চোখ থেকে চশমা খুলে চুলে আঙুল চালাল সিমন। আপনার বিরুদ্ধে কঠিন চার্জ আনা হবে শুনলাম।
‘এসব থামাতে হবে। যেভাবে হোক।
কিন্তু বিষয়টা তো অনেক বড়। এখান থেকে দ্বীপে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এত বড় জিনিস সামাল দেয়ার খরচাটাও বেশি। এই ধরুন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার যদি আমাকে দেন তাহলে আমি কেসটা লড়তে পারব।’
‘২০ লাখ ডলার। এতে রীতিমতো ডাকাতি!
‘আপনার জীবনের মূল্য কত? ২ মিলিয়ন ডলার সেটার কাছে কিছুই না। মামলা একবার শুরু হয়ে গেলে আর কিছু করা সম্ভব হবে না। যতই অর্থ দেন না কেন। আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি এই লাইনে…’।
‘ঠিক আছে। নিজের সেফের কম্বিনেশনটা সিমনকে দিল জেফরি গ্রিমস। ‘সেফের ভেতরে সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার পাবে। আশা করি, তোমার চার্জসহ যাবতীয় খরচের জন্য এটুকুই যথেষ্ট হবে। আচ্ছা, জামিন কবে পাব?
‘জামিন পাবেন না। অনেক মানুষ মারা গেছে আপনার জন্য। পুরো মানবতা সংক্রান্ত কেস। তার সাথে আছে অর্থ পাচার মামলার রায়ে আপনার ফাঁসি না হলেও যাবজ্জীবন হবে, নিশ্চিত।
কথাটা শুনে জেফরির শ্বাস নিতে কষ্ট হতে শুরু করল। বাতাসকে খুব ভারি মনে হচ্ছে। ঘাম গড়াতে শুরু করল কপাল বেয়ে। যাবজ্জীবন!
ক্লায়েন্টের এরকম করুণ অবস্থা দেখে সিমন কোনো করুণাবোধ করল না। কারণ ওর যেটা কাজ ছিল সেটা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার… অনেক অর্থ। সিমন এখন একটু স্বস্তিবোধ করছে। হয়তো এই ক্লায়েন্টের হয়ে ওকে লড়তে হবে না। আর লড়েও খুব একটা লাভ হবে না।
‘সিমন, আমাকে এই বিপদ থেকে বের করতেই হবে। তার জন্য যা দরকার হয় করো। আমি সারাজীবন জেলে পঁচতে পারব না। ওর হাতের তালু ঘেমে গেছে।
মাথা নাড়ল সিমন। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। কিন্তু আপনি বেশ কঠিন গ্যাড়াকলে পড়েছেন।
রুম থেকে বেরিয়ে গেল সিমন।
হঠাৎ জেফরির মনে হলো ও আর কখনও এই বিপদ থেকে মুক্তি পাবে না। সিমনের কথার মাঝে আগের মতো কনফিডেন্স দেখতে পায়নি। ধীরে ধীরে ঘাম বাড়তে লাগল জেফরির। দুশ্চিন্তার কারণে ওর হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ পড়ছে। ওর মনে হচ্ছে বুকটা বোধহয় ফেটে যাবে। বুকের ব্যথায় চেয়ার থেকে পড়ে গেল একসময়ের ধনকুবের জেফরি গ্রিমস। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় এক হাত দিয়ে বুকের বাম পাশ চেপে ধরে আছে।
অবশেষে যখন মেডিক্যাল টিম এসে উপস্থিত হলো, জেফরি’র শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে ততক্ষণে।
.
৫৩.
গোয়াডালক্যানেল, সলোমন আইল্যান্ড
স্যাম, রেমি, লিও আর ল্যাজলো এখন প্রথমে দেখা সেই বড় ঝরনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
‘মিস্টার ল্যাজলো, আপনি নিশ্চিত তো? রেমি প্রশ্ন করল।
“হুম, এরচেয়ে আর বেশি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না।
‘তাহলে বলুন, কীভাবে ভেতরে যাওয়া যাবে?
“দেখুন, ঝরনার ঠিক ডান কিনারা দিয়ে বেশ কিছু বড় বড় পাথর পড়ে আছে। আমার মনে হয় ওগুলোর উপর দিয়ে হেঁটে আমরা ঝরনার দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে পারব।
‘ভাল বলেছেন। তাহলে আপনিই আমার পথ দেখিয়ে ভেতরে নিয়ে চলুন।’ বলল স্যাম।
প্রতিবার আমাকেই এভাবে বিপদের সামনে যেতে হবে?
‘আপনি এখন ঝরনার ভেতর দিয়ে গিয়ে জাস্ট এতটুকু দেখে আসুন ওপাশে কোনো গুহা আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে ফিরে আসবেন। সবাই একসাথে ভেতরে ঢুকব। কঠিন কিছু না তো।’
‘আচ্ছা, আমার আসতে যদি অস্বাভাবিক সময় লাগে তাহলে সাহায্য করতে চলে আসবেন কিন্তু।
‘সমস্যা নেই। আছি আমরা। দরকার হলে দুই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করব। লিও মশকরা করল।
ওদেরকে পেছনে রেখে ঝরনারধারার দিকে এগোল ল্যাজলো। ফিরে এলো কয়েকমিনিট পর। ভিজে গেছে।
হ্যাঁ, ওপাশে গুহা আছে। চলুন, যাওয়া যাক।’ বলল সে।
‘বাক্স-টাক্স নেই?’ রেমি জানতে চাইল।
‘আমি শুধু দেখে এসেছি গুহা আছে কিনা। বাক্সের খোঁজ করিনি।
ল্যাজলোর পেছন পেছন ঝরনাধারা ভেতরে ঢুকল ওরা। পানিটুকু পার হওয়ার পর দেখল ওরা এখন ৫ ফুট চওড়া একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সামনে বেশ অন্ধকার।
পিঠ থেকে ব্যাকপ্যাক নামিয়ে ফ্ল্যাশলাইট বের করল রেমি। ওর দেখাদেখি বাকিরাও ফ্ল্যাশলাইট বের করল। লাইট জ্বালিয়ে এগোলো সামনে।
আস্তে আস্তে চওড়া অংশ বাড়তে শুরু করল। সেইসাথে ভূমিও খাড়া হয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর যাওয়ার পর ল্যাজলো’র হাত টেনে ধরল স্যাম।
‘দাঁড়ান।
ঝুঁকে মেঝে দেখল স্যাম। টর্চের আলো ফেলল দেয়ালে।
কী?’ ল্যাজলো জানতে চাইল।
‘বুবি ট্র্যাপ! হয়তো এখন অকেজো হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। পকেট থেকে সুইস আর্মি নাইফ বের করল স্যাম।
‘নিশ্চিতভাবে অকেজো করে দিতে পারবে?’ রেমি প্রশ্ন করল।
‘দেখে তো মনে হচ্ছে তারের সাহায্যে কাজ করবে এটা। এখন তারটা কেটে দিলেই অকেজো হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তার আগে চেক করতে হবে তার কাটলে কোনো স্প্রিং ট্র্যাপ চালু হয়ে যাবে কিনা। যদি কোনো স্প্রিং ট্র্যাপ না থাকে তাহলে সহজেই সম্ভব।’
মনে হচ্ছে, আমরা ঠিক পথে এগোচ্ছি।’ বলল লিও।
হতে পারে। আমি তাহলে আমার কাজ শুরু করি।’ স্যাম খুব সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করল কোনো স্প্রিং ট্র্যাপ আছে কিনা। নিশ্চিত হওয়ার পর তারগুলো কাটতে শুরু করল।