‘আমার মনে হয় এখানেই জাপানিরা কুকাজগুলো করত। স্যাম বলল। ঝুকল শুকনো মেয়েটার দিকে। কপালে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখল। ‘রেমি, এই মেয়ে তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
‘ওকে আমাদের সাথে নিতে হবে।’
মেয়েটার কাধ ধরে নাড়া দিল স্যাম। খুকি, শুনতে পাচ্ছো?
দূর্বলভঙ্গিতে মাথা নাড়ল মেয়েটা।
‘আমরা তোমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাব। তোমার নাম কী?
লি…লি…’ মেয়েটা খুব কষ্ট করে বলল।
‘এই মেয়ে খুবই দূর্বল। হাঁটতে পারবে না। ওকে কোলে তুলে নিতে হবে। তাই, আমাদেরকে পরে এসে নিতে হবে ওকে।
না, স্যাম। আমি ওকে এই অবস্থায় ফেলে রেখে যেতে পারব না।’ পরিষ্কার জানিয়ে দিল রেমি। যদি তুমি ওকে নিতে না চাও তাহলে আমি মিস্টার ল্যাজলোকে অনুরোধ করব।
স্যাম মাথা নাড়ল। “আমিই নিচ্ছি। কিন্তু এই লোহার শিকলটা খুলতে হবে।
‘ওই গুপ্তাদের কাছে চাবি থাকতে পারে। দাঁড়াও, দেখে আসি।’
কিছুক্ষণ পর রেমি এক গোছা চাবি নিয়ে ফিরে এলো। দুটো চাবি দিয়ে চেষ্টা করার পর শিকলের তালা খুলে গেল তিন নম্বার চাবি দিয়ে।
এগিয়ে এলে ল্যাজলো। নিজ ইচ্ছায় মেয়েটা কোলে তুলে নিচ্ছে।
‘আপনি নিতে পারবেন?’ জিজ্ঞেস করল স্যাম।
‘অনায়াসে। এই মেয়ের শরীরে কিছুই নেই। একদম পাখির পালকের মতো হালকা; কোনো ব্যাপার না। আত্মবিশ্বাসের সাথে ল্যাজলো জবাব দিল।
ভেতরের চেম্বার থেকে বেরিয়ে বাইরের গুহায় আসছে সবাই এমন সময় ছায়া দেখতে পেল ওরা। টার্গেট এরিয়ায় পেয়ে যেতেই বিন্দুমাত্র দেরি না করে গুলি ছুড়ল স্যাম ও রেমি। পরপারে পাঠিয়ে দিল চার গুণ্ডাকে। ওদের হাতে ম্যাচেটি ছিল। কিন্তু ম্যাচেটি দিয়ে তো আর পিস্তলের সাথে লড়াই করা যায় না।
এবার ওরা খুব সাবধানে এগোল। বলা যায় না, সামনে হয়তো আক্রমণ করার জন্য প্রতিপক্ষ ওঁত পেতে বসে আছে।
‘আমরা এক কাজ করি একদম নিচু হয়ে এগোই। তাহলে হয়তো সেটা নিরাপদ হবে। স্যাম প্রস্তাব রাখল।
না। ওদেরকেই বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা অপেক্ষা করব।’ বলল রেমি।
‘তাহলে তো এখানে পুরোদিন বসে থাকতে হবে। লিও আপত্তি জানাল।
‘তো সমস্যা কী? চুপচাপ অপেক্ষা করাই ভাল। দেখি ওরা কখন বের হয়। আমার তো সন্দেহ আছে এখনও ওদের কেউ বেঁচে আছে কি না।’
এক জোড়া পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এগিয়ে আসছে এদিকে গুলি করার জন্য প্রস্তুত হলো রেমি ফারগো। বাকিরা লুকাল একটা পাথরের আড়ালে।
রেমি একটু আড়ালে থেকে পথ চেয়ে আছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে শব্দটা। আগন্তুকের মাথা দেখা গেল। হাতের পেশিতে ঢিল দিল রেমি। গ্রেগ এসেছে।
কিন্তু পরক্ষণে দেখল ওর পেছন পেছন এক গুণ্ডাও আছে। গ্রেগের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে এগোচ্ছে সে। হঠাৎ একটা গুলি এসে পিস্তলধারীর কপাল ফুটো করে দিল। সবাইকে চমকে দিয়ে লিও গুলি করেছে।
‘তাহলে সব শেষ হলো?’ গ্রেগকে প্রশ্ন করল রেমি।
না। গাড়ির কাছে আরও একজন আছে। অবশ্য তার কাছে কোনো পিস্তল নেই। স্রেফ ম্যাচেটি।’ গ্রেগ জবাব দিল। বেচারার কাঁপছে। গুণ্ডার কপাল থেকে রক্ত ছিটে এসে লেগেছে ওর চোখ-মুখে। এখনও ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারেনি।
লিও’র দিকে তাকাল রেমি। দারুণ গুলি চালিয়েছ।
‘আমার পিস্তলে এখন আর মাত্র একটা গুলি আছে। নালিশের সুরে বলল লিও।
‘প্রার্থনা করি, ওটা যেন আর খরচ করতে না হয়। স্যাম বলল।
‘কোনো মহিলাকে দেখেছেন?’ গ্রেগের কাছে জানতে চাইল রেমি।
গ্রেগ মাথা নাড়ল। হ্যাঁ। সে গোলাগুলি শুরু হওয়ার আগেই চলে গেছে।
‘ধ্যাত! স্যাম হতাশ।
‘চিন্তা কোরো না। খেলা এখনও শেষ হয়নি। ওই মহিলা পালিয়ে যেতে পারবে না।’
স্ত্রীর দিকে তাকাল স্যাম। তোমার কথাই যেন সত্যি হয়।
.
৫০.
অফিস রুমে সহকারীকে ঢুকতে দেখে মাথা তুলল ডা. ক্যারল ভ্যানা।
‘কী ব্যাপার, ম্যাগি? তোমাকে তো আমি সব দেখিয়ে দিয়েছি। এখন বিরক্ত করতে এসেছ কেন?
‘দুঃখিত, ডাক্তার। কিন্তু পুলিশ এসেছে, আপনার সাথে কথা বলতে চায়।
‘তো? নিজে গিয়ে একটু কথা বলতে পারছ না? তোমাদেরকে বেতন দিয়ে পোষা হয় কেন? ফাইল-কলম রেখে বিরক্তির সাথে উঠল ভ্যানা।
ম্যানচেস্টারের মৃত্যুর পর দ্বীপে নতুন করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়েছে। ভাঙচুর থেকে হাসপাতালকে রক্ষা করতে আধডজন পুলিশ অফিসার নিয়োজিত আছে এখানে।
ভ্যানা’র পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত ঠিকঠাকভাবে এগোচ্ছে। যত সময় যাচ্ছে পরিস্থিতিও তত অস্থির হয়ে উঠেছে দ্বীপের। আজ গভীর রাতে ঘোষণা আসবে জনগণ আর এই সরকারকে ভরসা করছে না। তারা নতুন সরকার চায়। গণভোট নেয়া হবে… এগুলো সব ভ্যানার রাজনৈতিক নীলনক্সা। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ভ্যানা রুম থেকে বেরোবে এমনসময় দরজার সামনে চিফ অফিসার ফ্লেমিং উদয় হলো।
বলুন, সেবাস্টিয়ান? জরুরী কিছু?’ পুলিশ চিফের সাথে ভ্যানা’র সখ্যতা অনেক পুরানো। কিন্তু এবার সেবাস্টিয়ান কোনো জবাব দিল না। কড়া চোখে তাকিয়ে রইল। কী হয়েছে?
‘আপনাকে গ্রেফতার করা হলো। উল্টোদিকে ঘুরুন। কোনো কথা বলবেন না। একদম চুপ।
‘কী? পাগল হয়ে গেছেন নাকি? এসবের মানে কী?
‘ঘুরুন। এককথা বারবার বলতে ভাল লাগে না।
ভ্যানা আর কিছু বলল না। হাড়কড়া পরানো হলো কব্জিতে। ভ্যানার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। বুঝতে পারছে না এসব কেন হচ্ছে। নিশ্চয়ই বড় কোনো গড়বড় হয়েছে কোথাও। দ্বীপের একজন সম্মানিত ডাক্তারকে এমনি এমনি পুলিশ গ্রেফতার করবে না।