‘তেমনটাই ধারণা করা যাচ্ছে। হতে পারে দাদার কাছ থেকেই সাইকো হওয়ার জেনেটিক শক্তি পেয়েছিল ভ্যা।’
‘আচ্ছা, ভ্যানা’র বাবার কোনো খবর পাওনি?
‘পেয়েছি। অনেক আগেই মারা গেছে। তার উপর রিসার্চ করে দেখলাম, সারাজীবন বাবার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা করে গেছে বেচারা। দ্বীপের লোকদের কল্যাণে সারাজীবন বিনে পয়সায় কাজ করেছে।’
আর দাদা?
‘তার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। যুদ্ধের পর সে গায়েব হয়ে গিয়েছিল।
‘তুমি কি ভাবছ, সে এখনও বেঁচে আছে?
‘থাকার কথা না। তবে থাকলে তার বয়স মূসা (আ)-এর চেয়ে বেশি হওয়ার কথা। হা হা।
‘খোঁজ নিয়ে দেখো, সেলমা।’
“ঠিক আছে। দেখছি। কিন্তু আমি দুঃখিত, তোমাদেরকে এখনও গুপ্তধন উদ্ধারের ব্যাপারে সেভাবে সহায়তা করতে পারিনি। তাই গুপ্তধনটাও এখনও উদ্ধার হলো না।
‘এভাবে বোলো না, সেলমা। আমরা ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়ঙ্কর একটা অংশ আবিষ্কার করেছি। আর সেটার পেছনে তোমার অনেক অবদান আছে।’
‘তা অবশ্য ঠিক। আমি ল্যাজলো’র কথা ভাবছি। বেচারা বোধহয় অনেক আশাহত হয়েছে।’
নাহ, সে যথেষ্ট রসিক মানুষ। সামলে নিতে পারবে।
‘গুপ্তধন কিন্তু এখনও ওখানকার কোথাও আছে।
‘হা, সেলমা। কিন্তু চাইলেই তো আর সব সম্ভব হয় না, তাই না?
হুম। আচ্ছা, সাবধানে থেকো। কখন আবার দাঙ্গা শুরু হয় ঠিক নেই।’
“ঠিক আছে, সাবধানে থাকব।’ হাসল রেমি। সবকিছুর জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
‘এখন আবার ধন্যবাদ দেয়ার কী হলো?
কারণ তুমি তোমার মতো।
৫১. গুহার দিকে রওনা
৫১.
পরদিন সকালে স্যাম, রেমি, ল্যাজলো, ফারগো সবাই আবার গুহার দিকে রওনা হলো। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর দ্বীপ আবার শান্ত হয়ে গেছে। আপাতত দাঙ্গা নিয়ে কারও দুশ্চিন্তা নেই।
মিতসুবিশি গাড়িটা নিয়ে ফরেনসিক ভ্যানের কাছে রাখল স্যাম। এখানে আরও একডজন ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে, সাংবাদিকদের। গাছের ছায়ার সাংবাদিকরা বসে আছে। পুলিশ নজর রাখছে তাদের উপর।
স্যাম এক অফিসারের দিকে এগিয়ে গেল। চিফ ফ্লেমিং আছেন? আমাদেরকে আসতে বলেছিলেন উনি।
“উপরে আছেন। আপনাদের পরিচয়?’ অফিসারের হাতে রেডিও শোভা পাচ্ছে।
বলবেন, ফারগো’রা এসেছে।
অফিসারের চেহারা মুহূর্তেই বদলে গেল। ও আচ্ছা! আপনারা! যান, যান, উপরে যান। কোনো সমস্যা নেই।
গুহামুখের সামনে দু’জন অফিসারকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ চিফ। ওদেরকে দেখে এগিয়ে এলো।
‘আসার জন্য ধন্যবাদ।’ বলল পুলিশ চিফ।
‘ওয়েলকাম। এখানকার কী অবস্থা? স্যাম জানতে চাইল।
ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা নিখোঁজ হওয়া সবার লিস্ট তৈরি করেছি। ফরেনসিক খুব শীঘ্রই ওদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে ফেলবে।
‘দারুণ। আচ্ছা, ডা. ভ্যানা মুখ খুলেছে?’ প্রশ্ন করল রেমি।
‘আমি তদন্ত চলাকালীন কোনো কেস নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। তবে এতটুকু বলতে পারি সে এখনও কিছু স্বীকার করেনি। এপর্যন্ত তিনবার নিজের বানানো গল্প বদল করেছে। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই স্বীকার করবে।’
আপনাদের লিস্টে কতজন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য আছে?’ ল্যাজলোর প্রশ্ন।
‘বিগত ৬ বছরে প্রায় ৩৮ টা কেস ফাইল করা হয়েছে। অবশ্য এর বাইরেও ধারণা করা হচ্ছে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা বিভিন্ন রোগীর উপর লুকিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছিল ডা. ভ্যানা। হয়তো তারা মারাও গেছে।’
খুব সহজেই সেটা সম্ভব। ডাক্তার ভুল ওষুধ দিলেও এখানকার কেউ সেটা দেখতে আসবে না।’ বলল রেমি।
তবে এখন কিন্তু খবর আছে। যাদের সন্তানরা মারা গেছে তারা খুব ক্ষেপে আছে তার উপর। স্যাম মনে করিয়ে দিল।
‘ঠিক বলেছেন… আদালত এটা নিয়ে খুব চিন্তিত। ভ্যানাকে হাতের কাছে পেলে বাবা-মায়েরা তাকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।
‘সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এজন্য আপনাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে হবে তাকে!’ বলল ল্যাজলো।
‘আরেকটা নতুন তথ্য পেয়েছি আমরা। ফ্লেমিঙের চেহারা গম্ভীর। ডা. ভ্যানা’র হয়ে যারা কাজ করতো তাদের সবাইকে ড্রাগ আসক্ত ছিল। বিশেষ ধরনের ড্রাগ দিয়ে ওদেরকে হাতের মুঠোয় রেখেছিল ভ্যানা। ড্রাগের নেশায় পড়ে তার কথা শুনতে ওরা।
‘আমার তো মনে হয়, ভ্যানা এর পাশাপাশি ওদেরকে বড়লোক হওয়ার স্বপ্নও দেখিয়েছিল। স্যাম বলল।
‘আচ্ছা, এখনও পর্যন্ত কোনো কঙ্কালের পরিচয় বের করতে পেরেছেন? জানতে চাইল রেমি।
হ্যাঁ, আকারে বড় কঙ্কালগুলো থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। একটা ছিল অর্ধগলিত। ওটার পরিচয় পাওয়া গেছে। অল্পবয়স্ক ছেলেটার নাম আলডো কসভ। ডা. ভ্যানা’র অধীনে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছিল। বাকিদেরও পরিচয় বের করার চেষ্টা চলছে। তবে লিলি’র ভাগ্য ভাল বলতে হবে। আপনারা ওকে সময়মতো উদ্ধার করতে পেরেছিলেন।
ধন্যবাদ। আমরা তথ্য পেয়েছি বেশি পুরানো কঙ্কালগুলো যুদ্ধের সময়কার। ভ্যানার দাদা তখন জাপানিদের সাথে মেডিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট করেছিল।
‘যেমন দাদা তেমন নাতনি। কী জঘন্য…’ গুহার দিকে তাকিয়ে বলল ফ্লেমিং। মজার বিষয় দেখুন, ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এসব গুহায় ভূত থাকে, জায়ান্ট থাকে, দানব থাকে। অথচ কখনও বুঝতেই পারিনি আসল দানবরা সবসময় আমাদের চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটু থামল সে। ‘পুরানো কঙ্কালগুলোর সুরাহা দ্রুত করার জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে টিম আসার কথা আছে। তারা যুদ্ধকালীন সময়ে কে কে মারা গেছে সেগুলোর সাথে কঙ্কালগুলো মেলাবে।