অন্যদিকে তাকাল রিকি। কয়েকটা ডলারের লাইগ্যা কেউ নিজের জীবন কুরবানি দিবার চাইব না।’
রিয়ারভিউ মিররে রেমির অভিব্যক্তি দেখল স্যাম।
না, আমার মনে হয় না তারা ওমন করবে। তবে লিওনিডের অনুসন্ধান বেশ বড় রকমের ঝাঁকি খেয়েছে এটা সত্য। এই অঞ্চলে যেহেতু কুমীর আছে সেহেতু রাইফেলেরও ব্যবস্থা থাকার কথা। এখানে কারও রাইফেল নেই, আমি সেটা বিশ্বাস করতে পারছি না।
মাথা নাড়ল রিকি। বন্দুক রাখার নিয়ম নাই এইখানে। অস্ট্রেলিয়ান মিলিটারিরা চইল্যা যাওনের পর থেইক্যা বন্দুক রাখা নিষেধ করা হইছে।
কুমীরের তো তাহলে পোয়া বারো! রেমি বলল।
দ্বীপের পশ্চিম অংশ ঘুরে এখন পুব দিকে এগোচ্ছে ওরা। ওদিকে হনিয়ারা শহরে এখানকার একমাত্র হাসপাতাল অবস্থিত। ওরা যখন গাড়ি নিয়ে ইমার্জেন্সি অংশে প্রবেশ ততক্ষণে ২৫ মিনিট পার হয়ে গেছে। রিকির চাচার অবস্থা খুবই করুণ। গাড়ি থেকে নেমে সাহায্যের জন্য ছুটল রিকি। একটু পর দু’জন দ্বীপবাসী আর একজন স্মার্ট নারী এসে হাজির হলো। মহিলার পরনে সবুজ রঙের মেডিক্যাল ইউনিফর্ম।
মহিলা যখন গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে তখন রেমি তাকে ভাল করে খেয়াল করল। দেখতে দ্বীপের বাসিন্দা বলে মনে হলেও তার চুলের স্টাইলটা ভিন্ন। দ্বীপের অন্যান্য মহিলাদের চেয়ে আলাদা। তার হাঁটা-চলার ধরন দৃষ্টিআকর্ষণ করতে বাধ্য। পরিষ্কার বোঝা যায়, এই নারী এখানকার উঁচুস্তরে রয়েছে। পদমর্যাদায় বড় হলেও মহিলার বয়স খুব একটা বেশি হবে না। তরুণীই বলা যায়, ত্বক একদম মসৃণ। আহত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে জখমের দিকে নজর দেয়ার আগে রেমি আর স্যামের দিকে তাকাল সে।
কতক্ষণ আগের ঘটনা? জানতে চাইল মহিলা। তার ইংরেজি উচ্চারণে অস্ট্রেলিয়ান টান রয়েছে।
‘আধা ঘণ্টা। দ্বীপের পূর্ব পাশে কুমীর আক্রমণ করেছিল। জানাল রেমি।
আক্রান্ত পা দেখে নিয়ে দ্রুত নির্দেশ দিল মহিলা। ধরাধরি করে বেনজির আহত দেহকে স্ট্রেচারে ভোলা হলো। তবে সেটার অবস্থাও ভাল নয়। এখানকার চিকিৎসা সেবার ব্যাপারে স্যাম ও রেমির সন্দেহ তাহলে সত্যি প্রমাণিত হলো।
ওদের দুজনের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মুখ খুললেন মহিলা। চিন্তার কিছু নেই। হাসপাতালের ভেতরে থাকা যন্ত্রপাতিগুলো এরচেয়ে ভাল অবস্থায় আছে। হাত বাড়ি দিল সে। আমি ডা. ভ্যানা। এখানকার চিফ মেডিক্যাল অফিসার।’ রেমি ও স্যাম দুজনই হাত মেলাল তার সাথে।
‘স্যাম ফারগো, রেমি ফারগো,’ দু’জনের পরিচয় একসাথে দিল স্যাম।
ডা. ভ্যানা একটু সময় নিয়ে ফারগো দম্পতিকে পর্যবেক্ষণ করল। এখন মাফ করবেন। জরুরী কাজ আছে। আপনার ততক্ষণ ইমার্জেন্সি রুমে অপেক্ষা করতে পারেন। একটা বেঞ্চ আর দশ বছর আগের টাইমস আছে। একটা কথা না বললেই নয়, রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য আপনাদের পদক্ষেপটা সুন্দর ছিল।’
স্যাম কিংবা রেমি কিছু বলার আগেই হাসপাতাল ভবনের ভেতরে চলে গেল ভ্যানা। স্যাম গাড়ির সিটে লেগে থাকা রক্তের দিকে তাকাল। এরপর ওর চোখ পড়ল নিজের পোশাকের উপর। শুকনো রক্ত লেগে রয়েছে। এই দ্বীপে এসেছে মাত্র কয়েক ঘন্টা হলো। ইতিমধ্যে একজন মৃত্যু পথযাত্রীর প্রাণ রক্ষা করতে হয়েছে ওদের।
সলোমন আইল্যাণ্ডে ওদের অনুসন্ধানের শুরুতেই এরকম পরিস্থিতি অশুভ কিছুর ইঙ্গিত করছে।
.
০৫.
কয়েক মিনিট পর লিও’র ট্রাক এসে পৌঁছুল। ট্রাক থেকে নেমে ড্রাইভারকে হাত দিয়ে ইশারা করল লিও। মেইন রোডে ধূলো উড়িয়ে চলে গেল ট্রাক। কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে সে স্যামের দিকে এগিয়ে এলো।
‘মারা যায়নি তো?’
‘অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। স্যাম জবাব দিল। খুব বেশি সময় ওকে হাসপাতালে থাকতে হবে না, এটা নিশ্চিত।
‘বেচারা। কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেল।’
‘আমার বিশ্বাস হয় না, এখানে কুমীর আছে এ-ব্যাপারে তোমাকে কেউ সর্তক করেনি।’ বলল রেমি।
করেছিল। ম্যাচেটি আর কুড়াল তো সেজন্যই হাতের কাছে ছিল সবার।
লিওর দিকে তাকাল স্যাম। দুটো একে-৪৭ থাকলে আরও ভাল হতো।’
‘বিশ্বাস করো, দোস্ত, যদি এই দ্বীপে সেটার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে আমি নিশ্চয়ই রাখতাম।
‘তোমার ক্রুরা কোথায়?
‘সাগরে। সব গোছগাছ করে গিয়ার আর নৌকো নিয়ে ওরা চলে যাচ্ছে। আমার সাথে আর কেউ কাজ করতে চায় না। যা বুঝতে পারছি, তাদের বন্ধুর এই দূর্ঘটনার জন্য ওরা আমাকে দায়ী করছে।’ থামল লিও। জানোয়ারটা সাইজ দেখছ? ট্রাকের চেয়েও লম্বা!
‘ওটার পরিবারও আছে নিশ্চয়ই। স্যাম বলল।
মাথা নাড়ল রেমি। হুম। তোমার বন্ধুরা একটা কুমীরকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। খবর আছে তোমার।
‘আমি কিছু করিনি!
স্যাম আর রেমি দু’জনই তিক্ত হাসি দিল। ওটা আমাদেরকে শুনিয়ে লাভ নেই। কুমীরদের বোলা।’
ভবনের ভেতরে ঢুকল ওরা। বাইরে থেকে দেখতে যেরকম মনে হয়েছিল ভেতরেও একই অবস্থা। ইমার্জেন্সি লাউঞ্জ একটা আয়তাকার রুম। নোংরা পরিবেশ। কয়েকজন আহত ব্যক্তি সারি করে রাখা বেঞ্চের উপর বসে সেবার অপেক্ষায় আছে। রুমে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা খুবই করুণ। রিকি একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় বসে আছে। ওরা সেদিকে গিয়ে ওর পাশে বসল। মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে ঠিকই কিন্তু ভেতরের মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার বিরুদ্ধে ওটা নিতান্তই নস্যি। কয়েক মিনিট ঘাম ঝরানোর পর উঠে দাঁড়াল রেমি। আমি বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করি।’