‘ওকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া সম্ভব না হলে বাঁচানো যাবে না। টান টান গলায় বলল স্যাম।
রেমি লিও’র দিকে তাকাল। চলো ওকে নিয়ে একটা ট্রাকে তুলি। প্রতিটা সেকেণ্ড এখন মূল্যবান।’ বলল রেমি।
লিও বিস্ফোরিত নয়নে মৃত কুমীরটাকে দেখছে। রক্ত সরে গেছে ওর মুখ থেকে।
‘চলো, লিও। রেমি একটু কড়া কণ্ঠে তাগাদা দিল।
রেমির ধমক খেয়ে ঘুরল রাশিয়ান। ওর কয়েক ফুট দূরে দাঁড়ানো দ্বীপবাসীদের দিকে তাকিয়ে বলল, এই লোকটাকে তুলে নিয়ে ল্যাণ্ড রোভারে রাখতে। কিন্তু কেউ নড়ল না। অগত্যা স্যাম নিজেই আহত লোকটিকে পাঁজকালো করে তুলে নিল।
‘সর সামনে থেকে!’ রেমি ওকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো। দুজনে মিলে ধরাধরি করে ল্যাণ্ড রোভারে তুলল ওরা, গাড়িটা মেইন রোডের কাছে পার্ক করা ছিল এতক্ষণ।
লোকটাকে পেছনের সিটে বসাল ওরা স্যাম লিও’র দিকে ফিরল। লিও তখন এক স্থানীয় লোকের সাথে তর্কে ব্যস্ত। গাড়ি ভাল চালাতে জানে কে? উপস্থিত সবাই মাথা নাড়ল। কেউ জানে না।
স্বামী-স্ত্রী তাকাল একে অপরের দিকে। যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। এক হাত বাড়িয়ে দিল স্যাম। খুব ভাল কথা! চাবি লাগবে আমার। বুঝলাম না এই লোকগুলোর সমস্যাটা কী! তোমাদের এক বন্ধু মারা যাচ্ছে আর তোমরা একটু সাহায্য পর্যন্ত করছ না? এখানে হাসপাতাল কোথায়? আমাদেরকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যাবে কে?
নিজের পকেটে হাত ঢোকাল লিও, কিছু একটা খুঁজছে। নিজেদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু করে দিয়েছে দ্বীপবাসীরা। এমন সময় সদ্য কৈশোর শেষ করা এক ছোকরা সামনে এলো। আমি যামু। উনি আমার চাচা বেনজি। ছেলেটার ইংরেজী উচ্চারণের সাথে আঞ্চলিকতার টান আছে।
নাম কী তোমার?’ যাত্রীর সিটে বসতে বসতে রেমি জিজ্ঞেস করল।
রিকি।
স্যাম ড্রাইভার সিটে বসে পড়েছে। দরজার পাশে এসে লিও ওর হাতে চাবি ধরিয়ে দিল। আমি হলুদ ট্রাকটা নিয়ে তোমাদের পিছু পিছু আসছি।
‘ঠিক আছে। রিকির দিকে তাকাল স্যাম। চাচার পাশে উঠে বসো। সিট বেল্ট বাঁধতে ভুলো না। আচ্ছা, এখান থেকে হাসপাতালে যেতে কতক্ষণ লাগতে পারে?
৪৫ মিনিট লাগব…’ রিকি নিশ্চিত নয়।
ভ্রু কুঁচকাল স্যাম। শক্ত হয়ে বসো সবাই। দেখি ১৫ মিনিটে যেতে পারি কিনা।
ইঞ্জিন চালু করে গিয়ার দিল স্যাম। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে প্যাসেজের মতো সরু আর এবরোথেবড়ো খানিকটা রাস্তা পেরিয়ে তারপর পাকা রাস্তায় উঠবে ওরা। কিন্তু জরুরী মুহূর্তে এসে মনে হলো এই সরু রাস্তা বুঝি আর শেষ হবে না। পাকা রাস্তায় উঠতেই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল স্যাম। রাস্তার বাঁকে পৌঁছেও গতি কমাল না। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে বাঁক পার হলো ল্যাণ্ড রোভার। বিপদজনক গতিতে মোড় ঘুরতে দিয়ে টায়ারগুলো প্রতিবাদ করলেও স্যাম পাত্তা দিল না।
শক্ত করে সিটের হাতল ধরে আছে রেমি। এত শক্ত করে ধরেছে যে ওর আঙুলগুলো সাদা দেখাচ্ছে এখন। আমরা যদি দূর্ঘটনায় পড়ি তারপর আমাদেরকেই যদি হাসাপাতালে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হয় তাহলে কিন্তু এই আহত ব্যক্তি খুব একটা উপকার হবে না।
‘চিন্তা কোরো না। ফেরারি (বিশ্ববিখ্যাত গাড়ির নাম) চালিয়ে অভ্যস্ত আমি।’
আরেকটা মোড়ে এসে আবার আর্তনাদ করে উঠল চারটে টায়ার। স্যাম ইঞ্জিনে লাগাম দিয়ে গতি কমিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় রাখল। স্ত্রীর দিকে এক পলক তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকাল ও। এবার গতি একটু কমিয়ে চালাচ্ছে। তারপরও এরকম ভারি গাড়ির জন্য এই গতিও কম নয়।
রেমি ঘাড় ফিরিয়ে আহত ব্যক্তির দিকে তাকাল। প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে সে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। উরুর উপরে বাঁধা স্যামের বেল্টটাকে শক্ত করে ধরে আছে রিকি। ওর চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। রিকি চোখ মেলে রেমি দিকে তাকাল। ঢোঁক গিলল রিকি। ভয়ে, আতঙ্কে বেচারা গলা শুকিয়ে গেছে।
‘আপনের কি মনে অয়, চাচা বাঁচব? রিকি প্রশ্ন করল।
‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এখানকার হাসপাতালটা কেমন? কতখানি আধুনিক? জানতে চাইল রেমি।
রিকি মাথা নাড়ল। মনে অয় ভালই। আমি ওই হাসপাতাল ছাড়া অন্য কুনো হাসপাতাল দেহি নাই। তাই তুলনা করবার পারতাছি না।’
‘অনেক আহত ব্যক্তি যায় ওখানে?
‘মনে অয়। দ্বিধা নিয়ে বলল রিকি।
সোজা রাস্তা পাওয়ায় গতি বাড়িয়ে দিল স্যাম, কাঁধের উপর দিয়ে বলল, ‘এখানে কি অনেক কুমীর আক্রমণ করে?
রিকি শ্রাগ করল। করে মাঝে মইধ্যে। তয় অধিকাংশ সময় লোকজন গায়েব হয়া যায়। কুমীর অগো লয়্যা গেছে কিনা কওয়া কঠিন।
ছেলেটির দিকে তাকাল রেমি। ওখানকার কেউ ওনাকে সাহায্য করল না কেন?
রিকি ভ্রু কুঁচকে তাকাল। কুসংস্কার। সবাই কয় ওই জায়গা নাকি অভিশপ্ত। কহন কী করতে হইব কেউ ঠিকমতো বুইঝা উঠবার পারে না।’
‘অভিশপ্ত?’ রেমি প্রশ্ন করল।
‘এক বুইড়া ডাইভার কইছিল, গুজব আছে জায়গাডা ভালা না। অশুভ কিছু আছে। একটু আগে কইলাম না, সবাই অভিশাপরে ডরায়। চাচার দিকে তাকাল রিকি। অন্তত আমার তাই মনে অয়।’
কুমীরটা কিন্তু বিশাল। কমপক্ষে ২ হাজার পাউণ্ড তো হবেই।’ বলল স্যাম। কুসংস্কার-টুসংস্কার কিছু না। ক্ষুধার্ত কুমীর আর অসতর্ক মানুষ। এই হলো কাহিনি।
লিও’র কি এখন লোকবল পেতে সমস্যা হবে?’ রিমি জানতে চাইল।