‘এখানকার পানিটা বেশ তাজা। নিশ্চয়ই কোনো উৎস আছে।’ রেমি জানাল।
যাক বাঁচা গেল। আমরা অন্তত পিপাসায় মারা যাব না।’ বিড়বিড় করে বলল ল্যাজলো।
‘আমরা কোনোভাবেই মারা যাব না। উপায় একটা বের হবেই।’ জোর দিয়ে বলল স্যাম।
অন্ধকারে চোখ সয়ে আসার পর হঠাৎ স্যাম বলল, “আচ্ছা, রেমি, ওটা কি আমার চোখের ভুল নাকি সত্যি একটু আলো দেখতে পাচ্ছি?
রেমি বলল, কই আমি তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
‘কিন্তু আমি পাচ্ছি। আমি নিশ্চিত। বেশ উঁচুতে অবশ্য তবে দেখতে হবে বিষয়টা।
‘তুমি এখন এই অন্ধকারের মধ্যে পাথর বেয়ে উঠবে?’ রেমি আস্তে করে প্রশ্ন করল।
তাছাড়া আর কোনো উপায় আছে?
আলোর উৎসের দিকে পা বাড়াল স্যাম। জলাধারের পাশ দিয়ে এগোল গুহার দেয়ালের কাছে। দেয়ালটা এবড়োথেবড়ো। হাতের দিকে তাকাল স্যাম। ওখানে ওর হাতঘড়ির থাকার কথা ছিল। কিন্তু গুণ্ডারা সেটা নিয়ে নিয়েছে। ও এখন বুঝতেও পারছে না কত ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এখন দিন নাকি রাত।
গুহার দেয়ালে থাকা পাথরের গায়ে পা দিয়ে ওজন পরীক্ষা করল স্যাম। দেখে নিল ওর ভার সইতে পারবে কিনা। নাকি আলগা পাথর রয়েছে। সন্তুষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করল উপরে। কিছুদূর ওঠার পর হঠাৎ ওর পায়ের কাছে থাকা একটা পাথর আলগা হয়ে সরে গেল। আছড়ে পড়ল স্যাম।
গোঁয়ারের মতো আবার উঠতে শুরু করল ইঞ্চি ইঞ্চি করে। ধীরে ধীরে পৌঁছে গেল জায়গামতো। একটা ফুটবল সাইজের পাথরের পাশ দিয়ে কিছুটা আলো-বাতাস আসছে। স্বস্তিবোধ করল স্যাম।
তিন হাত-পায়ে ভর রেখে এক হাত দিয়ে পাথরটা সরানোর চেষ্টা করল। কয়েক মিনিট টানা চেষ্টা করে পাথরটা সরাতে পারল বেচারা। এখান দিয়ে একজন মানুষ কোনমতে বাইরে বেরোতে পারবে।
এবার স্যাম তাকাল নিচের দিকে। রেমি ও ল্যাজলোকে এত উঁচু থেকে বেশ ছোট দেখাচ্ছে।
‘ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে উঠে এসো। কাজ হয়েছে।
‘একটু আগে সাঁতার দিয়ে অবস্থা টাইট। এখন আবার দেয়াল বাইতে হবে?’ বলল ল্যাজলো।
‘হ্যাঁ, তবে সাবধানে।
আগেরবারের মতো এবারও রেমি আগে উঠতে শুরু করল এবং স্যামের মতো একবারও আছাড় না খেয়ে পৌঁছে গেল উপরে।
ল্যাজলোর বাড়তি তিনগুণ বেশি সময় লাগল। বেচারার হাত টনটন করছে। অবশেষে পৌঁছে গেল উপরে।
ওদেরকে নিয়ে সেই ফাঁকা অংশ দিয়ে বাইরে বেরোল স্যাম। বাইরের আবহাওয়া বেশ গরম। প্রায় ত্রিশ ডিগ্রি।
এবার এখান থেকে রাস্তা কোথায় পাব?’ বলল রেমি।
‘ওদিকটায় হতে পারে। স্যাম বলল। ওদিকে সাগরের একাংশ দেখা যাচ্ছে।
‘চলো তাহলে যাওয়া যাক। তবে একটা কথা, আমাদেরকে যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে এর প্রতিশোধ আমি নেব। যাতা আচারণ করেছে, যা-তা বলেছে। কথায় বলে প্রতিশোধ যত দেরিতে নেয়া হয় তত নাকি মজা। কিন্তু আমি এবার সেটা মানতে নারাজ। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমার হাত নিশপিশ করছে।’ বলল রেমি।
‘আমারও। মাথা নেড়ে স্যাম সায় দিল।
.
৪৭.
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
নিজের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দায় বসে আয়েশ করে সিগার টানছে জেফরি গ্রিমস। সামনে সিডনি হারবারের মনোরম দৃশ্য। কিছুক্ষণ আগে একটা ফোন এসেছিল। ফোনটা পেয়ে বেশ খোঁজ মেজাজে আছে জেফরি। গোয়াড্যালক্যানেলে ফাইনাল খেলা শুরু হয়ে গেছে। দ্বীপকে জাতীয়করণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংসদ সদস্যরা। সব বিদেশিদের কোম্পানীকে দ্বীপ থেকে হটানো হবে।
জেফরি হচ্ছে পাকা ব্যবসায়ী। নিজের ব্যবসায়ী স্বার্থ হাসিল করার জন্য যেকোন পথে সে চলতে প্রস্তুত। তবে খারাপ কোনোকিছুর সামনে সে যায় না। পর্দার আড়ালে থাকে। এটাই তার চরিত্র, এটাই ব্যবসার কৌশল।
‘জেফরি? একটি নারীকণ্ঠ ডাকল ওকে। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল জেফরি। এক সুন্দরী তরুণীর গায়ে শুধু জেফরির একটা টি-শার্ট শোভা যাচ্ছে। তাছাড়া বাকি সব নগ্ন। জেফরির কোলে এসে বসল সে। আয়েশ করে সিগারে আরেকটা টান দিল জেফরি গ্রিমস। জীবন উপভোগ করার এই তো সময়।
***
গোয়াডালক্যানেল, সলোমন আইল্যাণ্ড
স্যাম যতটা সহজ ভেবেছিল ঢালু পথ ততটা সহজ নয়। রেমি ও ল্যাজলোকে নিয়ে এগোচ্ছে ও। বিদ্রোহীরা ওদেরকে হয়তো খুঁজে চলেছে বন-জঙ্গল দিয়ে, সেদিকেও নজর রাখতে হচ্ছে। এগোতে হচ্ছে সাবধানে।
‘এখন হাতে ম্যাচেটি থাকলে ভাল হতো।’ স্রোত পার হওয়ার সময় হারিয়ে ফেলেছে ল্যাজলো।
‘আমার তো মনে হচ্ছে একে-৪৭ রাইফেল থাকলে ভাল হতো। ম্যাচেটি দিয়ে আর কী হবে? রাইফেল আর কিছু গ্রেনেড় থাকলে জমত বিষয়টা।’ স্যাম বলল।
‘আমার চাই হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টারে চড়, কেল্লাফতে।’ বলল রেমি।
ভোর হচ্ছে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এগোতে এগোতে একসময় সামনে কংক্রিটের রাস্তা দেখতে পেল রেমি। “ওই যে, ওখানে রাস্তা দেখা যাচ্ছে।
‘আহ, বাঁচা গেল। ল্যাজলো যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। আচ্ছা, আপনার কাছে স্যাটেলাইট ফোনটা আছে?
নেই, তবে আশা হত হবেন না। জবাব দিল স্যাম।
ঘাড় কাত করল রেমি। মনোযোগ দিয়ে কিছু শুনছে। স্যাম ভ্রু উঁচু করল। কী?
‘আমি ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। খুব হালকা। কিন্তু শুনতে পাচ্ছি। ওদিকে।
রাস্তার দিকে দৌড় দিল রেমি। ওর পিছু পিছু স্যাম ও ল্যাজলোও ছুটল। রাস্তার কাছাকাছি গিয়ে স্ত্রীর হাত ধরে থামাল স্যাম। “আগেই সামনে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আগে নিশ্চিত হওয়া দরকার ওখানে বিদ্রোহীরা আছে কিনা।