হঠাৎ লোহার ভারি দরজার খিল খোলার আওয়াজ পাওয়া গেল পিছু হটল ওরা। দরজা খুলে একজন ভেতরে ঢুকল।
‘তোমাদের মধ্যে কে ভাল অস্ত্র চালাতে পারো?’ জিজ্ঞেস করল আগন্তুক। কণ্ঠটা পরিচিত। এক গুণ্ডার কাছ থেকে অস্ত্রটা কেড়ে নিয়েছি। অস্ত্রটাকে ঠিকঠাকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
‘মিস্টার লিও! আপনি বেঁচে আছেন!’ ল্যাজলো বিস্ময়ে হতবাক।
‘আছি আরকী। তো পিস্তলটা কে নেবে বলো তাড়াতাড়ি। গুণ্ডারা যেকোনো মুহূর্তে হাজির হয়ে যাবে।
‘রেমি নিক। বলল স্যাম।
‘কোথায় সে?
আমি এখানে।’ অন্ধকারে স্যামের বাঁ পাশ থেকে বলল রেমি।
লিও রেমি’র হাতে অস্ত্রটা তুলে দিল।
‘বন্ধু, তোমার কী অবস্থা? আঘাত পেয়েছ? জানতে চাইল স্যাম।
“হুম, কিন্তু ভাঙেনি কিছু।
‘লাইট তাহলে আপনিই বন্ধ করে দিয়েছে?’ ল্যাজলো জানতে চাইল।
‘হ্যাঁ, ম্যাচেটি দিয়ে কারেন্টের মেইন লাইনে তিনবার কোপ দিয়েছি। ব্যস, হয়ে গেল।
ম্যাচেটিটা কোথায়?’ প্রশ্ন করল স্যাম।
‘এক গুণ্ডার বুকে খুঁজে দিয়েছি। লিও একটু থামল। আমার কাছে ফ্ল্যাশলাইট আছে। কিন্তু জ্বালানো যাবে না। কেউ আসুক। তখন ওদের হাতে থাকা আলো দেখে গুলি করা যাবে।
‘স্মার্ট বুদ্ধি! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি একসময় রাশিয়ান আর্মিতে ছিলে। বলল স্যাম।
‘এবং আমি তিনটা বিয়েও করেছিলাম। অতএব বুদ্ধি ঘাটতি নেই বললেই চলে। লিও রসিকতা করল।
দূরে থাকা একটা গুহায় আলোর নড়াচড়া হওয়ায় ওরা দেখতে পেল কিছু মেডিক্যাল বেড আর অক্সিজেন পাশের গুহায়।
‘আমি ওই গুহায় ঢুকে বন্ধ করে দেব। তাহলে ওরা আর আমাদেরকে দেখতে পাবে না। এতে বাড়তি সময়ও পাওয়া যাবে।
‘আমিও আসছি তোমার সাথে। বলল স্যাম।
ফারগো দম্পতি চুপিচুপি গিয়ে ঢুকল গুহায়। দরজা বন্ধ করে দিল। আড়াল নিল একটা বাক্সের পেছনে।
একটু পর গুহার অন্য মাথায় আলো উদয় হলো। তিন গুণ্ডাকে দেখা যাচ্ছে। হাতে টর্চলাইট। দরজার দিকে এগিয়ে এসে টর্চের আলো ফেলল খিলের উপর। হয়তো ভাবছে, আজব! দরজায় খিল দিল কে?
আচমকা গুলি করল রেমি। বদ্ধ গুহায় গুলির শব্দ শুনে মনে হলো কামান দাগা হচ্ছে। প্রথম গুলিটা গিয়ে লাগল টর্চধারীর বুকে। পরেরটা লাগল পাশের জনের গায়ে, আর একটু হলে সে রেমি’র দিকে গুলি ছুঁড়ে দিত! তিন নম্বর গুলিটা লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। দুই সঙ্গীর হাল দেখে তিন নম্বর গুণ্ডা তড়িৎগতিতে আরেকটা বাক্সের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছে।
মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে টর্চটা। সেটার আলো সহায়তা রেমি এবার চতুর্থ গুলিটা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পিস্তল তাক করল বাক্সের দিকে। কিন্তু শিকার খুব সেয়ানা। বাক্সের আড়ালে থাকা সত্ত্বেও পা দিয়ে লাথি মারল টর্চলাইটের গায়ে। পাথুরে দেয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে লাইটের বাল্ব চূর্ণ হয়ে গেল।
হঠাৎ করে আলো নিভে যাওয়া রেমি একটু হকচকিয়ে গেছে। এই সুযোগে বাক্সের আড়ালে থাকা গুণ্ডা বেরিয়ে আসতে চাইল, হাতে পিস্তল।
এদিকে স্যাম চুপিচুপি পৌঁছে গেছে বাক্সের পাশে। আচমকা একটা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল বাক্সটা। গুণ্ডা এবার সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। হতভম্ব।
রেমি’র ঠিক এরকম সুযোগেরই প্রয়োজন ছিল। পরপর দুটো গুলি ছুড়ল ও। ভবলীলা সাঙ্গ করে দিল সেয়ানা গুণ্ডার।
স্যাম একটা লাশের কাছ থেকে রিভলবার তুলে নিল। দেখ, তুমিও ওদের একটা অস্ত্র নিতে পার কিনা। আমি দরজা খুলে দেই। লিও’র কাছ থেকে ফ্ল্যাশলাইটটা আনতে হবে।
“ঠিক আছে।
দরজার খিল খুলে দিল স্যাম। ল্যাজলো আর লিও কাছেই ছিল। ফ্ল্যাশলাইট লাগবে।’ স্যাম জানাল।
এদিকে রেমি একটা বেরেটা নয় এমএম সেমিঅটোমেটিক খুঁজে পেয়েছে। চেক করে দেখল ম্যাগাজিন ভর্তি আছে। আলো নিয়ে ভেতরে ঢুকল স্যাম। দেখল এখানে যে তিনজন মারা গেছে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে স্থানীয় গুণ্ডাদের নেতা। যে এরআগে স্যামের মাথায় আঘাত করেছিল। মজার ব্যাপার, তার সেই অস্ত্র এখন রেমি’র হাতে শোভা পাচ্ছে।
তৃতীয় গুণ্ডার কাছে গেল স্যাম। ওর সাথে বাকিরাও আছে। এর অস্ত্রটা তুলে নিল লিও। সিলিণ্ডার চেক করল। মাত্র দুই রাউণ্ড। যাক গে, এবার আমাদেরকে পথ দেখাবে কে?
‘আমি।’ বলল স্যাম।
কিন্তু রেমি মাথা নেড়ে আপত্তি জানাল। তুমি আহত হয়েছ। দরকার নেই। আমি যাব এবার। ল্যাজলল, চলুন, আমার সাথে।
চেম্বারের ভেতরে লাইট ফেলল রেমি। আরেকটা দরজার ওপাশ থেকে গোঙানি শুনতে পেয়ে থমকে গেল ও। দরজাটায় খিল দেয়া। ওরা দ্রুত এগিয়ে গেল দরজার দিকে। রেমি দরজার পাশে হাতে পিস্তল নিয়ে তৈরি। স্যাম দরজাটার খিল খুলল। ইশারা করল রেমিকে।
স্যাম দরজার ভারি পাল্লা খোলা মাত্র সেদিকে অস্ত্র তাক করল রেমি। ভেতরে অন্ধকার। কেউ ওদের আক্রমণ করল না। সাবধানে এগোল ওরা। গোঙানিটা আবার ভেসে এলো। কোনো মেয়ের আওয়াজ।
ওরা দেখল চেম্বারের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত মেডিক্যাল বিছানা পাতা আছে। প্রায় এক ডজন তো হবেই। তবে মাত্র একটা বিছানায় মানুষ আছে। একটা ছোট মেয়ে, শুকিয়ে কঙ্কালের মতো হয়ে গেছে। লোহার শিকল দিয়ে তার হাত বাধা।
‘এটা তো মনে হচ্ছে কোনো মেডিক্যাল টর্চার চেম্বার!’ বিড়বিড় করে বলল রেমি। চেম্বারের একপাশে শুকনো রক্তের দাগ দেখতে পেল ও। বিভিন্ন ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ওষুধ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চারপাশে।