চাপড় দিয়ে একটা মশা মারল লিও। এইখানে আর কয়েকদিন থাকলে আমারও ম্যালেরিয়া হয়ে যাবে। তারপর চিকিৎসা করাতেই খরচ হবে সব ডলার!
‘ভাল দিক চিন্তা করো। হয়তো নিজের একটা রিসার্চ শিপও কিনে ফেলতে পারো।’ বলল স্যাম।
তা হচ্ছে না। আমার হাতে ডলার এসেছে শুনলে দেখবে কত কাজিন। এসে খাতির জমাতে চাইবে। পুরানো বান্ধবীগুলো উদয় হবে। যারা এতদিন ভুলেও আমার খোঁজ নেয়নি। এমনকি দেখা যাবে তাদের অনেককে আমার মনেই নেই।
ওরা সবাই বুঝল বড়লোক হিসেবে লিও’র ভাগ্য খুব একটা ভাল যাবে না হয়তো। অর্থ কারও কাছে উপভোগের আবার কারও কাছে বোঝ।
‘এই যে মিসেস ফারগো, আমার সাথে ভেতরে যাবে? ভেতরে একটা প্যাসেজ আছে। ওটায় এখনও কেউ যায়নি। চলো, দেখে আসি। প্রস্তাব দিল লিও।
‘আমাকে কেন নিতে চাইছ? রেমি জানতে চাইল।
‘তোমার আদরের স্বামী তো এখন সেলিব্রেটি। সাংবাদিকদেরকে সাক্ষাৎকার দিতেই ব্যস্ত। তাই তোমাকে নিতে চাচ্ছি। তাছাড়া ওদের চেয়ে তোমার সঙ্গই আমার বেশি ভাল লাগে।’
‘যাও, যাও। মুচকি হেসে বলল স্যাম। তবে কোনো সমস্যা হলে একটু চিৎকার কোরো। আমি, পুলিশ চিফ আর ল্যাজলো হাজির হয়ে যাব।
লিও আর রেমি ঢুকল গুহার ভেতরে। একটা বিশাল পাথরের সামনে থামল লিও।
‘এই যে, এই পাথরটায় সংকেত দেয়া আছে। আরেকটা প্যাসেজ আছে এখানে।’
হাতের লাইটটা পাথরের দিকে ধরল রেমি। আমি তো কোনো সংকেত দেখতে পাচ্ছি না।’
‘এটা একটা দরজা। খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল লিও। পাথরটার একপাশে কাঁধ ঠেকিয়ে শক্তি খাটাল ও।
‘লিও, তুমি অযথা সময় আর শক্তি নষ্ট করছ। এই পাথরটার সাইজ দেখেছ? কম করে হলেও ২০ ফুট লম্বা। ওজন হবে কয়েক টন…’।
এমন সময় ধীরে ধীরে পাথরটা দরজার মতো একপাশে সরে গেল। ব্যাপারটা কোনো এক যান্ত্রিক শক্তির সাহায্যে হয়েছে বলে মনে হলো।
“আরে এটা তো একটা টানেল। ফিসফিস করে বলল রেমি।
‘তুমি স্লিম আছো। তুমিই আগে ঢোকো।’
আপত্তি না তুলে রেমি ঢুকল ভেতরে। এটা দিয়ে কতদূর গিয়েছিলে?”
‘বেশি না। মোটামুটি ৬০ ফুটের মতো। তারপর আমার টর্চের ব্যাটারি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই অন্ধকারে আর এগোয়নি।
রেমি টর্চ নিয়ে এগোচ্ছে ধীরে ধীরে। হঠাৎ চিৎকার করে উঠল, “লিও!!
যাক দেখতে পেয়েছ তাহলে। এবার বুঝেছ কেন তোমাকে নিয়ে এসেছি?’
লিও আমি ভূতুড়ে আলো দেখতে পেয়েছি… কী ছিল ওটা?’
‘আমার মনে হয় কোনো পাথরে টর্চের আলো প্রতিফলিত হয়ে হয়েছে ওটা।
না, না। আমি নিশ্চিত ওটা একদম বাস্তব। কোনো প্রতিফলন নয়।
“ঠিক আছে। তাহলে তোমার হাতের টর্চ বন্ধ করে দাও। তারপর দেখো, ওই আলো আর দেখতে পাও কিনা।’
কথামতো টর্চ বন্ধ করল রেমি। কয়েকমিনিট কিছুই হলো না। তারপর হঠাৎ…
‘লিও, দেখো… আবার!
‘হুম দেখলাম। লিও এমনভাবে জবাব দিল যেন এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
‘বিষয়টা তদন্ত করতে হবে। তাগাদা দিল রেমি।
লিও কয়েকমুহূর্ত পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। ঝাঁকি দিল ওর হাতে থাকা টর্চ লাইটে। নিভু নিভু আলো নিয়ে জ্বলে উঠল ওটা।
‘তুমি এখানেই অপেক্ষা করো। আমি ওদেরকে নিয়ে আসছি।’
রেমি আপত্তি করল না।
প্রথমে আস্তে আস্তে পা ফেললেও পরে দ্রুত পা চালাল লিও। প্রতি পদক্ষেপে ওর দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
***
স্যাম ও ল্যাজলোকে নিয়ে গুহার ভেতরে ঢুকল লিও। সাথে আছে রব আর গ্রেগ। ওদের হাতে টর্চ।
‘রেমি কোথায়? জানতে চাইল স্যাম।
লিও হতভম্ব। রেমিকে ও যেখানে রেখে গিয়েছিল সেখানে কেউ নেই! ‘আমি ওকে এখানে অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। আমার মনে হয় সে একাই ভূতুড়ে আলোর তদন্ত করতে সামনে এগিয়ে গেছে।
লিও’র দিকে চোখ গরম করে তাকাল স্যাম। ভূতুড়ে আলো? তুমি তো এব্যাপারে এরআগে কিছু বলোনি?
‘টানেলের ওই মাথায় আলো প্রতিফলিত হয়। মানে টর্চ বন্ধ করার পরেও প্রতিফলিত হয় আরকী। আমি ভেবেছিলাম ওটা তেমন কিছু না…’।
‘আমাদের ওকে খুঁজে বের করতে হবে। চলোলা। আর সময় নষ্ট করা যাবে না।
সবার সাথে এগোচ্ছে স্যাম। যত সামনে এগোচ্ছে ভয়ে, দুশ্চিন্তায় ওর গলা শুকিয়ে আসছে। রেমিকে ও অনেক ভালবাসে। রেমি’র কিছু হয়ে গেলে সহ্য করতে পারবে না। এগোতে এগোতে মৃদু একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো টানেলের গভীর থেকে।
‘স্যা,…ম? স্যা….ম!
‘রেমি! চিৎকার করে উঠল স্যাম। ছুটে গেল শব্দের উৎসের দিকে। কোনো সম্ভাব্য বিপদের কথা মাথায় রেখে কোনো সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজনবোধ করল না।
‘রেমি! আমি তোমার ফ্ল্যাশলাইটের আলো দেখতে পাচ্ছি না। বলল স্যাম।
‘দেখবে কীভাবে? ব্যাটারি শেষ।’ রেমি অন্ধকারের আড়াল থেকে জবাব দিল।
কয়েক সেকেণ্ড পর রেমিকে দেখতে পেল স্যাম। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকে। ঠোঁটে কষে চুমো খেলো।
“লিও তোমাকে যেখানে রেখে গিয়েছিল তুমি ওখানে অপেক্ষা করলে না কেন? জানতে চাইল স্যাম।
‘আমি তো জানি ও তোমাদেরকে নিয়ে চলেই আসবে। ভাবলাম এই ফাঁকে একটু ঘুরে দেখি।’ রেমি সোজাসাপ্টা জবাব দিল।
স্ত্রী’র খুকির মতো জবাব শুনে হেসে ফেলল স্যাম। যা করেছ, করেছ। আর কখনও এমন করবে না। আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রেমিকে।
লিও সামনে এগিয়ে এসে কাশি দিল। এহেম, এহেম, রোমিও জুলিয়েটকে আবার একসাথে দেখে আমরা সবাই খুশি। এবার একটু কাজের কথা বলি। রেমি, ইন্টারেস্টিং কিছু দেখতে পেলে?