ভ্যানা হেসে উঠল। আপনারা হয়তো ভুলে গেছেন দ্বীপে বিদ্রোহীদের দাপট চলছে। বিদেশিরা ইতিমধ্যে পালিয়েছে। রাজনীতিবিদরাও যে যার পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত। এখন আপনাদের মতো বিদেশিকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই।’
‘এসব কেন করছেন? জানতে চাইল রেমি।
এসবে আপনাদের কী দরকার? কেন নাক গলাচ্ছেন? আপনাদের সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই কিন্তু যেহেতু গোপন জিনিস দেখে ফেলেছেন এখন তো ছেড়ে দেয়া সম্ভব না। আপনারা চুপ করে থাকার লোক নন।’
স্যামের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আপনি ওই বাচ্চাদের কঙ্কালগুলোর সাথে জড়িত?
দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি, হ্যাঁ, জড়িত। দেখুন, কোনো নতুন রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে হলে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতেই হয়। মানবজাতির উন্নতির জন্য করতে হয় বিষয়টা। যেমন দূরারোগ্য ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক তৈরি করতে মানুষের উপর এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছিল। আমি সেরকমটাই করেছি।’
‘আপনি আপনার রোগীদের মেরে ফেলছেন। প্রায় আর্তচিৎকার করে বলল ল্যাজলো। গ্রাম থেকে বাচ্চাদেরকে গায়েব করে…’
‘আমি সৌভাগ্যবতী, আনঅফিসিয়ালি এক ওষুধ কোম্পানীর হয়ে গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছি। ওরা চাইলেও এরকম গবেষণা করতে পারতো না। অনেক নিয়মকানুনের ব্যাপার আছে, মানবতা লঙ্ঘন হয় ইত্যাদি। তাই ওদের এমন একটা সুযোগ দরকার ছিল যেখানে নিশ্চিন্তে এসব নিয়ে গবেষণা ও এক্সপেরিমেন্ট করা যাবে। কোনো আইন বাধা দিতে আসবে না। তার সাথে দরকার ছিল মেডিক্যাল জ্ঞানের অধিকারী একজন যোগ্য লোক। ব্যস, সলোমন আইল্যাণ্ড আর আমাকে পেয়ে ওরা গবেষণা চালানোর জন্য অনুমতি দিয়ে দিল। আমার দিক চোখ গরম করে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই। আমি এসব করছি মানুষের মঙ্গলের জন্য। আজ হয়তো কিছু মানুষের প্রাণ উৎসর্গ করতে হচ্ছে কিন্তু তারপর বছরের পর বছর আমার এই উৎসর্গের কারণে অগণিত মানুষের জীবন বাঁচবে। তাছাড়া পৃথিবীতে এরকম ঘটনা তো নতুন নয়। আফ্রিকাকে সবাই বিগত কয়েক শতক ধরে এই কাজে ব্যবহার করে আসছে। কারণ ওখানে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের উপর এক্সপেরিমেন্ট চালানোর কারণেই কিন্তু আজ পৃথিবী প্লেগ মুক্ত।
‘এসবই আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।’ বলল রেমি।
‘এসব নীতিকথা আপনার মতো আমেরিকানদের মুখে মোটেও শোভা পায় না। আপনাদের সরকার সারা পৃথিবীজুড়ে আন্তর্জাতিক ভঙ্গ করে যাচ্ছে। আর সেই আপনারাই আমাকে আন্তর্জাতিক আইনের দোহাই দিচ্ছেন?
‘আপনি উন্মাদ! স্যাম বলল।
‘ঠিক বলেছেন। অবশ্যই আমি উন্মাদ। আর আমার মতো উন্মাদের জন্যই দুনিয়ার বিভিন্ন সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। আপনাদের সরকার পুরো দুনিয়া যা যা করে বেড়াচ্ছে আমি তারচেয়ে শতগুণে ভাল ও সৎ।’
‘কিন্তু আপনি এখানে বাচ্চাদের খুন করছেন! গর্জে উঠল রেমি।
কথা শুনতে পাননি? বললাম না, আফ্রিকাতেও এতকাল ধরে এরকম এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে আসা হয়েছে?
‘আপনি ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য এসব করছেন। এখানে মানুষের মঙ্গল বলতে কিছু নেই। মানবতার নাম ভাঙিয়ে টাকার পেছনে ছুটছেন আপনি। স্যাম বলল।
‘আপনারা কি অন্ধ? পুরো বিশ্ব এভাবেই চলে। তাছাড়া নতুন নতুন ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হতো না। এক্সপেরিমেন্টের ফলে অনেক মূল্যবান বছর বেঁচে যায়। দ্রুত মানুষের কাছে ওষুধগুলো পৌঁছে দেয়া। আপনারা কি বুঝেও না বোঝার ভান করছেন? আপনার দেশের সরকার আর কোম্পানীগুলো হচ্ছে অপরাধের ডেপু। তাদের চেয়ে আমি কোনদিক দিয়েই খারাপ নই। আপনারা শুধু নিজের দেশের বাইরের চাকচিক্য আর ফিটফাট ভাঙিয়ে দাপট দেখান অথচ ভেতরে সদরঘাট, সেটা স্বীকার করতে চান না।’
‘আপনি ডাক্তার হিসেবে যাত্রা শুরু করার সময় একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। পৃথিবীর সব ডাক্তারকেই সেটা করতে হয়। অথচ সেই প্রতিজ্ঞা প্রতিদিন ভেঙে চলেছেন।’ ল্যাজলো বলল।
‘ওসব ম্যানেজ করে চলতে হয়। আমার মনোযোগ থাকে ফলাফলের দিকে। ফলাফল ভাল তো সব ভাল। আপনারা গোঁয়ারের মতো অযথা তর্ক করছেন। আপনাদের সাথে তর্ক করতে করতে আমি ক্লান্ত। ‘ আঙুল দিয়ে ইশারা করল ভ্যানা। যাক গে, তোমরা এদেরকে ধরে এনে কাজের কাজ করেছ। এখন মুখ থেকে কথা বের করানোর জন্য যা ইচ্ছে করতে পারো এদের। আমার আপত্তি নেই। আমি সভ্য পথে চেষ্টা করে ব্যর্থ।’ স্যামের দিকে তাকাল সে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজছেন, তাই না? যদি নিজেরাও কঙ্কাল না হতে চান তাহলে ভদ্রলোকের মতো যা সত্যি বলে ফেলুন।
‘আমরা সত্যিই বলেছি।
‘আমাকে রূপকথার গল্প শোনাবেন আর আমি বুঝব না? এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য বলুন…’
‘যদি না বলি, তাহলে আপনি আপনার সহযোগী বিদ্রোহীদের দিয়ে আমাদের উপর নির্যাতন করবেন? এই নির্যাতনটাও কি আপনার “মানুষের মঙ্গল”-এর জন্য?’ ল্যাজলো প্রশ্ন করল।
হা হা, সহযোগী নয়। আমাকে তথাকথিত বিদ্রোহীদের নেত্রী বলতে পারেন।
বিস্ময়ে হা হয়ে গেল রেমি। তারমানে এসবের পেছনে আপনিই মূল হোতা? কিন্তু ম্যানচেস্টার আপনার বন্ধু ছিল…’
“হুম, ছিল তো? একটা মদখোর মগজবিহীন রাজনীতিবিদ ছিল সে। তার মৃত্যু একটা ভাল কাজে ব্যয় হয়েছে এটাই তো বিরাট সৌভাগ্য।