ভ্যানাকে রুম থেকে বের করে নিয়ে গেল পুলিশ চিফ। হলওয়েতে গিয়ে ভ্যানা দেখতে পেল আরও চারজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ফাগো দম্পতি ও ল্যাজলো। রাগে, বিস্ময়ে ভ্যানা’র মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দ বের হলো…
‘আপনারা?
‘আমার নাম ল্যাজলো। আপনার সাথে দেখা হলেও ভাল করে পরিচয় হয়নি অবশ্য। আপনি তো তখন আমাদেরকে খুন করার নির্দেশ দিতে ব্যস্ত ছিলেন…’ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ল্যাজলো।
পুলিশ অফিসাররা আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে গেল ভ্যানাকে।
ওদের কাছে এগিয়ে এলো পুলিশ চিফ। আমি আবারও দুঃখিত। আপনাদের সাথে তখন অনেক বাজে আচরণ করেছিলাম…’
কাধ ঝাঁকাল রেমি। আপনার উপর দিয়ে অনেক ধকল যায়। হতেই পারে ওরকম। আমরা কিছু মনে করিনি।’
স্যাম ডা, বেরিকে দেখতে পেয়ে প্রশ্ন করল। রেডিও-তে কোনো খবর শুনেছেন?
‘হ্যাঁ, এইমাত্র শুনলাম। প্রধানমন্ত্রী একটি ভাষণ দিয়ে ডা. ভ্যানার চক্রান্ত সম্পর্কে সাধারণ জনতার সামনে তুলে ধরেছেন। আশা করি, খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসবে।
“আচ্ছা, কঙ্কালগুলোর কোনো গতি হলো?
‘গুহায় দুটো ফরেনসিক টিম কাজ করছে। ওদের সাথে কথা বলে এসেছি। পরিচয় বের করার চেষ্টা চলছে কঙ্কালগুলোর। আমি ভাবতেও পারছি না একটা মানুষ কতটা নীচে নামলে এরকম কাজ করতে পারে।’
উনি আপনার আমার মতো সাধারণ মানুষ নন। পুরোপুরি সাইকো। ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য জানেন না। কীভাবে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করা যাবে সেটা বোঝেন। এরকম মানুষ হয়তো এরআগে কখনও দেখেননি। বলল রেমি।
‘আর দেখতে চাইও না।’
স্যাম বলল, “উনি কিন্তু সিরিয়াল কিলার। কতগুলো মানুষকে খুন করেছেন। দ্বীপের শাসন ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য কী ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করেছিলেন, ভাবতেও ভয় হয়।
তার জন্য আমিও খানিকটা দায়ী।’ বলল পুলিম চিফ। “আমার নাকের ডগায় এসব করছিল এতদিন। আপনারা না থাকলে পারও পেয়ে যেত। আমি নিজেকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারব না।
ফারগো দম্পতি পুলিশ চিফকে সান্ত্বনা দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকল। স্যামের মাথার সিটি স্ক্যান করাতে হবে।
স্ক্যান শেষে জানা গেল, স্যামের মাথায় গুরুত্বর কোনো ক্ষতি হয়নি। সামনে আরও কয়েকদিন ঝিমুনি ভাবটা থাকতে পারে, শরীর দূর্বল লাগবে হয়তো তবে দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ডা, বেরি’র কাছে নিজের ব্যাপারে জানার পর লিও’র খবর জানতে চাইল স্যাম। আমাদের রাশিয়ান বন্ধুর কী অবস্থা?
‘গুরুতর না হলেও আপনার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। আপাতত পেইনকিলার আর অ্যান্টিবাটিক দিয়েছি। বিশ্রাম নিলে সেরে যাবে।’
‘আর ওই মেয়েটা?’ ল্যাজলো প্রশ্ন করল।
‘ওর অবস্থা করুণ। তবে আমার মনে হয় ও লড়তে পারবে। ওকে আমরা নিয়মিত স্যালাইন দিচ্ছি। ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি কোনধরনের পয়জন ওর শরীরে দেয়া হচ্ছিল। ও একটু শক্ত হলে সেই মোতাবেক চিকিৎসা শুরু হবে। এবার মিস্টার ফারেগা, এখানে বসুন। আপনার মাথায় একটু ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে।’
‘আচ্ছা, ডাক্তার, আপনার ফোনটা একটু দেয়া যাবে। একটা কল করব। বলল রেমি।
ডাক্তার বেরি পকেট থেকে রেমিকে তার ফোনটা দিয়ে দিল।
রেমি ফোন নিয়ে লবিতে বেরিয়েছে এমন সময় লিলির মা ছুটে এলো ওর দিকে।
“আফা গো, আফনেরে বহুত ধন্নবাদ। আমার মাইয়াডারে বাঁচাইছেন। রেমিকে জড়িয়ে ধরল মহিলা, চোখে পানি। আমি জাইনতাম, আমার মাইয়া কারও লগে ভাইগা যায় নাই কিন্তুক ওই ডাইনি ডাক্তর…’।
‘আপনি আর চাপ নেবেন না। আপনার মেয়ে সুস্থ্য হয়ে যাবে।’ রেমি কোনমতে নিজেকে মহিলার শক্ত বাঁধন থেকে মুক্ত করল।
‘ভগবান বাঁচাইছে। আমার মাইয়াডারে বাচনের লাইগ্যা আপনেগো পাঠাইছিল… নইলে আমার মাইয়া বাচত না।
হাসল রেমি। আপনার মেয়েটা অনেক সুন্দরী। আপনার কপাল ভাল এরকম মেয়ে জন্ম দিয়েছেন।’
‘ঠিহিই কইছেন। মাইয়াডা সুন্দর আছে। এহন আমার দাবি ওই ডাক্তর ডাইনিরে যেন আগুনে পুড়াইয়া মারা হয়। তাইলে সগুগলের আত্তা শান্তি পাইব।
রেমি শুধু মাথা নেড়ে সায় দিল। সরে গেল একপাশে। ফোন করল সেলমা’র প্রাইভেট নাম্বারে।
‘হ্যালো! কেমন আছো তোমরা? দ্বীপের কী অবস্থা?’ ফোন ধরেই সেলমা প্রশ্ন করল।
‘চলছে। একটু আগে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ভ্যানাকে। স্যাম আর লিওকে হাসপাতালে আনা হয়েছে ডাক্তার দেখানো জন্য।’
‘আর ল্যাজলো? তার কিছু হয়নি?
নাহ। একদম অক্ষত আছে। এই লোকের কপাল অত্যন্ত ভাল।
সেলমা হেসে ফেলল। হুম, তার কপালই এরকম। আচ্ছা, তুমি এরআগে ফোন করে বলেছিলে ড. ভ্যানার ব্যাপারে রিসার্চ করতে। করে দেখি অনেক চমক আছে।’
‘তার চরিত্রের যে রূপ দেখেছি, আমার কাছে আর কোনো বলে চমক মনে হবে না।
‘এটা মনে হতে পারে। বিষয়টা তার দাদাকে নিয়ে। তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধের পর তাকে অব্যহতি দেয়া হয়। তার ব্যাপারে যদিও খুব বেশি রেকর্ড নেই তবে জাপানিরা তার সাথে যোগসাজশ করেই দ্বীপে মেডিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছিল। এবং সবচেয়ে বড় কথা তিনিও ডাক্তার ছিলেন।’
‘ও ঈশ্বর.. তারমানে শত শত পুরানো কঙ্কালগুলো সব ভ্যানা’র দাদার কুকীর্তি!