স্যাম ও লিও ওর পিছু পিছু উঠল। আমরাও আসছি তোমার সাথে। একা একা ভাল লাগবে না তোমার!
রেমি রিকির দিকে ফিরল। কোনো খবর পেলে আমাদেরকে জানিয়ো, হুম?
‘আইচ্ছা।’ এই গরমেও রিকি নির্বিকার। ‘ডা. ভ্যানা খুব ভালা ডাক্তার। চাচার সমস্যা হইব না।
কপাল ভাল বলতে হবে।’ ভ্রূ থেকে ঘাম মুছতে মুছতে ধলল রেমি।
কাছে বসা এক বৃদ্ধ লোক কেশে উঠল। শব্দ শুনে বোঝা গেল কাশিতে কফ আছে। রেমির হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে এলো স্যাম। বাইরের তাপমাত্রাও কম নয়। তবে ভেতরে বসে সেদ্ধ হওয়ার চেয়ে বাইরে থাকাই আরামদায়ক। কাছেই একটা ছাউনি দেখতে পেল ওরা। স্যাম নিজের শার্ট দেখল।
‘হোটেলে গিয়ে জামা-কাপড় বদলে এলে মন্দ হয় না। রেমি দিকে তাকাল ও ‘চলো, চট করে ঘুরে আসি?’
রেমি ল্যাণ্ড রোভারের দিকে তাকাল। যদি গাড়ি ধোয়ার ব্যবস্থা করতে পারো তাহলে আমি রাজি।’
মাথা নাড়ল লিও। আমি তোমাদেরকে লিফট দেব। এখানে দাঁড়িয়ে সেদ্ধ হওয়ার কোনো মানেই হয় না।’
ওরা গাড়িতে উঠল, ড্রাইভারের সিটে বসল স্যাম। সাগরপাড় থেকে তুফান গতিতে হাসপাতালে আসার পর এখন লিও’র সাবধানী গতির ড্রাইভিংকে কচ্ছপের গতি বলে মনে হচ্ছে। রাস্তায় চলাচলরত অন্যান্য যানবাহন দেখে লিও যারপরনাই বিরক্ত। ওর চেহারা দেখে মনে হলো কেউ ওকে নিম পাতার তেতো রস খাইয়ে দিয়েছে।
‘আমাদের কাজকর্ম এখন বন্ধ-ই বলা যায়,’ বলল লিও। এই ঘটনার পর ক্রুরা আর কাজে যোগ দেবে বলে মনে হয় না।’
‘ওদের সাথে তোমার কথা হয়েছে?
মাত্র দু’জন কাজে ফিরতে রাজি।’
“আর নৌকা?’
‘নৌকার ক্যাপ্টেনদের কেউ-ই এখন আর কাজ করতে চায় না। কপাল খারাপ।
কপাল খারাপ বেনজির, নিজের শার্ট দেখতে দেখতে রেমি বলল। আমি কল্পনাও করতে পারছি না তার এখন কেমন লাগছে।
‘তার কপাল ভাল, তোমরা দুজন ওখানে ছিলে। বাকিদের আশায় যদি আমরা অপেক্ষা করতাম তাহলে সে মারা যেত।’ বলল লিও।
‘রিকি বলল, এটা নাকি এখানকার মানুষের স্বভাব। এই দ্বীপে কোনোকিছুই দ্রুত নয়।’
কুমীর বাদে।’
হোটেলে পৌঁছে স্টাফ ও অন্যান্য অতিথিদের ভীত-সন্ত্রস্ত চাহনি এড়িয়ে রুমে চলে গেল ওরা। চটপট গোসল সেরে কাপড় বদলে আবার হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ওরা তৈরি হলো। এসি করা লবিতে লিও ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। ওর হাতে কয়েকটা ছবি। পানির নিচের দৃশ্য আছে ওগুলোতে। স্যাম আর রেমি এসে লিও’র দু’পাশে বসল।
‘এই ছবিটা দেখ, ব্যাকগ্রাউণ্ডে আরেকটা স্ট্রাকচার চোখে পড়বে। ডাইভ টিমের প্রধান যে ছিল, তার ধারণা নিচে এরকম আরও ছয়টা আছে কিংবা বেশিও হতে পারে। একটা ছবি দেখিয়ে বলল লিও।
‘যদি তার কথা সত্যি হয় তাহলে এটা একটা উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হবে। জিনিসটা এতই প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ যে কারও মনে পর্যন্ত নেই। তবে স্ট্রাকচারগুলোর অবস্থান যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং।’ রেমি বলল।
‘তা তো অবশ্যই, কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ হয়েছিল বোধহয়।’ বলল স্যাম। এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের রেকর্ড আছে। হতে পারে ভূমিকম্পের ফলে ওগুলো পানির তলায় চলে গেছে।
‘হুম। কিন্তু আমার কাছে আরও ইন্টারেস্টিং লেগেছে এটার নির্মাণ। পাথর দিয়ে বানানো। এই অঞ্চলে তো পাথুরে ভবন সম্পর্কিত কোনো ইতিহাস নেই। অতীতের ব্যাপারে খুব গুরুত্বপূর্ণ সূত্র এই স্ট্রাকচার। সেই অতীত সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই নেই। লিও জানাল।
এই স্ট্রাকচারের ব্যাপারে কোনো রেকর্ড নেই, বিষয়টা অস্বাভাবিক নয়? রেমি জানতে চাইল।
ছবিগুলো নামিয়ে রাখল লিও। আমার কাছে অস্বাভাবিক নয়। এই অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর বসবাস ছিল। মৌখিক সংস্কৃতি ছিল সবার। দ্বীপে প্রায় ৭০ টি ভাষার প্রচলন আছে। হতে পারে এই স্ট্রাকচারের ব্যাপারে যারা জানতে তাদের কেউ আর বেঁচে নেই। চিন্তা করে দেখ, কত বড় ভূমিকম্প হলে সাগরপাড়ের অতখানি অংশকে ধসিয়ে দিয়ে পানির তলায় পাঠিয়ে দিতে পারে।’
স্যামের মাথায় ভিন্ন ধারণা ঘুরছে। তাহলে ধরে নিতে হবে ওগুলো সাগরপাড়ে নির্মিত ছিল?
প্রশ্নবোধক দৃষ্টিকে ওর দিকে তাকাল রেমি। তো? তুমি কি ভিন্ন কিছু ভাবছ?’
নান মাডোল সম্পর্কে শুনেছ কখন?
না।
“তিনি কোরাল শৈলশিরার (শৈলশিরাকে ইংরেজিতে রিফ বলে। পানির কিঞ্চিৎ উপরে কিংবা নিচে থাকে) উপরে পাথর দিয়ে দ্বীপ তৈরি করেছিলেন। ভেনিসেও এরকম চেষ্টা করা হয়েছিল। সেটা অবশ্য কয়েকটি আন্তঃসংযোগ খালের উপর।’ ব্যাখ্যা করল স্যাম।
লিও ওর দিকে তাকাল। যদি এটা রিফ বা ল্যাগুন (উপহ্রদ) এর উপর নির্মাণ করা হয়ে থাকে তাহলে সমুদ্রের তলায় ডুবে থাকার সহজ ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব। বড় ভূমিকম্পে শৈলশিরা ধসে পড়লেই…’
‘একদম ঠিক। তবে নিচে ডাইভ দেয়ার আগপর্যন্ত এই হচ্ছে আমার ধারণা। সেলমা আমাদের জন্য রিসার্চ শিপ পাঠিয়ে দিলে আমরা এ-ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে পারব।’
হোটেল লবির ঠাণ্ডা পরিবেশ থেকে বাইরের গরম আবহাওয়ায় বেরোল ওরা। হাসপাতালের দিকে রওনা হলো। আকাশে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে।
লিও এখানে রয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল। তাই গোয়াডালক্যানেলের আবহাওয়ার মতিগতি ওর এতদিনে বোঝা হয়ে গেছে। নির্বিকারভাবে আকাশের দিকে তাকাল ও। গাড়ির ভেতরে কসাইখানার মতো দূর্গন্ধ। এক মুদি দোকানের পাশে কার-ওয়াশ (গাড়ি ধোয়ার দোকান/গ্যারেজ) দেখতে পেয়ে গাড়ি দাঁড় করাল লিও। এটা কোনো আধুনিক কার-ওয়াশ নয়। এখানে বালতিতে করে পানি এনে গাড়ি ধোয়া হয়। কার-ওয়াশে কর্মরত ছেলেরা হাসতে হাসতে কাজ করছে। ওদের গায়ে কোনো শার্ট নেই, পা-ও নগ্ন।