভাড়া করেছিলাম সেটা আর কালকে আসবে না।’
‘আমাদেরকে হাসপাতালে নামিয়ে দেয়ার পর তুমি বিভিন্ন জায়গায় নৌকার খোঁজ করবে। যদি খোঁজ পাও হোটেলে মেসেজ দিয়ো।’ স্যাম বলল।
‘আর একটা কথা। কুমীরের আত্মীয়দের কথা মাথায় রেখে .৫০ ক্যালিবারের মেশিন গান যোগাড় করতে পারো কিনা দেখো।’ বলল রেমি।
লিও ওদেরকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছুতে পৌঁছুতে মেঘের গর্জন আরও কাছে চলে এলো। বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করার আগে কোনমতে ভেতরে ঢুকল ওরা। একেকটা ফোঁটা সাইজে গলফ বলের সমান। ওয়েটিং এরিয়ার ধাতব ছাদের উপর ধুমাধুম পড়ছে ওগুলো। ওয়েটিং রুমে চোখ বন্ধ করে রিকি বসে আছে, একদম চুপচাপ। লোজনের পরিমাণ এখন কিছুটা কম। কাশিঅলা বৃদ্ধ, ভাঙ্গা হাত নিয়ে এক শ্রমিক আর হাতে গভীর ক্ষত নিয়ে এক জেলে এখনও সেবার অপেক্ষায় বসে আছে।
রিকির পাশের বেঞ্চে গিয়ে বসল ওরা। রিকি নড়ে উঠলে চোখ খুলল। ওর দিকে তাকিয়ে হাসল রেমি। রিকিও ভদ্রতা করে হাসল।
‘কোনো খবর আছে? জানতে চাইল রেমি।
রিকি মাথা নাড়ল। নাহ। মাত্র কয়েক ঘণ্টা হইছে। এত তাড়তাড়ি কোনো খবর পামু বইলা আমি আশা করি নাই।’
সম্ভবত রিকির আংকেলের এক পা কাটা পড়বে। ওরকম ভয়ঙ্কর আক্রমণের পর বেঁচে থাকা রীতিমতো অলৌকিক ব্যাপার। সে-হিসেবে একটা পা হারানো খুব বড় কিছু নয়। দেখা যাক, কী হয়?
আরও এক ঘণ্টা চলে গেল। ইমার্জেন্সি রুম থেকে বেরিয়ে এলো ডা. ভ্যানা। তার পরনে এখনও সার্জিক্যাল স্ক্রাব রয়েছে। রিকি উঠে দাঁড়াল। স্যাম আর রেমিও যোগ দিল ওর সাথে।
‘সুখবর হলো, রোগী এখন আশংকামুক্ত। আমরা যথেষ্ট রক্তের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম। রক্তক্ষরণের বিষয়টা সামাল দেয়া গেছে। বাকিটা আগামী ২৪ ঘণ্টার উপর নির্ভর করছে। তবে এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো দূর্ঘটনার মানসিক ধাক্কা আর ইনফেকশন। রোগীর শরীরের অবস্থা ভাল, বয়সেও তরুণ তারপরও কোনো কিছু নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
আর পা?’ রিকি নরম সুরে জানতে চাইল।
কুমীরের দাঁতের কামড়ে হাড়গুলো শত শত টুকরো হয়ে গেছে। তার জায়গায় আমি হলে আমারও পা-ও কেটে ফেলতে হতো। দুঃখিত, পা-টা কাটতে হয়েছে।’
তাকে দেখতে পারি? জানতে চাইল রিকি।
ডা. ভ্যানা মাথা নাড়ল। তাকে কিছুটা সময় দিই আমরা, হুম? বিকেলে দেখা করা যাবে। স্যাম ও রেমির দিকে ফিরল ডাক্তার। আক্রমণের সময় আপনার অত কাছে ছিলেন কেন? কুমীররা সাধারণত টুরিস্ট বিচ থেকে দূরে থাকে।
‘আমরা তার সাথে দ্বীপের অপর পাশে ছিলাম। ওপাশে লোকজন তুলনামূলক কম। বলল স্যাম। তবে খুব একটা খোলাসা করল না। লিও’র অভিযানের বিষয়টা এখানে বলা ঠিক হবে না। কথা বাতাসের আগে চলে। তার উপর যদি শোনে পানির নিচে ইমারত আছে তাহলে তো কথাই নেই!
‘আপনারা এই দ্বীপে কী করছেন?
‘একটা প্রজেক্টে এক বন্ধুকে সাহায্য করছি।’ স্যাম জবাব দিল।
‘প্রজেক্ট?
‘আর্কিওলজি (প্রত্নতত্ত্ব)।
“ওহ। আপনারা আমেরিকান, তাই না?
‘কেন আমাদের উচ্চারণ শুনে তা-ই মনে হচ্ছে?’ রেমি প্রশ্ন করল।
“আসলে এখানকার বেশিরভাগ টুরিস্টরা আসে অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যাণ্ড থেকে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন অনেক আমেরিকান দেখেছি কিন্তু এখন আর অতটা চোখে পড়ে না। কয়েক বছর আগেও অনেক সাবেক সৈনিকরা এসে তাঁদের যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান দেখতেন, শ্রদ্ধা জানাতেন। কিন্তু এখন তারাও আর আসেন না।’
“আচ্ছা, আপনিও তাহলে দ্বীপের বাসিন্দা?’ রেমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল। ডা. ভ্যানার উচ্চারণে কোনো আঞ্চলিকতার রেশ নেই।