‘এখানে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট বাক্স দেখতে পাচ্ছি। সবগুলো ধূলোয় ঢাকা, অনেক অংশে পচন ধরে গেছে। ওদিকে সাবধান। হতে পারে ওগুলোর গায়ে বোম সেট করা আছে কিংবা বিষাক্ত কিছু মাখানো আছে। কেউ আগেই কিছুতে হাত দিয়ো না কিন্তু। তাছাড়া পায়ের দিকেও খেয়াল রেখো। ট্র্যাপের তার থাকতে পারে।’
ওরা সাবধানে গুহা দেখতে শুরু করল। একটু পর লিও রেমি’র দিকে তাকিয়ে হাসল। চলুন আমি একটা জিনিস পেয়েছি।’
মাথা নেড়ে লিও’র পিছু নিল রেমি। ওর পেছন পেছন স্যাম আর ল্যাজলোও রওনা হলো।
মানুষ নির্মিত একটা ছোট কৃত্রিম গুহা দেখতে পেল ওরা। ওখানে কম করে হলেও ১৫ টা কাঠের বাক্স আছে, সবগুলো একটার উপর একটা রেখে স্তূপ করা। প্রত্যেকটা ২ ফুট বাই ২ ফুট সাইজের।
ল্যাজলো বাক্সগুলোর কাছে এগিয়ে গিয়ে একঅংশের ধূলো পরিষ্কার করে একটা লেখা পড়ল।
‘এটা তো কানজি ভাষা। এখানে বলছে এগুলো রাজা লক-এর সম্পত্তি।
‘এখন কীভাবে খোলা যায় সেটা জানতে চাচ্ছি।’ বলল লিও।
কাধ থেকে ব্যাকপ্যাক নামাল স্যাম। দাঁড়াও দেখাচ্ছি।’ ব্যাগ থেকে বাক্স খোলার জন্য ক্রোবার ও ম্যাচেটি বের করল।
‘এটা দিয়ে শুরু করতে পারো।’ রেমি একটা বাক্স দেখিয়ে দিল।
“ঠিক আছে। আমার প্ল্যান হচ্ছে, বাক্সের উপরের পুরো কভারটা না খুলে বরং উপরের একটা অংশ ফুটো করে দেখব ভেতরে কী আছে। বিষয়টা নিরাপদ হবে।
ম্যাচেটি আর ক্রোবার নিয়ে কাজ নেমে পড়ল স্যাম। বাক্সের উপরের অংশে হাতের কব্জি সাইজের একটা গর্ত তৈরি করল। ভেতরে টর্চ লাইট তাক করে দেখল কী আছে।
কী দেখলে? খুব আগ্রহ নিয়ে লিও জানতে চাইল করল।
কাপড়। মখমলের কাপড়। তবে আমার মনে হচ্ছে কাপড়টা দিয়ে কিছু একটা ঢেকে রাখা হয়েছে। দাঁড়াও দেখছি। আগে বাক্সের উপরে থাকা ধূলোবালি পরিষ্কার করতে হবে।’
সবাই মিলে পরিষ্কার করল বাক্সটা। এবার ছুরি দিয়ে ভেতরের কাপড়টা কাটল স্যাম। দেখে নিল ভেতরে কী আছে।
‘এবার কী দেখলে? জিজ্ঞেস করল রেমি।
‘নিজের চোখেই দেখে নাও।’ রেমিকে জায়গা করে দিয়ে স্যাম সরে বসল।
দেখা শেষে রেমি বলল, “এটাই জগতের নিয়ম। কখনও হারতে হয়, কখনও জিততে হয়।’
‘তোমরা কী দেখছ? বলছ না কেন?’ রেমি সরে যেতেই গর্ত দিয়ে চোখ দিল লিও।
এতক্ষণে হাসল স্যাম। সোনা! বন্ধু, সোনা! বাক্সগুলো সোনায় ভরা!
.
৫৪.
তিন দিন পর
ঝরনার সামনে প্রচুর লোকসমাগম হয়েছে। সাংবাদিক, পুলিশ, সাধারণ লোক… সেইসাথে স্যাম, রেমি, লিও, ল্যাজলো তো আছেই। সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আবার এখানে ফিরে আসতে বাড়তি সময় লেগেছে। ওদের। তবে কাজ চলছে পুরোদমে।
একটু পর গুহার ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো ল্যাজলো, মুখে বিজয়ের হাসি। ওর পিছু পিছু লিওকেও দেখা গেল। স্যাম আর রেমি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছিল। এমন সময় ল্যাজলো বলল, কথার মাঝে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত তবে সুখবর হচ্ছে, আমরা তিন বাক্স হীরা আর রুবি পেয়েছি।
ওদের পামে পুলিশ চিফ দাঁড়িয়ে ছিল। নিঃসন্দেহে ভাল খবর। চালিয়ে যান।
‘আচ্ছা, চিফ, ডা. ভ্যানা’র দাদার কোনো হদিস জানতে পেরেছেন? জানতে চাইল রেমি।
‘হ্যাঁ, আমরা বিস্তর খোঁজ নিয়ে তথ্য পেয়েছি সে ১৯৮৮ সালে মারা গেছে। যুদ্ধের পর নিজের নাম বদলিয়ে এক অস্ট্রেলিয়ান র্যাঞ্চে গিয়ে কাজ নিয়েছিল।
ল্যাজলো’র দিকে তাকাল স্যাম। আপনি এবার ভাষণ দেয়ার প্রস্তুতি নিন।
‘ভাষণ? কেন? কী বলব?
“আরে, আপনি তো এখানকার জাতীয় হিরো হতে যাচ্ছেন। এই উদ্ধার করা গুপ্তধনগুলো দিয়ে এখানে স্কুল-কলেজ হবে, নতুন হাসপাতাল হবে, রাস্তা হবে। গুপ্তধনগুলোত আপনাকে ছাড়া খুঁজে পাওয়া সম্ভব হতো না। অবশ্য এজন্য আপনার পাশাপাশি আমরাও গুপ্তধন থেকে একটা অংশ পুরষ্কার পাব।’
হা হয়ে গেল ল্যাজলো। “গুপ্তধনের অংশ? পুরষ্কার?
‘কেন? আপনাকে এখনও বলা হয়নি? সরকার ঘোষণা করেছে আমাদেরকে মোট গুপ্তধনের ১০% পুরষ্কার হিসেবে দেবে। ডলারের অংকে সেটা কয়েক লাখ হবে।’ বলল রেমি।
ব্যাপক ব্যাপার।
স্যাম হাসল। জমিদারি হালে জীবনযাপন করার প্রস্তুতি নিন, লর্ড ল্যাজলো সাহেব!
‘এসব লিও জানে?
না, এখনও জানে না। বলব..’
‘আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই এত বড় খুশির সংবাদ শোনার পর তার হুতুম পেঁচা মার্কা মুখভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয় কিনা।
লিও একটা পাথরের গায়ে থাকা চিত্র দেখছিল। রেমি গিয়ে খুশির খবরটা দিল ওকে। এদিকে স্যাম আর ল্যাজলো খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে লিও’র চেহারার দিকে। কিন্তু রাশিয়ানের চেহারার মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না।
স্যাম কনুই দিয়ে লিও-কে গুঁতো দিল। কী ব্যাপার? খুশি হওনি?
আরে ধুর, আগামী ৫ বছর যদি সাগরের নিচের ওই শ্যাওলা পরিষ্কার করে ইমারত বের করতে হয় তাহলে কী করব এত অর্থ দিয়ে?
ভবিষ্যতে বিভিন্ন অভিযানের কাজে ব্যয় করতে পারবে। রেমি বলল।
‘যে জিনিস দেখতে পাইনি সেটা আমি বিশ্বাস করি না।’
বন্ধু, নিশ্চিত থাকো, ডলারগুলো তুমি পাচ্ছ।’ ওকে আশ্বস্ত করল স্যাম।
‘দেখো, সোনা থেকে ডলারে মূল্যমান পরিবর্তন করার সময় সুযোগে কম করে দেবে।’
মনে হয় না।’ স্যাম আপত্তি করল।
“ঠিক আছে। সময় আসুক। দেখো।
লিও’র কথা শুনে হেসে ফেলল সবাই।