একটা বট গাছের আড়ালে থেকে রাস্তায় নজর দিল ওরা। আওয়াজটা ধীরে ধীরে কাছে আসছে।
‘ওটা একটা অ্যাম্বুলেন্স! শহর থেকে আসছে।’ স্বস্তি নিয়ে বলল রেমি।
স্যাম গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে অ্যাম্বুলেন্সের উদ্দেশে হাত নাড়ল। গতি কমাল অ্যাম্বুলেন্স। এরকম জায়গায় তিনজন বিদেশিকে দেখে অবাক হয়েছে বোধহয়। ওদের কাছাকাছি এসে থামল।
‘ভেতরে রেডিও থাকতে পারে। আমরা দ্রুত কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারব। তাছাড়া…’ স্যাম কথাটা শেষ করতে পারল না। কারণ অ্যাম্বুলেন্সের দরজা খুলতেই অস্ত্রধারী একটা হাত দেখা গেল। এই হাত এরআগেও ওরা দেখেছে।
‘ওহ না…’ বলেই দৌড় দেয়ার চেষ্টা করল রেমি। কিন্তু পারল না। পুরানো রাইফেলধারী এক লোক অস্ত্রটা তাক করল ওর দিকে। রেমি আর দৌড় দিল না। পিস্তলের গুলি হয়তো অ্যাম্বুলেন্স থেকে এই বটগাছ পর্যন্ত নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদ করতে পারবে না। কিন্তু রাইফেল অবশ্যই পারবে।
‘আরি শালা! দ্যাগ কাগো পাইছি!’ অস্ত্র নিয়ে সামনে এগোলো একজন। দুনিয়া ম্যালা ছোড না? স্যামের কাছে গিয়ে মাথায় পিস্তলের বাট দিয়ে কষে আঘাত করল। ঘটনাটা এত আচমকা হলো যে স্যাম হাত উঁচু করে কোনো প্রতিরোধ করার সুযোগই পেল না।
না! চিৎকার করে উঠল রেমি।
কিন্তু ইতিমধ্যে দেরি হয়ে গেছে। স্যামের সামনে পুরো দুনিয়া টলে উঠল। আকাশে ঢুকে গেল মাটিতে। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল স্যাম।
.
৪৮.
পাথুরে মেঝেতে থাকা অবস্থায় স্যামের জ্ঞান ফিরল। সবকিছু কেমন ঝাপসা মনে হচ্ছে। বার কয়েক চোখ পিটপিট করল ও। দেখল, রেমি ওর দিকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পাশে ল্যাজলো।
স্যাম উঠে বসার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। ওর সামনে থাকা পুরো পৃথিবী যেন দুলে উঠল হঠাৎ। কানের ভেতরে শোঁ শোঁ আওয়াজ হচ্ছে। রেমি ওকে কিছু বলছে, কিন্তু শব্দগুলো বুঝতে বাড়তি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে ওকে।
আমাদেরকে আবার গুহায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এটা অন্য গুহা।’ বলল রেমি।
স্যাম এক কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করল। “তোমরা সবাই ঠিক আছে তো?’ ও গলা কিছুটা ভেঙে গেছে।
হুম। আমাদের সবার সাথেই খারাপ ব্যবহার করেছে ওরা। কিন্তু তুমি সবচেয়ে বেশি ভুগেছ।
‘আমার মতো মনে হচ্ছে আমি কোনো ভাল্লুকের সাথে কুস্তি লড়েছিলাম। কিন্তু কুস্তিতে ভালুকের জয় হয়েছে।’
‘প্রায় কাছাকাছি।’ বলল ল্যাজলো।
স্যাম সোজা হয়ে বসল। এবার আর পৃথিবী দুলে উঠল না। আচ্ছা, রেমি তুমি কী যেন বললে, এটা অন্য গুহা?
‘হ্যাঁ, এই গুহাটা বেশ পরিষ্কার। অনেকগুলো চেম্বার আছে। তার মধ্যে একটাতে হাসপাতালের বিছানার সাথে বিভিন্ন মেডিক্যাল সরঞ্জামও আছে। দেখলাম।
‘মেডিক্যালের সরঞ্জাম? কীরকম সেগুলো? স্যাম প্রশ্ন করল। গুহাতে কেন মেডিক্যালের বেড থাকবে বুঝতে পারল না।
হঠাৎ ওর চেম্বারের লোহার দরজাটা খুলে গেল। দুইজন লোক ঢুকল, হাতে অস্ত্র। দু’জনের চেহারায় মারমার কাটকাট ভাব। তাদের সাথে আরেকজন ঢুকেছে। তার হাতে অবশ্য কোনো অস্ত্র নেই।
‘উত্তরটা আমি দিচ্ছি। কিছু মনিটর আছে, অক্সিজেন ট্যাঙ্ক ইত্যাদি। তবে কাজ চালানোর জন্য সৌরবিদ্যুৎ, জেনারেটর সহ পানিবিদ্যুৎ জেনারেটরও আছে। ওটা বেশ শক্তিশালী। ভাল কাজ করে।
বক্তার দিকে তাকিয়ে রীতিমতো ধাক্কা খেল সবাই। মুখ খুলল রেমি।
‘ভ্যানা! আপনি? আপনি আমাদেরকে ধরে এনেছেন?’
কাঁধ ঝাঁকাল ভ্যানা। আমি কিন্তু আপনাদেরকে অনেকবার সর্তক করেছিলাম। কিন্তু আপনারা আমার কথা কানেই নেননি। কোনভাবেই দ্বীপ ছাড়লেন না। আপনারা তো নিজেদেরকে মহাপণ্ডিত ভাবেন! কেউ বন্ধু হিসেবে ভাল কোনো পরামর্শ দিলে পাত্তাই দেন না।’
‘এটা উত্তর হলো না। স্যাম বলল।
আবার কাধ ঝাঁকাল ভ্যানা। আপনারা অকারণে নাক গলাতে পছন্দ করেন। যেটার সাথে আপনাদের কোনো লেনদেন নেই সেখানেও নাক গলাতে ছাড়েন না। নাক গলিয়ে অন্যের কাজে বাগড়া দেন। তারপরও বারবার বিভিন্ন উপায়ে প্রত্যেক্ষ-পরোক্ষভাবে আপনাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল।
কী বলছেন?’ জানতে চাইল রেমি।
‘বাহ! প্রশ্ন করছেন? এখানে তো আমি প্রশ্ন করব আপনারা উত্তর দেবেন। চলুন, শুরু করি… গুহায় ঘোরাঘুরি করছেন কেন বলে ফেলুন। কী খুঁজছেন?
‘কিছু খুঁজছি না। আমরা তো এমনি ঘুরছি।’ অকপটে ডাহা মিথ্যেকথা বলল ল্যাজলো।
ভ্যানা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দেখুন, আমার লোকজন আপনাদেরকে টুকরো টুকরো করার জন্য মুখিয়ে আছে। আমি শিক্ষিত, আপনারাও শিক্ষিত, তাই চাচ্ছি একটা সভ্য উপায়ে আলোচনা হোক। এখন আপনারা যদি এরকম…’।
মাথা নাড়ল রেমি। আমরা প্রাচীন নিদর্শন খুঁজছি। সাগরের নিচের ওই ইমারতগুলো থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো গুহার দিকে ইঙ্গিত করে।’ কথাটা পুরোপুরি সত্য না হলও আংশিক সত্য।
‘ও, হ্যাঁ, আপনাদের সেই বিখ্যাত শহর। যেটা সাগরের নিচে আছে। আচ্ছা, তো প্রাচীন নিদর্শনটা কীরকম, শুনি?
‘প্রত্নতাত্ত্বিক কিছু। যেটাকে প্রাচীন যুগের পরিচয় পাওয়া যাবে।
‘আচ্ছা যা-ই হোক, সেটা নিশ্চয়ই অনেক মূল্যবান। নইলে আপনারা জীবন বাজি রেখে এখানে আসতেন না।’
ভ্যানার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকাল স্যাম। আপনি কিন্তু এসব করে পার পাবেন না। আমরা এখানে এসেছি এটা অনেকেই জানে।