স্পেশাল কমান্ডো দলের দায়িত্বে থাকা এক কর্ণেল ওকে সাহায্য করতে রাজি হলেন। কয়েকজন রাজনীতিবিদ প্রতিশ্রুতি দিলেন তারা কাজটাকে সমর্থন দেবেন। আভ্যন্তরীণ সিকিউরিটিতে কর্মরত এক বন্ধু কমান্ডো দলটার সাথে আরো কয়েকজন এজেন্টকে পাঠাবে বলে কথা দিল।
সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পেয়ে ইদের মন ফুর্তিতে ভরে গেল। যদি ব্যাপারটায় কাজ হয়। যদি ওনি এই অভিযানের নেতৃত্ব দিতে পারেন তাহলে নতুন মিসরের তিনিই হবেন হিরো। আর যদি লিবিয়ার সংঘাতটাও এতে থামে তাহলে পুরো উত্তর-আফ্রিকাতেই তার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। কিংবদন্তী হয়ে যাবেন তিনি। কে জানে হয়তো দেশের পরবর্তী নেতাও হয়ে যেতে পারেন।
“জায়গামতো এসে আমাকে জানাবেন। আমি নিজে অভিযানে নেতৃত্ব দেবো।” ইদো বললেন ফোনে।
এদিকে পাঁচ মাইল দূরেই মাটির নিচে তারিক সাকির তার রাগ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মাত্রই ঘটে যাওয়া ঘটনাটায় তিনি ভয়ানক ক্রোধান্বিত হয়ে আছেন। নিজের লোকের সামনে অপমানিত হয়েছেন। তিনি রাগটা ঝাড়ার জন্য হাসানকেই বেছে নিলেন।
একবার ভাবলেন গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেবেন। ওর কিন্তু কার্টদেরকে খোঁজার জন্যে হাসানকে দরকার।
হাসান স্প্রিং লাগানো গাড়ির মতো ছুটে গেল। কয়েকজনকে খুঁজতে পাঠিয়ে আরো লোক জোগাড়ের ব্যবস্থা করতে লাগল। কয়েকটা ATv সাথে সাথে ছুট দিল সুড়ঙ্গের ভেত। আরো লোকজন আসামাত্র হাসান তাদেরকেও বিভিন্ন দিকে পাঠিয়ে দিল।
কয়েক মিনিট পর এক ATuর ড্রাইভার ফিরে এসে হাসানকে কিছু একটা বলে আবার বিদ্যুৎবেগে সুড়ঙ্গ দিয়ে ফিরে গেল।
“কি হয়েছে? কী বলল?” সাকির জিজ্ঞেস করলেন।
“ওদের দেখা পাওয়া যায়নি তবে আমাদের দুটো ATv বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। কীভাবে ও দুটো অ্যাকসিডেন্ট করল তা বোঝা যাচ্ছে না। অন্য দুটো দল ওদেরকে উদ্ধার করতে গেলে সে দুটোও বিধ্বস্ত হয়েছে।”
“রাক মিস্ট, শয়তানগুলো ব্লাকমিষ্ট নিয়ে পালিয়েছে। ঘটনাটা ঘটেছে কোথায়?” সাকির জিজ্ঞেস করলেন।
“এখান থেকে মাইল তিনেক দূরে। উনিশ নম্বর সুড়ঙ্গে।”
সাকির ম্যাপে তাকালেন। “উনিশ নম্বরে তো বের হওয়ার রাস্তা নেই।”
হাসান মাথা ঝাঁকালো, ড্রাইভার ওকে আগেই বলেছে সে কথা।” বিধ্ব ATv-গুলোর মুখ এদিকেই ঘোরানো। ওটার একটু পরেই সুড়ঙ্গটা দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে। যেহেতু ওরা এদিক দিয়ে আসেনি, তার মানে ঐ সুড়ঙ্গটা ধরেই উঠে গিয়েছে। সুড়ঙ্গটা মেইন হলে গিয়ে মিশেছে।”
“মেইন হল? ওটাতো একটা ওক গাছের কাণ্ডের মতো। ওটা থেকে কমপক্ষে পঞ্চাশটা সুড়ঙ্গ বেরিয়েছে। প্রতিটা শাখা থেকে আবার কয়েক ডজন উপ-শাখাও আছে।” সাকির বললেন।
হাসান মাথা ঝাঁকালো আবার, “ওরা এখন কোথায় আছে বলা সম্ভব না।”
সাকির আর সামলাতে পারলেন না। উঠে দাঁড়িয়ে হাসানের কলার টেনে উ করে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরলেন, “তিনবার! তিন তিনবার তুমি ওদেরকে মেরে ফেলার সুযোগ পেয়েছিলে। তিন বারই তুমি ব্যর্থ হয়েছ।”
‘সাকির। আমার কথাটা শোনেন।” হাসান মিনতি করল।
“এখুনি ওদের খুঁজে বের করো। প্রতিটা লোককে ওদের পিছনে পাঠাও।”
“ওদেরকে খুঁজে বের করা সম্ভব না।” হাসান বলার চেষ্টা করল।
“আমি কিছু শুনতে চাই না।”
“খামাখা লোকজন মারা পড়বে। আপনি খুব ভালো মতোই জানেন যে সুড়ঙ্গগুলো কতটা লম্বা। আপনিই একটু আগে পিওলাকে বললেন যে শতশত সুড়ঙ্গ আর গুহা এখনও আবিষ্কারই করা সম্ভব হয়নি।” হাসান বলল।
“আমাদের প্রায় দুশো লোক আছে।” সাকির বললেন।
“কিন্তু প্রতিটা দলই একা একা খুঁজবে। এখানে রেডিও কাজ করে না। ওরা নিজেরা বা আমাদের কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারবে না। ফলে কাজ কতটুকু হলো বা ওদের পাওয়া গেল কি-না কিছুই জানা সম্ভব হবে না।
“তুমি কি বলতে চাইছ যে আমরা ওদেরকে কিছু না করেই ছেড়ে দেবো?” সাকির কাটা স্বরে জিজ্ঞেস করলেন।
“হ্যাঁ।” হাসান বলল।
ভেতরে ফুঁসতে থাকা প্রচণ্ড রাগ সত্ত্বেও সাকির বুঝলেন হাসান আসলে অন্য কিছু একটা বোঝাতে চাচ্ছে। “তোমার মতলবটা কী বলো?”
“এখান থেকে বের হবার মাত্র পাঁচটা রাস্তা আছে। এর মধ্যে দুটো আমাদের পাম্পিং স্টেশনের নিচে কানো আর সে দুটোতে যথেষ্ট পাহারা আছে। বাকি তিনটার পাহারা বসালেই হয়ে যাবে। এই গোলোক ধাঁধার মতো ওদেরকে ধাওয়া করার চেয়ে সব অস্ত্রধারী লোককে বের হওয়ার রাস্তাগুলোর মুখে বসিয়ে দিলে ওরা নিজে থেকে এসে আমাদের জালে ধরা পড়বে। চাইলে একটা মিসাইল ওয়ালা হেলিকপ্টারও পাহারায় বসাতে পারেন।”
পরিকল্পনাটা সাকিরের কাছে যৌক্তিক মনে হওয়ায় তিনি হাসানকে ছেড়ে দিলেন। আর যদি দেখা যায় আরো কোনো রাস্তা আছে। যেসব সুড়ঙ্গ আমরা এখনও পরীক্ষা করিনি সেগুলো দিয়ে যদি থাকে কোনোটা?”
হাসান মাথা নাড়লো, “গত এক বছর ধরে আমরা এসব সুড়ঙ্গ চষে বেড়াচ্ছি। আমরা যা খুঁজে পাইনি তা ওদের পক্ষে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং পথ হারিয়ে এদিকে সেদিকে ঘুরে সুড়ঙ্গের ভেতরেই পড়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি। আর যদি তারপরও ওরা এমন কোনো রাস্তা পায় যেটা আমরা খুঁজে পাইনি তাহলে নিশ্চয়ই ওরা হোয়াইট ডেজার্টে গিয়ে পড়বে। আর তাহলে ওদেরকে খুঁজে পাওয়া তো হবে আরো সহজ। আর আমাদের বের করা কোনো রাস্তা দিয়ে বের হলে তো কথাই নেই। সাথে সাথে ধরা পড়বে।”