মাথা নেড়ে সায় দিল রেমি। এখান থেকে ৫০ ফুট সামনে টানেলটা পুরোপুরি মানুষের নির্মিত। একদম মসৃণ। ওটা বেশ উজ্জ্বল। আলোটা ওখান থেকেই আসে।
সামনে এগিয়ে গেল ওরা।
মসৃণ টানেলের মেঝের দিকে ঝুঁকল লিও। এটা দেখে তো মনে হচ্ছে। পালিশ করা।
‘বড় অদ্ভুত। এরআগে কখনও এরকম টানেল দেখিনি।’ ল্যাজলো বলল বিড়বিড় করে।
টানেলের পরে অন্ধকার। সেদিকে টর্চ তাক করল রেমি। এগিয়ে গেল। ওর পিছু নিল স্যাম। কিন্তু আচমকা রেমি ছুটে ফিরে এলো ওদিক থেকে। ওর চেহারা থেকে যেন সব রক্ত সরে গেছে।
কী হয়েছে, রেমি? কী দেখেছ?’ স্যাম জানতে চাইল।
“ওহ, স্যাম! ওই চেম্বারটা মরা মানুষে ভর্তি।
.
৫৫.
রব ও গ্রেগ চেম্বারের ভেতরে জেনারেটর বসিয়ে ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে দিল। উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হলো পুরো চেম্বার। ধাধিয়ে উঠল টানেল।
ক্যামেরা বসানো হয়েছে? জানতে চাইল স্যাম।
‘হ্যাঁ, ভিডিও করে রাখা হচ্ছে সব।’ রব সায় দিল।
কিছুক্ষণ পর উজ্জ্বল আলোতে ওদের চোখ সয়ে আসার পর পরীক্ষা করে দেখতে পেল টানেলটা সিলিকা দিয়ে তৈরি। তাই এভাবে আলো প্রতিফলন করে দিতে পারে।
রেমি আরও একটু ভাল করে পরীক্ষা করে বলল। সিলিকার সাথে সোনার দানাও আছে।’
অর্থাৎ, দানাদার সিলিকা ও সোনার মিশ্রণ দিয়ে এই টানেলটা তৈরি করা হয়েছিল।
‘রেমি ঠিকই বলেছে।’ সায় দিল লিও। অবশ্যই এরকম মিশ্রণযুক্ত খনি পৃথিবীতে খুব কমই আছে। গহনা তৈরির জন্য এগুলোর অনেক চাহিদা।
চেম্বারের গভীরে বৃত্তাকারে প্রায় ১০০ টা মমি বসিয়ে রাখা আছে। তবে মমিগুলোর গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। অর্থাৎ, এরা সবাই স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছিল।
সামনে একটা বড় ভল্ট দেখাচ্ছে। সবাই সেদিকে এগিয়ে গেল।
‘ও খোদা, এই ব্যক্তির মমি তো ১৭ ফুট লম্বা!’ আঁতকে উঠে বলল স্যাম।
‘তার পাশে থাকা নারী মমিটাও প্রায় কাছাকাছি দৈর্ঘ্যের।’ রেমি বলল।
বিড়বিড় করল লিও। জায়ান্ট… সত্যিকারের জায়ান্ট। লোককাহিনিগুলো সত্য। আচ্ছা, এগুলোর বয়স কত হবে?
‘প্রায় দুই-তিন হাজার বছর। এদেরকে সম্ভবত দেবতা হিসেবে পূজা করা হতো। জবাব দিল স্যাম।
‘কিন্তু অত বছর আগে তারা সাগরের মাঝখানে থাকা এই দ্বীপে এলো কীভাবে? রেমি জানতে চাইল।
‘সেটা বিশেষজ্ঞরা ভাল বলতে পারবে।’
মমিগুলোর অধিকাংশ নারী। তাদের পোশাকগুলো বেশ সুন্দর। সারা শরীর বিভিন্ন দামী রত্নের গহনায় ভরা।’
হাসল স্যাম। তখনকার দিনে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা পাথরের মতো মূল্যবান রত্ন খুব সহজেই পাওয়া যেত। তাই সবাই পরত ওগুলো।
এদের পরিচয় কীভাবে জানব আমরা? জানতে চাইল গ্রেগ।
যা দেখছি এরচেয়ে বেশি হয়তো জানা সম্ভব হবে না। তবে এখন আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে এটাকে গোপন রাখা। এখানকার সরকার যতদিন না পর্যন্ত এই মমিগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার মতো ল্যাব বা জাদুঘর তৈরি করার মতো অবস্থায় না যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত বিষয়টা গোপনই রাখতে হবে। নইলে নষ্ট হয়ে যাবে এগুলো।
‘ভাল বলেছ।’ রেমি সায় দিল। সরকার গুপ্তধন পেয়েছে এবার সেটাকে যথাযথ ব্যয় করার জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র পেল।
কী দরকার জাদুঘর করার? এখানেই তো ভাল আছে এতগুলো বছর ধরে।’ বলল লিও।
‘না, এদের বিষয়ে সবার জানা উচিত। তাই জাদুঘরের প্রয়োজন আছে। স্যাম নিচু গলায় বলল। আজ আমরা এখানে শুধু একটা ঐতিহাসিক স্থানই আবিষ্কার করেনি, সেইসাথে এমন একটা জাতি আবিষ্কার করেছি যেটার কথা কেউ জানতো না পর্যন্ত। সোনা, মূল্যবান রত্ন, তৎকালীন সময়ের চেয়ে উন্নত সমাজ… এবং জায়ান্ট; লোককাহিনিগুলো সব সত্য।