তারপর ফ্লেমিং ওদের প্রত্যেক মুখ থেকে পুরো ঘটনার জবানবন্দি নিল। ভ্যানার বিরুদ্ধে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করবে।
পুলিশ চিফের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গুহার যে অংশে গোলাগুলি হয়েছিল সেখানে ঢুকল ওরা। গুহায় এখন গুণ্ডাদের কোনো লাশ নেই। যেখানে লাশ পড়েছিল সেখানে সাদা চক দিয়ে ক্রাইম সিন মার্ক করে রাখা হয়েছে। দিনের আলোতে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে ভেতরটা ঘুরে দেখার পর বাইরে বের হলো সবাই।
‘আমি একটা গাধা! আস্ত গাধা! হঠাৎ বলে উঠল ল্যাজলো।
কী বলছেন এসব? লিও প্রশ্ন করল।
‘নোটবুক। ওখানকার কিছু একটা আমার মাথায় খচখচ করছিল কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না জিনিসটা কী। এবার বুঝতে পেরেছি।’
ওর দিকে তাকাল রেমি। তারপর?
‘আমার অনুবাদে গলদ আছে। একটা শব্দের অনুবাদ করতে গিয়ে ভুল করেছি।’
‘গুলিয়ে ফেলেছেন? ভ্রূ উঁচু করে স্যাম জিজ্ঞেস করল।
হুম।
‘এত ভণিতা না করে আসল কথাটা বলছেন না কেন?’ বলল রেমি।
‘আমি অনুবাদ করেছিলাম ঝরনার ওপাশে। আসলে হবে ঝরনার ভেতর দিয়ে। ল্যাজলো বলল।
‘ভেতর দিয়ে?’ রেমি পুনরাবৃত্তি করল, অবাক হয়েছে।
হ্যাঁ, ঝরনার ভেতর দিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঝরনার ওপাশে নয়।’
.
৫২.
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
জেফরি গ্রিমস তার এক্সকিউটিভ চেয়ারে বসে আসন্ন দুর্দিনের কথা ভাবছে। সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়েছে গোয়ালক্যানেলে। এতদিন ধরে গোছানো পরিকল্পনা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে মুহূর্তের মধ্যে। প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছিল জেফরি। সব জলে গেছে। বড়ধরনের লাভের আশায় বিরাট ঝুঁকি নিয়েছিল জেফরি গ্রিমস। জীবনে প্রথমবারের মতো ঝুঁকি নিয়ে ধরা খেল। জেফরি এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছে। ব্যাংক থেকে অনেক অর্থ লোন নিয়েছিল, ভেবেছিল দ্বীপের খনিজ সম্পদগুলোর দখল পেলে সেখান থেকে অঢেল উপার্জন হবে। অনায়াসে লোনগুলো চুকিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু এখন কী হবে? ওর অ্যাপার্টমেন্ট বন্ধক রেখে অ্যাপার্টমেন্টের দ্বিগুণ অর্থ লোন নিয়েছিল। তারমানে এবার ওকে পথে নামতে হবে? এবার থাকল ওর বিজনেস কোম্পানী। যেভাবে হোক এটাকে আকড়ে ধরে এই বিপদটা পাড়ি দিতে হবে। অ্যাপার্টমেন্ট হারালে হারাক, ভাড়া বাসায় উঠবে ও। তাছাড়া ইয়টটাতো আছেই। ওটা কোথাও বন্ধক রাখেনি বলে রক্ষা।
জেফরি আজ কোম্পানীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে একটা মিটিং ডেকেছে। কী করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করবে।
***
ঘণ্টাখানেক পর মিটিঙে ভাষণ দিচ্ছে জেফরি। এমন সময় রুমে একজন দশাসই ব্যক্তি প্রবেশ করল।
‘জেফরি গ্রিমস?
‘কে আপনি? মিটিঙের মধ্যে ঢুকে ডিস্টার্ব করছেন কেন?’ জেফরি জানতে চাইল।
‘আমি চিফ ইন্সপেকটর কলিন্স। অস্ট্রেলিয়ান ক্রাইম কমিশন। আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।
‘গ্রেফতার? আমার অপরাধ?
‘অর্থ পাচার, খুনের সহায়তা, অপহরণের প্ররোচনা, আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গসহ আরও অনেক অপরাধ আছে। থানায় চলুন সব জানতে পারবেন।
‘আশ্চর্য কথাবার্তা!
রুমে উপস্থিত কর্মকর্তাদের দিকে তাকাল কলিন্স। এখনও বসে আছেন কেন আপনারা? মিটিং শেষ। আপনাদের বসকে গুড বাই বলে যান। হয়তো তার সাথে আর আপনাদের দেখা হবে না।’
‘আমি আমার উকিলকে চাই।’ দাবি করল জেফরি।
‘অবশই চাইবেন। এখন উনি, আগে হাতকড়াটা পরাই।”
‘তার দরকার নেই। আমি এমনিই আপনার সাথে যাচ্ছি। চলুন।
‘মিস্টার গ্রিমস, যা বলছি তাই করুন। নইলে সবার সামনে কলার ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিতে বাধ্য হব! শেষবারের মতো সর্তক করলাম। হাত দিন।
কয়েক মিনিট পর জেফরি’র হাতে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ ভ্যানে তোলা হলো।
পুলিশ হেডকোয়ার্টারের কেউ জেফরি’র সাথে কথা বলল না, আগে আসামীর উকিল আসবে তারপর হবে সব।
চার ঘণ্টা পর তাড়াহুড়ো করে এক ব্যক্তি হেডকোয়ার্টারে ঢুকল। সিমন হুইশটক। জেফরি’র উকিল। সোজা আসামীর কাছে চলে গেল সে।
সিমন? কী হচ্ছে এসব? জেফরি জানতে চাইল।
নিজের গোল রিমের চশমা ঠিক করল সিমন। আপনার মামলার বিচারকার্যে যারা থাকবে তাদের সাথে দুইঘণ্টা আলোচনা করে এলাম। তাদের মধ্যে দু’জন আবার আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু…’ সিমন ইতস্তত করল। কেসটা অনেক কঠিন।’
বাজে কথা!
‘দেখুন, আপনি চাইলেও তথ্য-প্রমাণগুলো অস্বীকার করতে পারবেন না। সলোমন আইল্যাণ্ডে আপনি যত অর্থ পাঠিয়েছেন সবগুলো আপনার কোম্পানীর কোনো না কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে। পুলিশের কাছে একদম সলিড প্রমাণ আছে। আচ্ছা, ডা. ভ্যানাকে চেনেন?
মাথা নাড়ল জেফরি। এই লোকের নাম কখনও শুনিনি।’
‘লোক নয়… মহিলা। আপনার পাঠানো সব অর্থ তার কাছে যেত। সে ইতিমধ্যে এব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। জানা গেছে, সে একটা বিশেষ ফোন ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়া কল করত। টেলিকমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট নিশ্চিত করেছে সে যে ফোনে কল করত সেটা আপনার অফিসের ফোন।
কী! এটা তোমাকে সামাল দিতে হবে। দিতেই হবে।
‘আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। ডা. ভ্যানা ওখানে অনেক শিশুকে খুন-গুম করেছে। নিজে বিদ্রোহী দল গঠন করে খুন করেছে অস্ট্রেলিয়ান পর্যটকদের। সে ওখানকার সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করছিল যাতে আপনার কোম্পানী ওখানে গিয়ে লাভ করতে পারে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, আপনি এসবে জড়ালেন কীভাবে?
‘সিমন, আমি নিজেও জানি না…’