‘আপনি তার সাথে ওঠা-বসা করেছিলেন, খেয়েছিলেন একসাথে, হাসি ঠাট্টা করেছিলেন…’
‘নিজেকে উপভোগ করেছি। কিন্তু ম্যানচেস্টার সামনে আমাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াত। সেটা তো আর হতে দেয়া যায় না।
‘আপনি একটা আস্ত বেঈমান। ঘৃণাভরে বলল স্যাম।
হয়তো ঠিকই বলেছেন। অবশ্য আপনাদের এসব মতামতকে আমি কোনো পাত্তা দেই না। কিছুক্ষণের মধ্যে আপনাদের ইহলীলা সাঙ্গ হবে।’
‘তাহলে আপনি আর দশটা খুনীর মতোই। নিজেকে বাঁচাতে খুন করছেন। নিজের শয়তানিকে বজায় রাখার জন্য।’ রেমি বলল।
‘সব হচ্ছে টাকার লোভ।’ বলল স্যাম। এই মহিলা পুরো দ্বীপকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে তার তথাকথিত মানুষের মঙ্গলের জন্য। আসল কথা হলো সে টাকার লোভে ছুটছে। মানুষের মঙ্গলের কথা বলে স্রেফ ভাওতা দিচ্ছে।’
যা খুশি বলুন, কিছুই যায় আসে না। তবে আপনাদের সাথে দেখা হয়ে ভাল লেগেছিল। আপনাদের কাছ থেকে অনুদানটা বাগাতে পারলে খুব খুশি হতাম। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব হচ্ছে না।’
আপনার এই কুকীর্তি চাপা থাকবে না।’ হুঁশিয়ার করল স্যাম। আমরা গোয়ালক্যানেলে এমন জিনিস খুঁজে পেয়েছি যেটা এই এলাকাকে আন্তর্জাতিক খবরে পরিণত করবে। পুরো দ্বীপ ভরে যাবে লোকজনে। আপনার এসব কুকাজ ফাঁস হয়ে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
হুম, হুম। আর সলোমন আইল্যাণ্ডের সরকার সব লোকজনকে স্বাগতম স্বাগতম জানিয়ে ঢুকতে দেবে, তাই না? এখানে ইতিমধ্যে বিদেশিদের প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আইন চালু করা হচ্ছে। তাছাড়া দ্বীপের বাসিন্দারা বিদেশির পছন্দ করবে না। বিদ্রোহীদের কার্যকলাপগুলো যে বিদেশিদের জন্যই হয়েছে সেটা খুব ভালভাবে জনগণের মনে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই জনতা আর বিদেশিদের জন্য ঝামেলা পোহাতে চাইবে না। তাছাড়া, আমি এখানকার বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরক সেট করে দিয়েছি। সব প্রমাণ ঢাকা পড়ে যাবে। এখানে আমার কাজও প্রায় গুছিয়ে নিয়েছি। আমার বড়লোক হতে খুব বেশি দিন লাগবে না। গবেষণার ফলাফল বের হলে তখন আর আমাকে ওষুধ কোম্পানীর পেছনে ঘুরতে হবে না কুকুরের মতো। আমি কোটি কোটি ডলারের মালিক হয়ে যাব।’
‘আপনি আমাদের সাথে কেন করছেন এসব? এসব না করলেও তো চলতো। আপনিই তো বললেন, বিস্ফোরণ হলে সব প্রমাণ ঢাকা পড়ে যাবে। তাহলে আমাদেরকে কেন… নিজের মনের কথা আড়াল করে বলল স্যাম।
‘তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু আপনারাও তো বেশ পয়সাঅলা। আপনাদেরকে বাঁচিয়ে রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া আপনারা পুরানো জিনিস ঘেটে প্রমাণ বের করতে ওস্তাদ। তাই ঝুঁকি নিয়ে বোকামি করতে চাই না। তারচে বরং আপনারা মারা গেলেই সবদিক দিয়ে ভাল হবে।’ হাতঘড়ি দেখল ভ্যানা। ‘হাসপাতালে যেতে হবে, তারপর আবার রাজনীতিবিদদের সাথে মিটিং আছে। বিদায়, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফারগো। আর আপনি … আপনার নাম তো জানি না। আপনাকেও বিদায়!’ ভ্যানা ল্যাজলোর দিকে তাকিয়ে বলল কথাটা।
আর কোনো কথা না বলে ভ্যানা বেরিয়ে গেল। তারসাথে সাঙ্গপাঙ্গরাও চলে গেল তারসাথে। বাইরে থেকে লোহার দরজার খিল লাগিয়ে দিল।
মুখ খুলল স্যাম। এখানে যখন তোমাদেরকে আনা হচ্ছিল তখন কী কী দেখেছ সব বলল।
মনে করার চেষ্টা করল রেমি। আমরা এপর্যন্ত যতগুলো গুহা দেখেছি এটা ওগুলোর চেয়ে আরও গভীরে। হয়তো সবগুলোর ভেতরে আন্তঃসংযোগ আছে। এমনও হতে পারে অন্ধকারে পালানোর সময় আমরা গুহার ভেতরে যে পথ এড়িয়ে গিয়েছিলাম সেটা দিয়ে এখানে আসা যায়।
কতটুকু গভীরে আছি আমরা?
‘পাহাড়ের ভেতরে ঢোকার পর ছোট ছোট দুটো গুহা পার হয়ে তারপর এখানে আনা হয়েছে। ওগুলোর একটায় ছিল মেডিক্যাল সরঞ্জাম আর বিছানা। আর আরেকটায় বিষম দূর্গন্ধ।
স্যাম মাথা নাড়ল। আচ্ছা, ভাল করে মনে করে দেখো…. এমনকিছু দেখেছ? যেটা আমাদের কাজে আসতে পারে?
কয়েক মিনিট চুপচাপ ভাবল রেমি ও ল্যাজলো।
নাহ, তেমন কিছু মনে পড়ছে না। ল্যাজলো জানাল।
রেমি’র দিকে তাকাল স্যাম। “তুমি?’
‘আমরা যদি পাশের রুমে যেতে পারি তাহলে হয়তো কিছু মেডিক্যাল সরঞ্জামকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। অক্সিজেন ট্যাঙ্ক আছে…’
‘তাহলে চলো, দেখি কিছু করা যায় কিনা…’
তিনজন মিলে লোহার ভারি দরজা খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু এক বিন্দুও নড়াতে পারল না। খুব ভারী দরজা।
‘আমরা তো মনে হয় এই সলিড দরজা জাপানিদের বানানো। জাপানিরা বরাবরই এরকম মজবুত জিনিস তৈরি করে।’ মন্তব্য করল ল্যাজলো।
স্যাম ভাল করে দরজাটাকে পর্যবেক্ষণ করল। হুম, হতে পারে জাপানিরা ল্যাবটা বানিয়েছিল। ভা, ভ্যানা এখন এটাকে দখল করে একটু মেরামত করে ভোগ করছে। অবশ্য ঠিক কী অবস্থায় ভ্যানা এটাকে পেয়েছে…’।
স্যাম আর বলতে পারল না। দুম করে ওদের রুমের লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। চেম্বারে এখন কালিগোলা অন্ধকার।
.
৪৯.
সবাই দাঁড়িয়ে আছে। নড়ার সাহস পাচ্ছে না। দরজার ওপাশ থেকে একটু চাপা আওয়াজ ভেসে এলো। তারপর আবার সব চুপ।
কী হচ্ছে? আমাদেরকে অজ্ঞান করতে চাচ্ছে নাকি? তাই লাইট বন্ধ করে দিল?’ রেমিকে বলল স্যাম।
‘এমনও হতে পারে বিদ্যুৎ অপচয় কমানোর জন্য লাইট বন্ধ করে দিয়েছে।’ বলল রেমি।
‘একমত হতে পারলাম না। ল্যাজলো আপত্তি জানাল।