এদিকে আততায়ীর দলও এগিয়ে আসছে বোঝা যাচ্ছে, সামনে যা কিছু পড়ছে, তাতেই গুলি করছে। ব্রাকো এগিয়ে ওর কুটাকে সাহায্য করার চেষ্টা করল।
ওকে ছাড়ুন। আমাদেরকে এখান থেকে সরতে হবে। মিসরীয় বলল, ব্রাকোর মোটেও সে-ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু লোকটার সময় শেষ, ও থেকেও কিছু করতে পারবে না। ভয়ানক রেগে গেছে সে, এখন কারো খুন ঝরাতে না পারলে মাথা ঠাণ্ডা হবে না। পিস্তল বাগিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সে। সামনে যাকেই পাবে তাকেই পরপারে পাঠাবে বলে সংকল্প করেছে মনে মনে। কিন্তু মিসরীয় লোকটা ওকে টেনে ধরলো।
“আমাকে ছেড়ে দিন।” ব্রাকো আদেশ দিল।
‘খামাখা মরার ইচ্ছে হচ্ছে কেন?”
“শুয়োরের বাচ্চারা আমার লোকজনকে মারছে আর আমি আঙুল চুষবো। উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো ওদের।”
“আপনার লোকজনের কোনো দাম নেই। ওরা যায় যাক। আমাদেরকে আমার মাল পৌঁছাতে হবে জায়গা মতো।” ঠান্ডা স্বরে বলল আম্মন তা।
ব্রাকো হতভম্ব হয়ে গেল। “আপনার মাথা কি খারাপ? আপনার কি মনে হয় আপনি জীবন নিয়ে এই জাহান্নাম থেকে পালাতে পারবেন?”
“ঐ ব্যারেলগুলোতে যা আছে তা বহুগুণে শক্তিশালী। সময় মতো পৌঁছাতে পারলে ঐ বেকুবগুলোর হাত থেকে আপনার জাহাজ বাঁচানো কোনো ব্যাপারই হবে না। এখন দেরি না করে আমাকে ওগুলোর কাছে নিয়ে চলুন।”
ব্রাকো খেয়াল করল কথাগুলো বলতে বলতে মিসরীয় লোকটার চোখ কেমন অদ্ভুত এক উজ্জ্বলতায় ভরে উঠল। সম্ভবত লোকটা মিথ্যা বলছে না। “ঠিক আছে, আসুন।”
ব্রাকো সামনে এগিয়ে ভাঙ্গা জানালাটা দিয়ে লাফিয়ে কাছের কন্টেইনারটার ওপর গিয়ে পড়ল। মিসরীয়ও এলো তার পিছু পিছু।
জানালা থেকে ডেকের উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট কিন্তু অন্ধকার থাকায় ব্রাকো তাল সামলাতে পারলো না। অদ্ভুত শব্দ করে আছড়ে পড়লো। হাঁটু ছিলে গেছে।
মিসরীয়ও ওর পাশেই লাফিয়ে নামল। তারপর হামাগুঁড়ি দিয়ে এক পাশে সরে গেল।
“আপনার মাল কন্টেইনারের প্রথম সারিগুলোর মধ্যেই আছে। এদিক দিয়ে আসুন।” ব্রাকো বলল।
দুজন প্রায় দৌড়ে কন্টেইনারগুলো পার হলো। একদম সামনের সারিতে পৌঁছে ব্রাকো কন্টেইনার বেয়ে নিচে নেমে এলো তারপর মেঝেতে শুয়ে পড়ল।
মিসরীয়ও একই কাজ করল। দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ লুকিয়ে থাকল সেখানে। থেকে থেকে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে দূরে। যুদ্ধ প্রায় শেষ।
“এটাতেই আছে আপনার জিনিস।” ব্রাকো বলল।
“খোলেন তাড়াতাড়ি।” মিসরীয় তাড়া দিল।
ব্রাকো ওর মাস্টার কী বের করে তালা খুলে ফেলল। তারপর দরজা ধরে টান দিতেই প্রাচীন কাগুলো তীক্ষ্ণ ক্যাচ ক্যাচ শব্দে করে উঠল। ব্রাকো শিউরে উঠল তাতে।
“ভেতরে যান।” মিসরীয় আদেশ করল।
ব্রাকো ভেতরে ঢুকে একটা টর্চ জ্বাললো। প্রায় পুরো কন্টেইনার জুড়েই আছে একটা প্রোপেন ভরা সিলিন্ডার। তার পিছনেই দেখা গেল সাদা রঙের কয়েকটা ব্যারেল।
ব্রাকো আম্মন তাকে সেদিকে নিয়ে গেল।
“এখন?” ব্রাকো জিজ্ঞেস করল।
কিন্তু মিসরীয় কোনো জবাব দিল না। চুপচাপ একটা ব্যারেলের ওপরে চাপ দিয়ে খুলে ফেলল। ব্রাকো অবাক হয়ে দেখলো সাদাটে ধোয়া মতো কিছু জিনিস ব্যারেলের কিনার বেয়ে উপচে পড়ল। আশপাশটাও কেমন শীতল হয়ে গেল। “কি এর ভেতর? তরল নাইট্রোজেন?” আম্মন তা এ কথারও কোনো জবাব দিল না। হিমাঙ্কের নিচে সংরক্ষিত একটা বোতল তুলে আনলো ব্যারেলের ভেতর থেকে। একপাশে আজব একটা চিহ্ন।
চিহ্নটা কি সেটা ব্রাকো না বুঝলেও ধরন দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো ধরনের নার্ভ গ্যাস বা সেরকম কিছু।
“ওরা এই জিনিসটাই খুঁজছে।” হঠাৎ বুঝতে পেরে বলে উঠল ব্রাকো। “এসব প্রোপেন বা টাকার ধান্দায় ওরা আসেনি। ওদের দরকার আপনাকে আর এই জিনিসটাকে। আপনার জন্যেই শয়তানগুলো আমার লোকদের মেরে শেষ করেছে।” বলতে বলতে আম্মন তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল ব্রাকো।
ঘটনার আকস্মিকতায় মিসরীয় এক মুহূর্তের জন্যে থমকে গিয়েছিল কিন্তু সামলে নিলো দ্রুত। ব্রাকোর উদ্যত হাত একপাশে ঠেলে দিল, তারপর বাহু ধরে একটা মোচড় দিয়ে আছড়ে ফেলল মাটিতে।
মাটিতে পড়ামাত্র ব্রাকোর বুকের ওপর চড়ে বসলো মিসরীয়। ব্রাকো ওর চোখের দিকে তাকাল। দয়া-মায়ার লেশমাত্র নেই সেখানে।
“আপনাকে আর কোনো দরকার নেই।” মিসরীয় বলল।
তিনকোণা ছুরিটা পেটে ঢুকতেই ব্রাকোর সারা শরীরে প্রচণ্ড একটা যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ল। মিসরীয় ছুরিটা একটা মোচড় দিয়ে বের করে নিলো।
ব্যথার চোটে ব্রাকোর শরীর কুঁকড়ে এলো। পেট চেপে ধরে আছে। কিন্তু স্রোতের মতো গল গল করে রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না মোটেও।
ধীরে ধীরে যন্ত্রণাদায়ক এক মৃত্যু হচ্ছে ব্রাকোর। মিসরীয় পাশে দাঁড়িয়ে ধীরে সুস্থে ছুরির রক্ত মুছে আবার ঢুকিয়ে রাখলো খাপে। যেন কোনো তাড়া নেই, ব্যাপারটা উপভোগ করছে। তারপর একটা স্যাটেলাইট ফোন বের করে একটা বোতামে টিপ দিল।
“আমাদের জাহাজে কারা যেন আক্রমণ করেছে। সম্ভবত স্থানীয় সন্ত্রাসী।” লাইনের অপর প্রান্তে থাকা কাউকে বলল সে।
দীর্ঘকাল আর কোনো কথা হলো না। তারপর মিসরী নিজের মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, “ওরা সংখ্যায় অনেক জন… হ্যাঁ, আমি জানি কি করতে হবে….’ডার্ক মিস্ট’ অন্য কারো হাতে পড়া চলবে না। ওসাইরিসকে আমার কথা বোলো। পরকালে তোমার সাথে দেখা হবে।”